ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃষ্টি ও বাংলাদেশ-ভারত

ফতুল্লায় ত্রিমুখী লড়াই

প্রকাশিত: ০৭:০২, ১৪ জুন ২০১৫

ফতুল্লায় ত্রিমুখী লড়াই

মিথুন আশরাফ ॥ কী যে শুরু হয়েছে, প্রতিটি দিনই বৃষ্টি পড়ছে। আর তাতে ভেসে যাচ্ছে ফতুল্লা টেস্ট। আগ বাড়িয়ে বলতে গেলে বৃষ্টিতেই ভেসে গেল বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট। চতুর্থদিনেও দুই সেশন খেলা হলো না। এ দিনটিতে সবচেয়ে বেশি ৫৯.৫ ওভার খেলা হয়নি। ফতুল্লা টেস্টে সবার মুখে শুধু বৃষ্টি শব্দটিই শোনা যাচ্ছে। প্রথমদিন, দ্বিতীয় দিন, তৃতীয় দিন; প্রতিটি দিনই বৃষ্টির বাঁধায় ঠিকমতো খেলা হতে পারেনি। দ্বিতীয় দিন তো পুরোটাই বৃষ্টিতে ভেসে গেছে। ভারত আগের দিন যে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৬২ রান করেছিল, সেখানে থেকেই ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর চতুর্থদিনের শুরু হয় তামিম-ইমরুলের ব্যাট হাতে নামা দিয়ে। যখন ৩০.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১১১ রান করে বাংলাদেশ, ভারত থেকে ৩৫১ রানে পিছিয়ে থাকে; এমন সময়ে বৃষ্টি আসে। বেলা ১১.৫০ মিনিটে যে বৃষ্টি পড়া শুরু করে, আর তা থামেনি। যখন সাড়ে তিনটা বাজে, তখন বৃষ্টি থামে। কিন্তু আকাশ এতটাই মেঘাচ্ছন্ন থাকে যে খেলা হওয়া সম্ভব নয়। শেষে ৪টার দিকে চতুর্থদিনের খেলা পরিত্যক্ত হওয়ার ঘোষণা আসে। এক সেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে যে বৃষ্টি শুরু হয়, তাতে দিনের শেষ দুই সেশন আর খেলাই হয়নি। বৃষ্টি সাড়ে দশটার দিকেও একবার এসেছিল। তবে ১২ মিনিট এ জন্য খেলা বন্ধ ছিল। কিন্তু ১১.৫০ মিনিটের দিকে যে বৃষ্টি শুরু হয়, তাতে আর খেলাই হলো না। যদি বৃষ্টি না পড়ত, তাহলে অবশ্য বিপদ বাংলাদেশের ঘাড়েই নিশ্বাস ফেলছিল। ম্যাচটি এখন যে নিশ্চিত ড্রই হবে, তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি আর না এসে, দুইদিন টানা খেলা হলে বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনাও উঁিক দিচ্ছিল। যেভাবে বাংলাদেশের উইকেট পড়তে থাকে, তাতে দুই দিন আগেই যে ২০ উইকেটের পতন ঘটত না, তা বলা মুশকিলই ছিল। সকাল সাড়ে নয়টায় খেলা শুরু হয়। এর আগেই ভারত যে ইনিংস ঘোষণা করে দেয়, সেই খবর মিলে যায়। বাংলাদেশের এবার ব্যাটিংয়ের পালা। তামিম-ইমরুল ব্যাট হাতে নামেনও। কিন্তু ২৭ রানের মধ্যেই তামিম (১৯) আউট হয়ে যান! আউট হওয়ার আগে যদিও টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে (৩০২৬ রান) পেছনে ফেলে সবচেয়ে বেশি রান (৩০৩৯ রান) করার রেকর্ডের মালিক হয়ে যান তামিম, দলকে ঠিকই শুরুতে বিপাকে ফেলে দেন। তৃতীয় দিনে ভারত ইনিংসে যেমন বাংলাদেশ দুই স্পিনার ৪ উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসান ও ২ উইকেট নেয়া জুবায়ের হোসেন ধস নামান, ঠিক তেমনি বাংলাদেশ ইনিংসে ভারতের দুই স্পিনার ২ উইকেট নেয়া রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও ১ উইকেট নেয়া হরভজন সিং জাদু দেখান। যে সময়টুকু বাংলাদেশ ব্যাটিং করেছে, ততটুকু সময়েই অশ্বিন, হরভজন মিলে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের ভিত নাড়িয়ে দেন। অশ্বিনের ঘূর্ণিতে তামিমের আউটের পর মুমিনুল হককে (৩০) সাজঘরে ফেরান হরভজন। আর ২০ রান এ ইনিংসে করতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকার এবিডি ভিলিয়ার্সের মতো মুমিনুল টানা ১২ টেস্টে যে কোন এক ইনিংসে ৫০ বা তার বেশি রান করার ইতিহাসে নাম বসাতে পারতেন। এখন দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যদি খেলতে পারে, মুমিনুল যদি ৫০ বা তার বেশি রান করতে পারেন, তাহলে সেই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারবেন। না হলে মুমিনুলের আফসোসই করতে হবে। ইমরুল-মুমিনুল মিলে অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়েন। মুমিনুল আউটের পর ২ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই ১১০ রানে মুশফিকুর রহীমকেও (২) আউট করে দেন অশ্বিন। ইমরুল এক প্রান্তে অটল হয়ে থাকেন। ১০ রানের সময় যে আউট হওয়া থেকে বাচেন। করেন অপরাজিত ৫৯ রান। গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশও বিপাকে পড়ে যায়। এক সেশন তখনও শেষ হয়নি। ৩ উইকেটের পতন ঘটে গেছে! সাকিব ব্যাট হাতে নামেন। কিন্তু আর ১ রান যোগ হতেই বৃষ্টি শুরু হয়। আর সেই বৃষ্টি থামেনি। তাতে চতুর্থদিনের খেলাও পরিত্যক্ত ঘোষণাই করতে হয়। দুপুরে বৃষ্টি আসার পর যখন খেলা হবে কি হবে না, এমন আলোচনা হচ্ছে; তখন ৩টা থেকে প্রতি আধা ঘণ্টায় একবার করে মাঠ পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানানো হয়। ৩ টায় সিদ্ধান্ত আসেনি। সাড়ে তিনটায়ও খেলা শুরু করা যায়নি। শেষে ৪টা বাজে খেলাই পরিত্যক্ত হয়ে যায়। খেলা ঠিকমতো দুইদিন হলে, বৃষ্টির বাধা না হলে, বিপদ বাংলাদেশের সামনে আসতে পারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ মিরপুর টেস্টে যেমন বাংলাদেশ ৫ সেশনও খেলতে পারেনি, ভারত স্পিনাররা যেভাবে বোলিং করছিলেন, তাতে সেই রকম কিছু হওয়ারই শঙ্কা জেগে যায়। ইতিহাস অবশ্য এখনও চোখ রাঙাচ্ছে। ভারত ৪৬২ রান করায় বাংলাদেশের সামনে ফলোঅন এড়াতেই ২৬৩ রান লাগবে। এর মধ্যে ১১১ রান করায় ফলোঅন এড়াতে আরও বাকি আছে ১৫২ রান। এ রানের আগে যদি বাংলাদেশের হাতে থাকা প্রথম ইনিংসের ৭ উইকেটের পতন ঘটে, তাহলে ম্যাচ স্বাচ্ছন্দ্যে ড্র করার বিপরীতে হারের একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা হলেও জেগে উঠতে পারে। এক সেশনে ৫ উইকেট পড়ার অনেক ইতিহাসই বাংলাদেশের আসে। যদি প্রথম সেশনে ৭ উইকেটই হারাতে হয়, তাহলে আবার বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামতে হবে। তখন দুই সেশনে বাংলাদেশকে ১০ উইকেট কোনভাবে রক্ষা করার লড়াইয়ে নামতে হবে। ইতিহাস বলছে একদিনে ২৭ উইকেট পড়ার রেকর্ডও আছে। এমন রেকর্ড যদি আবার ধরা দেয়? এমনটি হবে যদি অলৌকিক কিছু ঘটে। তা না হলে টেস্ট যে ড্রই হচ্ছে, তা সবারই বোধগম্য হয়ে গেছে। এত বৃষ্টি এলে কী আর খেলায় কিছু থাকে? ভাবনা হচ্ছে ম্যাচ ড্র হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল কিন্তু তবুও ড্র হয়ে যাবে বলতে রাজি নন। তামিমের কথা, ‘যদি পঞ্চমদিনে প্রথম সেশনেই দ্রুত উইকেট হারাই, তাহলে কঠিন পরীক্ষার মধ্যেই পড়তে হতে পারে। একটি বড় জুটি হলেই কেবল তখন নিশ্চিত ড্রয়ের ভাবনা করা যাবে।’ আসলে হার, ড্র; এসব চিন্তা শেষ পর্যন্ত অনর্থকই হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। তাতে কখনও এক সেশন, কখনও দুই সেশন, কখনও পুরো একটি দিনই ভেসে যাচ্ছে। আজও বৃষ্টির সম্ভাবনার বার্তাই শোনা যাচ্ছে। তাতে বৃষ্টিতেই ভেসে যাচ্ছে ফতুল্লা টেস্ট।
×