ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেনা র‌্যাব ও পুলিশের পোশাক মিলছে যত্রতত্র

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৪ জুন ২০১৫

সেনা র‌্যাব ও পুলিশের পোশাক মিলছে যত্রতত্র

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের পোশাক ও ব্যবহার্য সামগ্রী মিলছে যত্রতত্র। ফলে প্রতারণা চলছে ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের সঙ্গে। বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব সেভেনের কক্সবাজার ক্যাম্প পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকা থেকে এক ভুয়া মেজরকে গ্রেফতার করা হয় গত ১০ জুন। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল জেনেছে র‌্যাব সদস্যরা। তবে সে র‌্যাব সেভেনের ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে কক্সবাজার ক্যাম্পের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে আসছিল। সেনাবাহিনীর পরিচয়ই নয় তার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ব্যবহার্য প্রায় ৩০ প্রকারের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ উঠেছে র‌্যাব কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রতারণা ও সেনাবাহিনীর উপকরণ উদ্ধারের ঘটনায় র‌্যাব তাকে কক্সবাজার থানায় সোপর্দ করেছে, কিন্তু উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর যোগসূত্র নিয়ে কোন তথ্য আদায় করা হয়নি। তবে র‌্যাব সেভেনের এক কর্মকর্তা জানালেন যত্রতত্র পুলিশের পোশাকের মতো সেনাবাহিনীর ব্যবহার্য উপকরণ পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে, শুধু সেনাবাহিনীই নয়, র‌্যাব, পুলিশসহ সবারই পোশাক খোলা বাজারে পাওয়া যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময় ভুয়া পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী পরিচয়ে প্রতারকদের গ্রেফতার করলেও কোন এ্যাকশনে যায় না। এমনকি এসব সামগ্রী তৈরি করা বা সংগ্রহ করাও ততটা দুরহ নয় বলে মন্তব্য করছেন অভিযানে থাকা সদস্যরা। প্রশ্ন উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব প্রতারকদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ না করায় প্রশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। এছাড়াও র‌্যাব গ্রেফতার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করায় আসামি অনেক তথ্যই পাল্টে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। পুলিশের এই কর্মকর্তার মতে, যারা অভিযান করে তারাই জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে আরও অনেক বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ ব্যাপারে র‌্যাব সেভেনের সহকারী পুলিশ সুপার আমিরুল্যা জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, পুলিশ ও র‌্যাবের মতো সবকিছুই সংগ্রহ করা যায়। প্রতারক শামসুল আলমকে আটকের পর তার আবাসস্থলেও অভিযান চালানো হয়। তবে তার কাছ থেকে যা কিছু উদ্ধার করা হয়েছে সবগুলোই সহজে সংগ্রহ করা যায়। তাকে কক্সবাজার থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেজর আহমেদ হোসেন মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকার জসিম উদ্দিনের দোকানের সামনে হতে প্রতারক মোঃ শামসুল আলম প্রকাশ শাকিলকে আটক করে। তার দেহ এবং সঙ্গে থাকা আর্মি কালারের কাপড়ের ব্যাগ তল্লাশি করে একটি আর্মি পোশাকে তৈরি অফিসিয়াল হাত ব্যাগ, একটি কম্বেট রংয়ের ব্যাগ, ২টি কম্বেট কাপড়ের মোবাইল কভার, ১টি কম্বেট কাপড়ের মানি ব্যাগ, ৩টি এটিএম কার্ড, এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ২টি ও ১টি ব্র্যাক ব্যাংকের ভিসা কার্ড, সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত পাসপোর্ট সাইজের লেমনেটিং করানো ছবি ৩টি, বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল সিম কার্ড ৬টি। এর মধ্যে রবি ৩টি, বাংলালিংক ২টি ও টেলিটক ১টি সিম ছিল। এছাড়াও সেনাবাহিনীর পোশাকের রঙের পুরাতন ডিজিটাল হাত ঘড়ি ১টি, প্রিন্টের পুরাতন টাই ১টি, কালো রংয়ের ফুল প্যান্ট ১টি ও ফুল হাতার হালকা গোলাপী রংয়ের শার্ট ১টি উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব সেভেনের পক্ষ থেকে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে টেকনাফ থানাধীন মহেশখালী পাড়ায় তার আবাসস্থল। নিজ বসতবাড়িতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরও বিভিন্ন পদবির সরকারী পোশাক পরিচ্ছদসহ বিভিন্ন আকৃতির ছবি ও সরঞ্জামাদি রক্ষিত আছে। সে অনুযায়ী গত ১১ জুন তার ঘরে তল্লাশি চালায় র‌্যাব সেভেনের সদস্যরা। সেখান থেকে আরও বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনীর সামগ্রী পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো- সেনাবাহিনীর কম্বেট ইউনিফর্ম, সেনাবাহিনীর বেল্ট-১টি, সেনাবাহিনীর লং বুট-৩ জোড়া, একটি আর্মড পুলিশের কম্বেট ক্যাপ, ১টি বেরেট ক্যাপ, ১টি কম্বেট ক্যাপ, ২টি কমান্ডো কালো বেল্ট, ২ জোড়া কালো মোজা, ৪টি বিভিন্ন নামের নেমপ্লেট, ২টি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী লেখা নেমপ্লেট, ২টি রিবোন, এক জোড়া জঙ্গল সু, সেনাবাহিনীর ২টি উইন্টার কোট, ৪টি কম্বেট হাফ হাতা গেঞ্জি, ১টি পি টাইপ ক্যাপ, ৬টি কম্বেট কাপড়ের মোবাইল কভার, আরেকটি কম্বেট কাপড়ের মানিব্যাগ, ১টি ফাস্ট এইড কম্বেট ব্যাগ, পিতল ও কাপড়ের কমান্ডো উইং, কমান্ডো টাইগার ১টি, ৩টি কোট পিন, বাঁশি ১টি, সেনাবাহিনীর আইডি কার্ডের লুফ ২টি, ১টি র‌্যাব পিপস, পিতলের কমান্ডো ব্যাজ, ৪টি কমান্ড ইন সিগনিয়া, ৭টি আর্মি কালারের হ্যান্ড ব্যাগ, ৮টি বিভিন্ন রংয়ের টাই, ১টি বাঁধাই করা মেডেল, ৭টি ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবি। এসব ছবি বিভিন্ন পদ মর্যাদার ও বিভিন্ন শপথ গ্রহণের।
×