ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাকার দাবিতে ট্রলারে তুলেই মারপিট

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৪ জুন ২০১৫

টাকার দাবিতে ট্রলারে তুলেই মারপিট

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৩ জুন ॥ মানবপাচারকারীর কবল থেকে মিয়ানমার নৌবাহিনী কর্তৃক উদ্ধারকৃত এক শ’ ৪৪ বাংলাদেশীর মধ্যে পাঁচজন তাদের পাবনার সুজানগর উপজেলার নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছেন। দালালের মাধ্যমে নৌপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মানবপাচারকারীর কবলে তাঁদের অবর্ণনীয় নির্যাতন ও কষ্ট সহ্য করতে হয়। শনিবার সুজানগর উপজেলার খয়রান গ্রামের বাড়িতে মিয়ানমার থেকে ফেরত যুবক মিলন হোসেন তাঁদের ভয়াবহ দুর্দশার কথা জানান। কৃষিশ্রমিক মিলন হোসেন ভাল কাজের আশায় মানিকগঞ্জে যান। সেখানে এক ইটভাঁটিতে কাজ পান। ইটভাঁটিতে কর্মরত অবস্থায় পাবনার বাশার মল্লিক নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। বাশার মল্লিক তাঁকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। আর মালয়েশিয়া যেতে কোন টাকাও লাগবে না বলে তাঁকে আশ্বাস দেয়। তার কথায় রাজি হয়ে পরিবার-পরিজনকে কিছু না জানিয়ে মিলন হোসেন মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা পরদিন চট্টগ্রাম পৌঁছান। মানবপাচারকারী বাশার মল্লিক তাঁকে নিয়ে টেকনাফ নিয়ে অন্য পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়। টেকনাফ থেকে অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও নৌকায় তোলা হয়। নৌকায় কিছুদুর যাওয়ার পর সমুদ্রে অপেক্ষমাণ একটি বড় ট্রলারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আড়াই শ’ জনের সঙ্গে তাঁকে বড় ট্রলারে তুলে মালয়েশিয়ায় রওনা দেয়ার কথা জানানো হয়। পাহাড়সম এ ট্রলারটি এক সময় তাঁদের নিয়ে রওনা হয়। কিছুদূর যাওয়ার পরই পাচারকারীরা অন্যদের সঙ্গে তাকেও প্রচ- মারপিট করে পরিবারের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। তাদের কথামতো তাঁর পিতা ৪০ হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠালে মারপিট বন্ধ হয়। সমুদ্রে ট্রলারে তাঁদের অমানবিক জীবন কাটাতে হয়েছে বলে মিলন হোসেন জানান। সারাদিনে আধাপেট করে ভাত, রাতেও আধাসিদ্ধ আধাপেট ভাত দেয়া হতো। সারাদিনে সামান্য একটু পানি বরাদ্দ ছিল। ক্ষুদা তৃষ্ণায় কেউ কাঁদলে তাদের নৃশংসভাবে মারপিট করা হতো। নৌকার মধ্যে অনেকেই ক্ষুদা তৃষ্ণায় অসুস্থ হয়ে কাতরাতেন। ট্রলারের প্রধান হামিদ দালাল তাঁদের জানায়, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দামে তাদের বিক্রি করা হচ্ছে। এক জায়গায় পাঁচ হাজার টাকা অন্য জায়গায় ১০ হাজার টাকা। মিলন আরও জানান, মানবপাচারকারীরা তাদের মালয়েশিয়া নেয়ার নামে সমুদ্রের বিভিন্ন জায়গায় অপেক্ষা করতে থাকে। এরই মধ্যে মিয়ানমার নৌবাহিনী ট্রলারটি দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে দেশে পাঠায়। মিলন হোসেনের সঙ্গে একই গ্রামের বাবু আলী, আলহাজ্জ হোসেন, নাজমুল হোসেন, হক মল্লিক বাড়ি ফিরে আসেন। মিলন হোসেন সুজানগর থানায় মানবপাচারকারী বাশার মল্লিকের নামে বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, বাশার মল্লিক মানবপাচারকারী গ্যাংয়ের স্থানীয় এজেন্ট। তিনি আরও জানিয়েছেন, অপর চার যুবক পাচারকারীদের কবলে পড়ে মালয়েশিয়া রওনা হলেও তাঁদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মানবপাচারকারীরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও তিনি জানান। এ চার যুবক হলেন- সাদ্দাম, বাচ্চু, বাকি ও হানিফ। সাদ্দামের ভাই রনি জানিয়েছেন, তাঁর ভাই ও অপর তিনজন পরস্পর আত্মীয়। কাজের সন্ধানে তাঁরা ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মানবপাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে মালয়েশিয়া রওনা হন। দু’মাস ধরে তাঁদের কোন খোঁজ নেই। ট্রলার থেকে মোবাইল করে মুক্তিপণ হিসেবে বিপুল অঙ্কের টাকা আদায় করার পরেও তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারেও সুজানগর থানায় অপর একটি মামলা হয়েছে।
×