ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘স্বামী সন্তান লইয়া আইলাম আর শূন্য বুকে যাই’

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ জুন ২০১৫

‘স্বামী সন্তান লইয়া আইলাম আর শূন্য বুকে যাই’

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ১২ জুন ॥ দুই ছেলে আর স্বামীকে নিয়ে সুখেই কাটছিল নুরুন নাহারের সংসার। ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে ঝালমুড়ি বিক্রি করে স্বামী বেল্লাল যা পেত তা দিয়ে ৪ জনের সংসার সীমিত আয়ের মধ্যেই তাদের চোখে ছিল নানা স্বপ্ন। ভাইয়ের ছেলে জুয়েলের বিয়ের দাওয়াত খেতে সপরিবারে বেড়াতে যায় মনপুরা। স্বপ্ন ছিল বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছেই বড় ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ভোলার দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরা থেকে ফেরার পথে ট্রলারডুবিতে তার স্বপ্ন সংসার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। স্থানীয় ও জেলেদের সহায়তায় নুরুন নাহার উদ্ধার হলেও তার স্বামী বেল্লাল (৪০) ও তার বড় ছেলে জনির (৫) কোন সন্ধান গত ২ দিনেও পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা ট্রলার থেকে দেড় বছরের ছেলে রনিকে উদ্ধার করলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মনপুরা হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ট্রলারডুবিতে উদ্ধার পাওয়া যাত্রী নুরুন নাহার জানান, তার বাপেরবাড়ি তজুমদ্দিন উপজেলার আড়ালিয়া গ্রামে। স্বামীর বাড়ি ভোলা সদরের ইলিশা গ্রামে। স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকতেন নারায়ণগঞ্জের ঢাকেশ্বরী জব্বারের গ্যারেজ এলাকায়। গত শব-ই-বরাতের ৪ দিন আগে বোনের ছেলের বিয়ের দাওয়াত খেতে তিনি ২ ছেলে নিয়ে মনপুরার কলাতলি আসেন। ৩ দিন পর তার স্বামীও আসেন মনপুরায়। বিয়ের আনন্দে ভালই কাটছিল তাদের দিনগুলো। ট্রলারটি রামনেওয়াজের কাছাকাছি মেঘনায় হঠাৎ ঝড়োবাতাস আর ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায়। তারপর নুরুন নাহার আর কিছুই বলতে পারে না। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর তিনি জ্ঞান ফিরে দেখেন মনপুরা হাসপাতালের বেডে। কিছু সময় পর দেখতে পান তার ছোট ছেলের নিথর দেহ হাসপাতালে পড়ে রয়েছে। কিন্তু তার স্বামী বেল্লাল ও তার বড় ছেলে জনির কোন নেই। জ্ঞান ফিরলে বিলাপ দিচ্ছে আর বলছে, ‘বোনপুতের কেন বিয়া খাইতে গেলাম। স্বামী-সন্তান লইয়া আইলাম আর শূন্য বুকে যাই।’
×