ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের পাচার হওয়া এসব মানুষকে খাঁচাবন্দী করে রাখা হতো

মালয়েশিয়ায় আরও শতাধিক গণকবরের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৩ জুন ২০১৫

মালয়েশিয়ায় আরও শতাধিক গণকবরের সন্ধান

বাংলানিউজ ॥ মালয়েশিয়ায় আরও শতাধিক গণকবরের সন্ধান পেয়েছে স্থানীয় পুলিশ। কবরগুলো পাচার হওয়া মানুষের। মৃত্যুর আগে তাদের রাখা হতো খাঁচাবন্দী করে, যার শেষ পরিণাম মৃত্যু। প্রমাণ মিলেছে সে রকমই। মালয়েশিয়া পুলিশের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড বর্ডার কেদা, পেরাক এবং কেলানতানে এ ধরনের ট্রানজিট ক্যাম্প ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। শুক্রবার দেশটির বহুল প্রচারিত দৈনিক সানের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি পার্লিস বর্ডারে এ ধরনের ক্যাম্প ও কবরের সন্ধান পাওয়ার পর এসব সত্য সামনে আসতে শুরু করে। গত সপ্তাহে এক অভিযানে এ ধরনের আরও গণকবরের সন্ধান মেলে। বুকিত গেন্টিং পেরাহ ও বুকিত ওয়াং বর্মায় ২৮টি ক্যাম্পে এ ধরনের ১৩৯টি কবরের সন্ধান পাওয়ার পর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এ অভিযান পরিচালিত হয়। সূত্র বলছে, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরেই সব মানবপাচারের ক্যাম্প ও কবর সেখানে রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পাচার হওয়া এসব মানুষ মিয়ানমার ও বাংলাদেশের। তারা পাচার হয়েছে এক বছরেরও বেশি সময় আগে। থাইল্যান্ডের মধ্য দিয়ে ঢুকে মালয়েশিয়া সীমানায় এসব ক্যাম্পে রাখা হয় তাদের। আর পাচারকারীরা কিনে নেয় দক্ষিণ থাইল্যান্ড থেকে। এদিকে পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের জন্য এ উদ্ধার কাজ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে বলেও জানানো হচ্ছে। গত মাসে এ ধরনের একটি অভিযানে পুলিশের এক সদস্য বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশে কাজ করে অসুস্থও হয়ে পড়েন। ওয়াং কেলিয়ানে এ ধরনের একটি অভিযানে পানি ছাড়া কোন কোন সময় আর কিছুই পাওয়া যায় না। সূত্র জানায়, এসব জঙ্গলে মশা ও বিষাক্ত জীবাণুর উপদ্র্রব রয়েছে। শত মিটার ওপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়া ঠেকাতে একজনকে আরেকজনের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়। পুলিশ জানায়, বন্দীদের খাঁচায় রাখা হয়েছিল, সেখান থেকেই তাদের পরিবারের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে দরদাম করা হয়। মুক্তিপণ না পেলে মেরে ফেলা হয় নির্যাতন করে। জানা যায়, এদের বেশিরভাগই অনাহার, রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাকিরা মারা যায় গুলি খেয়ে অথবা ছুরির আঘাতে অথবা ভারি কিছুর আঘাতে। এদিকে অপর এক খবরে জানা যায়, সমুদ্রে ভাসমান থাকার পর দ্বীপে আশ্রয় নেয়া অভিবাসন প্রত্যাশী মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ৬৫ নাগরিককে ইন্দোনেশিয়ার আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাবেন ইন্দোনেশিয়া পাঁচ বোট মালিক। তারা দাবি করেছেন, এই ৬৫ নাগরিক অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র তীরে অবতরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এর পর সেটি একটি দ্বীপের কাছে নৌকা ডুবে গেলে স্থানীয়দের চাপে পড়ে একটি দ্বীপে আশ্রয় দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর পরই এই সব মানুষকে ইন্দোনেশিয়ায় ফিরিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই পাঁচ ইন্দোনেশিয়ান বোটমালিক বেশ কয়েক হাজার ডলার পেয়েছেন বলে ইন্দোনেশিয়ার দ্য জাকার্তা পোস্টের কাছে দাবি করেন। তারা জানান, গত মে মাসে যখন এসব ভাসমান মানুষ অস্ট্রেলিয়ার তীরে নামার চেষ্টার করেন তখন অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনী তাদের অবতরণে বাধা দেয়। পরে ৬৫ জনকে বহনকারী নৌকা ডুবে যায়। এ ঘটনার পর এই পাঁচ ইন্দোনেশিয়ান অস্ট্রেলিয়ায় যান এবং তিন দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করে ইন্দোনেশিয়ায় ফিরিয়ে নিতে চান। এর পরই অস্ট্রেলিয়া অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে আর্থিক সহযোগিতা করতে রাজি হয়। তারা জানান, ভাসমান অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকা মে মাসে সমুদ্রে ডুবে গেলে স্থানীয়দের চাপে পড়ে কর্তৃপক্ষ কাছাকাছি নুসা তেঙ্গারার রোট আইল্যান্ডে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়।
×