ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনন্তকে মুখোশ পরা দুই খুনী চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১২ জুন ২০১৫

অনন্তকে মুখোশ পরা দুই খুনী চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ সিলেটে বহুল আলোচিত ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা রহস্যের জট খুলছে। অচিরেই হত্যাকা-ের পুরো রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে নিশ্চিত করেছে মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। উগ্র মৌলবাদীরা হত্যাকা-ে জড়িত। খুনীর সংখ্যা কমপক্ষে চারজন। তাদের সহযোগিতা করতে আরও দুইজন বা আরও বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত ছিল। অনন্তকে দুই খুনী মুখোশ পরে হেঁটে গিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর তারা হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। হত্যাকা-ের সময় খুব কাছে ছিল আরও দুইজন। আর ঘটনাস্থলের খানিকটা অদূরে মোটরসাইকেলে আরও দুইজন ছিল। সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া দুজন ছাড়া কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহিত আলামত ও ছবি এবং গ্রেফতারকৃত এক ফটোসাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গত ১২ মে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় বিজয়কে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। অনন্ত সুবিদবাজারের বনকলাপাড়ার নূরানী এলাকার ১২/১৩ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিনি পূবালী ব্যাংক চাকরি করতেন। চাকরির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগে লেখালেখি করতেন। রাজধানী ঢাকার বাইরে কোন ব্লগার হত্যার ঘটনা এটিই প্রথম। অনন্তকে হত্যার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের শাখা (একিউআইএস)। আনসারুল্লাহ বাংলা-৮ নামের একটি আইডি থেকে টুইট করে হত্যার দায় স্বীকার করা হয়। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লেখক অভিজিত রায় হত্যা ও তার আগে গত ৩০ মার্চ রাজধানীতে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ সিলেটে ব্লগার খুনের ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। অনন্ত হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, অনন্তকে হত্যার পর সিআইডির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সেখানে অবস্থান করছেন। তারা পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিভিন্নভাবে ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে চারজন ফটোসাংবাদিক হাজির হন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ঘটনার সময় প্রচুর স্থানীয় মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারাও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্য ও অনুসন্ধানে ওই চার ফটোসাংবাদিক শনাক্ত হয়। সিআইডি কর্মকর্তারা ওই চার ফটোসাংবাদিকদের জবানবন্দী গ্রহণ করতে আগ্রহ দেখায়। ফটোসাংবাদিকদের প্রায় সবাই জাতীয় ও সিলেটের বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। চার ফটোসাংবাদিকের মধ্যে তিন ফটোসাংবাদিক জানান, তারা ঘটনার শোনার পর পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে ঘটনাস্থলে যান। যথারীতি ঘটনাস্থলের ছবি তুলেন। এ ব্যাপারে তিন ফটোসাংবাদিক সিআইডিকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেন। তবে দৈনিক সংবাদ ও সবুজ সিলেট পত্রিকার ফটোসাংবাদিক ইদ্রিস আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে সিআইডির কাছে দাবি করেন। কিন্তু অন্য তিন ফটোসাংবাদিকের তোলা ছবিতে ঘটনাস্থলের ছবির সঙ্গে ইদ্রিস আলীর ছবিও উঠে আসে। এক পর্যায়ে ইদ্রিস আলীর উপস্থিতির বিষয়টি সিআইডির তরফ থেকে ছবি দেখিয়ে ইদ্রিস আলীকে নিশ্চিত করা হয়। এতে ইদ্রিস আলী রীতিমতো ঘাবড়ে যান। ইদ্রিস আলীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করার কারণ জানতে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডি। শেষ পর্যন্ত ইদ্রিস আলীর যোগাযোগসহ নানা বিষয়াদি পর্যালোচনা করে তাকে গ্রেফতার করে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কর্মকর্তারা। তাকে ১৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সিলেট জেলা আদালতে সোর্পদ করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ইদ্রিস আলীকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠায়। তাকে ঢাকায় সিআইডি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বৃহস্পতিবার ছিল রিমান্ডের তৃতীয় দিন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর পরই সবচেয়ে আগে উপস্থিত হন ইদ্রিস আলী। পেশাগত কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেন। কিন্তু উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদে অস্বীকার করায় সন্দেহ বাড়তে থাকে। ইদ্রিস আলীর বাড়ি সিলেটের ফতেহপুর এলাকায়। তার পিতা বিএনপি নেতা। ইদ্রিস আলীর পিতা একটি ইউনিয়ন পরিষদের চার বারের নির্বাচিত মেম্বার। ইদ্রিস আলীরা দুই ভাই। ইদ্রিস বড়। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাদ্রাসা থেকে। আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তবে আলিম পাস করতে পারেননি। তিনি ইসলামী ছাত্রসেনা নামের একটি সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি পেশা হিসেবে ফটোসাংবাদিকতাকে বেছে নেন। অপর তিন ফটোসাংবাদিকের কাছ থেকে ও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া বিপুল পরিমাণ ছবি পর্যালোচনা করছে সিআইডি। পর্যালোচনায় ছবিতে দেখা গেছে, অনন্তকে দুই যুবক মুখে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। হত্যার পর তারা হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আর ঘটনাস্থলের কাছেই আরও দুই যুবক ছিল। তাদের মুখে কোন মাস্ক ছিল না। দুই হত্যাকারী ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর অদূরে থাকা দুইজনও হেঁটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তাদের হাঁটার ধরন ও গতিবিধি পর্যালোচনা করে তারাও হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
×