ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজার ও টেকনাফে মানবপাচারকারী চার দালাল গ্রেফতার

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডে জেল খাটছে ৩৮৭৪ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১২ জুন ২০১৫

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডে জেল খাটছে ৩৮৭৪ বাংলাদেশী

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে বাংলাদেশী নাগরিকের সংখ্যা ৩,৮৭৪। অবৈধভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এরা ওই দুটি দেশে প্রবেশ করার পর দেশ দুটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটছে দিনের পর দিন। এসব জেলবন্দীর অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বলে ধারণা করা হলেও অবশিষ্ট কিছু বাংলাদেশী, তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার ১৪ কারাগারে এখন বন্দী রয়েছে ১ হাজার ৬০৪ বাংলাদেশী। বিভিন্ন অপরাধে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে দেয়া সাজা খাটছে এরা। পাসপোর্ট, ওয়ার্ক পারমিট না থাকা, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সে দেখে অবস্থান করা, ওয়ার্ক পারমিটের অবৈধ ব্যবহার, অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং পাশাপাশি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে, দেশের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে চোরাপথে নয়, বৈধ পথে বৈধ কর্মী যাবে থাইল্যান্ডে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। থাইল্যান্ডের চাহিদা অনুযায়ী শিল্প, নির্মাণ ও মৎস্য খাতে কর্মী পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে গেল মাসে ব্যাঙ্ককে বাংলাদেশ দূতাবাসে একজন শ্রম কাউন্সিলরও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার ও টেকনাফ পুলিশ পৃথক অভিযানে আরও চার দালালকে গ্রেফতার করেছে। মানবপাচার রোধে উখিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাইকিং শুরু করেছে একটি এনজিও সংস্থা। পাশাপাশি মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় জনগণ। এছাড়া মিয়ানমার থেকে ফেরত আনা ১৫০ জনের মধ্যে এক দালালসহ দুই রোহিঙ্গাকে জেলে পাঠানোর পর প্রথম দফায় ১২২ জনকে আদালতের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার পর যে ২৪ শিশু-কিশোরকে পুলিশের মাধ্যমে রেড ক্রিসেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল তারাও অভিভাবকদের কাছে ফিরে গেছে। সমুদ্রের দুর্গম পথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেয়ার পথে গত ২১ মে মিয়ানমারের জলসীমায় ভাসমান অবস্থায় প্রথম দফায় ২০৮ ও দ্বিতীয় দফায় ৭২৭ জনকে উদ্ধার করে সে দেশের নৌবাহিনী। প্রথম দফায় উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১৫০ জনকে বাংলাদেশী বলে চিহ্নিত করে ফেরত আনা হয়েছে। অবশিষ্টরা বাংলাদেশী নাগরিক নয় বলে মিয়ানমারকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় যে ৭২৭ অভিবাসী প্রত্যাশী উদ্ধার হয়েছে এদের নাগরিকত্বের পরিচয় প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এদের কোন তালিকা এখনও প্রেরণ করেনি। তবে দ্বিতীয় দফায় উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫ শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিক রয়েছে বলে মিয়ানমারের দাবি রয়েছে। নাগরিকত্ব নিশ্চিত না করে বাংলাদেশ তাদের এ দাবি মানতে নারাজ। মিয়ানমারে প্রথম দফায় উদ্ধারকৃতদের মধ্যে দেড় শ’ জনকে ফিরিয়ে আনার পর যে ২৪ শিশু -কিশোরকে রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমে তাদের স্ব স্ব অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে সে ব্যাপারে একটি রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিশাদ উজ্জামান। অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তরের আগে এসব শিশু-কিশোর সাগরপথে যাত্রা ও ভাসমান অবস্থায় অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা, দালালদের অমানুসিক নির্যাতনের তথ্য দিয়েছে। রামুর খনিয়াপালং এলাকার শামসুল আলমের পুত্র মুক্তার আহমদ জানায়, মার্চের শেষদিকে দালালদের নিয়োজিত লোকজন তাকে অপহরণ করে টেকনাফে নিয়ে ইঞ্জিনবোটে তুলে দেয়। নরসিংদীর সোহরাব হোসেন জানায়, মার্চ মাসের শেষদিকে কক্সবাজার সৈকতে ভ্রমণে এসে তাকে অপহরণ করে একটি ট্রলারে তুলে দেয়া হয়। এ দুই কিশোর সাগরে ভাসমান অবস্থায় ছিল দুমাসেরও বেশি। এর পর মিয়ানমারের নৌবাহিনী সাগর থেকে অন্যদের সঙ্গে তাদেরও উদ্ধার করে। এদিকে, কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন জানান, ফেরত আনা ২৪ শিশুকে তাদের অভিভাবক শনাক্ত করার পর হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া যে দুইজন রোহিঙ্গা নাগরিক ফেরত আসাদের মধ্যে শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে দালাল হামিদ হোসেন উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা এবং মোঃ ইদ্রিস রোহিঙ্গা বস্তির বাসিন্দা। এদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আটক আরও দুজনের মধ্যে একজন কুতুবদিয়ার ধুরং ইউনিয়নের সাদ্দাম হোসেন এবং আরেকজন যশোর জেলার মনিরামপুরের মোঃ উজ্জ্বল হোসেন। এরা মানবপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বুধবার রাতে টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে এবং কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ৪ দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলো জামাল হোছন, আবদুল্লাহ ও মোহাম্মদ আলী। এছাড়া মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা নিধন চলছে এমন অপপ্রচার চালানোর দায়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, এরা উস্কানির তৎপরতায় লিপ্ত। মিয়ানমারে শিশুসহ মুসলিম নর-নারীর ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে উখিয়ার রাজাপালংয়ের জাগীর হোছন ও হলদিয়া পালংয়ের ধুরুমখালির শুক্কর মাহমুদ। পুলিশ বলেছে, এরা উস্কানি দিয়ে এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্তে লিপ্ত। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের কারাগারে বর্তমানে আটক যে ৩,৮৭৪ জন রয়েছে এদের ব্যাপারে প্রবাসী ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় ২,২৭০ বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে আটক রয়েছে বলে জানিয়েছে। এরা ছাড়া এর আগে ৬১৮ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠানো হয়। মালয়েশিয়ার ১৪ কারাগারে যে ১,৬০৪ বন্দী রয়েছে এর মধ্যে ১১ জেল ক্যাম্প থেকে ১,৩০৫ জন দেশে ফেরার অপেক্ষায় বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে।
×