ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফতুল্লা স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা!

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১২ জুন ২০১৫

ফতুল্লা স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সাড়ে ৯ বছর আগে নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ক্রমেই বিশ্ব ক্রিকেটে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করা বাংলাদেশ দলের খেলা সরাসরি মাঠে উপস্থিত থেকে উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা। অবশেষে ২০০৬ সালের ২৩ মার্চ কেনিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ দিয়ে ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করে খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। সে বছরই তিন ওয়ানডে হয়েছিল কেনিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। একই বছর ৯ এপ্রিল ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ভেন্যু হিসেবেও মর্যাদা আদায় করে নেয় ফতুল্লা। এরপর আর টেস্ট হয়নি। এমনকি গত ৯ বছরে এখানে ওয়ানডে হয়েছে ৬টি। তবে রাজধানী ঢাকা ঘেঁষা এই ভেন্যুটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের সার্বিক সুবিধাই রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত খেলা না হওয়ার কারণে এখন দীর্ঘদিন পর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে গেলেই নানাবিধ সমস্যায় পতিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এবার দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট আয়োজন করতে গিয়ে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে বিসিবি। নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করলেই এ সমস্যাগুলো কেটে যাওয়ার কথা। কারণ সফরকারী দল ও আইসিসি কর্মকর্তাদের আগমণের কারণে নিজ গরজে বাধ্য হয়েই ভেন্যু ব্যবস্থাপনা ভালভাবে হবে। নারায়ণগঞ্জবাসী তাই চাই ৯ বছর আগের পুরনো এ স্টেডিয়ামে নিয়মিত টেস্ট ম্যাচসহ যে কোন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২০০৬ সালে ফতুল্লা স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠে। চার ওয়ানডে ও এক টেস্ট আয়োজন করে নানা দেশের মানুষ খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের নাম জেনে যায়। দারুণ মনোমুগ্ধকর চারদিকের প্রকৃতি, নিরিবিলি পরিবেশ এবং অনুশীলনের সুবিধার্থে আউটার ভেন্যু থাকায় দারুণ প্রশংসা পেয়েছিল ফতুল্লার এ ভেন্যুটি আইসিসির ভেন্যু পরিদর্শকদের কাছে। কিন্তু সেই শেষ। টানা ৭ বছর আর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়নি এখানে। নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট এবং প্রথম শ্রেণীর ম্যাচগুলো হলেও আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার সুযোগ পায়নি নারায়ণগঞ্জের মানুষ। তবে বাধ্য হয়ে ৭ বছর পর আবারও ম্যাচ আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ টানা ৬ বছর কোন ভেন্যুতে খেলা না হলে আইসিসির তালিকা থেকে বাদ হয়ে যায় ভেন্যু। ৬ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর বিসিবিকে ওই ভেন্যুর বিষয়ে নোটিসও দেয় আইসিসি। তবে সংস্কারের জন্য সময় চেয়ে নিয়ে অবশেষে ২০১৩ সালে ৩ নবেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি ওয়ানডে আয়োজন করে সেই ঝুঁকিটা কাটিয়ে ওঠে বিসিবি। কিন্তু এক ওয়ানডে আয়োজন করতে গিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। এরপরও ম্যাচ শুরুর সময় দেখা গেছে পানির সমস্যা, ইন্টারনেট সমস্যা এবং কয়েক লাখ টাকা খরচ করে বসানো জায়ান্ট স্ক্রিনের সমস্যা। আবারও ৪ মাসের বিরতি দিয়ে গত বছর ২০১৪ এশিয়া কাপে ৫ ম্যাচের আয়োজক হয়েছে ফতুল্লা। গত ১৬ মাসে আর হয়নি। ফলে আবারও আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হওয়ার কারণে অযতœ-অবহেলায় ভেঙ্গে পড়ে অবকাঠামো। ভারতের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট আয়োজন করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে বিসিবিকে। ফতুল্লার স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স সীমানায় রওজাতুস সালিহিন আলিম মাদ্রাসা থাকায় টেস্ট ম্যাচ চলার সময় সেটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে হয়েছে বিসিবিকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে। এছাড়া গত দু’দিন বৃষ্টি হওয়ার পর দেখা গেছে মিডিয়া প্রান্তের বিল্ডিংয়ের করিডরে গ্লাস মোড়ানে দেয়াল চুয়ে পানি জমতে মূল স্টেডিয়ামের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হলেও আউটার স্টেডিয়ামগুলোতে হাঁটু পানি জমে সাগর হয়ে গেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) এবং বিসিবি যৌথ প্রচেষ্টায় টেস্ট উপযোগী করতে গিয়ে আবারও কোটি টাকা খরচ করেছে। দীর্ঘদিন খেলা না হওয়ার কারণে ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুমেরও চিত্রটাও বেহাল ছিল। সবকিছুই নতুন করে মেরামত করতে হয়েছে। ২০০৬ সালে ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের যাতায়াত ব্যবস্থা তেমন সুবিধাজনক না থাকলেও বর্তমানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার হওয়াতে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। যার ফলে ফতুল্লায় গিয়ে ঢাকাবাসীও নির্বিঘেœ খেলা দেখতে পারেন। তবু এ স্টেডিয়ামটি বরাবরই উপেক্ষিত আছে। গত ১৬ মাসে তিন সিরিজ গেলেও কোন খেলা দেয়া হয়নি এখানে। এমনকি দর্শক গ্যালারির ধারণক্ষমতাও বাড়ানো হয়নি। যার ফলে আবারও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, এনএসসি ও বিসিবিকে গাঁট থেকে খসাতে হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এখন নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি নিয়মিত ফতুল্লায় খেলা হোক। নিয়মিত যতেœ থেকে আরও সুদৃশ্য, আরও মনোমুগ্ধকর একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে পরিণত হোক ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। আর বর্তমানে বিপুল তহবিল থাকা বিসিবির জন্য সেটা খুব সহজ।
×