ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

নৃত্যগীত নৃত্যনাট্য ও আলোচনায় বাফা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১১ জুন ২০১৫

নৃত্যগীত নৃত্যনাট্য ও আলোচনায় বাফা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশীয় সংস্কৃতির লালন ও চর্চায় নিবেদিত ঐতিহ্যবাহী বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু বুলবুল চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত এ সাংস্কৃতিক সংগঠনটি নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ষাট বছর পূর্ণ করেছে। প্রতিষ্ঠার ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলা একাডেমির সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশিদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ভারত থেকে আগত বাফা প্রতিষ্ঠালগ্নের নৃত্য শিক্ষক অজিত সন্যাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, বাফার সাবেক সভাপতি শামসুননাহার নূর, নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বুলবুল চৌধুরীর একমাত্র কন্যা নার্গিস বুলবুল চৌধুরী প্রমুখ। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর নৃত্যশিল্পী আনিসুল ইসলাম হিরুর পরিচালনায় ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বাফার শিল্পীরা। পরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাফার সম্পাদক নূরুর রহমান পলাশ। আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ষাট বছর আগে মাত্র চল্লিশ জন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিদের নিয়ে বাফার পথচলা শুরু হয়। তখন যারা এই প্রতিষ্ঠানটির শুভ সূচনা করেন তাদের মধ্যে একজন আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত। তার নাম অজিত সন্যাল। আমরা আজ এমন একজন ব্যক্তিত্বকে পেয়ে ধন্য। দেশের প্রাচীনতম এই সংগঠনটি বুলবুলের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারত। ঐতিহ্যবাহী বাফা এখন নানান ষড়যন্ত্রের শিকার। বাফার নামে রাজধানীর ওয়াইজ ঘাটের সম্পত্তিটুকুও এখন ভূমিদস্যুদের কবলে যেতে বসেছে। আসুন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই ঐহিত্যবাহী সংগঠনটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ পর্বের শুরুতে নৃত্যশিল্পী অনিক বসুর পরিচালনায় একটি দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হয়। এরপর একাডেমির নৃত্যশিক্ষক সোহেল রহমানের পরিচালনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘মায়ার খেলা’ মঞ্চস্থ হয়। একাডেমির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে নৃত্যগীতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। শিল্পকলায় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ও উৎসব শুরু ॥ স্বরচিত্র আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ও উৎসব। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে বুধবার বিকেলে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও অনুষ্ঠানের আথির্ক পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ড. রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বরচিত্র আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের সভাপতি মাহিদুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাম্মীরুন সাম্মী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, একজন আবৃত্তি শিল্পী প্রথমে কবিতার ভেতর প্রবেশ করে তারপর কবিতাকে নিজের ভেতর ধারণ করে এক সময় সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে। সুতরাং আবৃত্তি চর্চার গুরুত্ব অনেক। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আশরাফুল আলম বলেন, আজকাল আমরা বড্ড বেশি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন করে ফেলছি আমাদের শিশুদের। কে প্রথম হলো, কে বেশি পেল সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে কে মানুষ হলো বা হলো না সে বিষয়টির দিক থেকে আমরা সরে আসছি। যা সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের পরিপন্থী। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক বরাদ্দের সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চাটাকে মিলিয়ে ফেলি। আসলে অর্থের সঙ্গে সংস্কৃতি চর্চার কোন সম্পর্ক নেই। আমাদের রুচি ও সম্মানকে উপেক্ষা করে সংস্কৃতি চর্চার দিকে এগুচ্ছি বলেই সমাজের নানা অবক্ষয় আমরা দেখতে পাই। এ সময় তিনি সনাতনী প্রক্রিয়ায় সংস্কৃৃতি চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে যুগের দাবির প্রেক্ষিতে সংস্কৃতি চর্চার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি গুরুত্বারোপের জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানান। আলোচনা শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিশুদের অংশগ্রহণে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আবৃত্তির বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুরা। কাজী নজরুল ইসলাম পদক আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণীর শিশুরা। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতা নিয়ে বৃন্দ আবৃত্তি করে স্বরচিত্রের শিল্পীরা। এটি গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দেন মাহিদুল ইসলাম। স্বরচিত্রের নবীন শিল্পীদের অংশগ্রহণে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ‘মানুষের মানচিত্র’ পরিবেশিত হয়। এছাড়া আমন্ত্রিত শিল্পীরা তাদের আবৃত্তি পরিবেশন করেন। গান, কবিতা আর নৃত্যের ছন্দে নজরুল উৎসব উদযাপন ॥ গান, কবিতা আর নৃত্যের ছন্দে নজরুল উৎসব উদ্যাপিত। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় এ উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ উৎসবের শিরোনাম ‘অন্তরে তুমি চিরদিন’। মানবকল্যাণ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের আলোয় দেদীপ্যমান নজরুলের জীবন। মানবতা, প্রেম ও বিদ্রোহকে একসূত্রে গেঁথে তিনি মানুষের জয়গান করেছেন। তাঁর সুর সাধনায় ঐশ্বর্যম-িত হয়ে ভাস্বর রূপ পায় প্রচলিত বাংলা গানের বৈশিষ্ট্য। সঙ্গীত শিক্ষা বিনিময় শীর্ষক আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান ॥ সুইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গীতশিক্ষা বিনিময় শীর্ষক এক আলোচনাসভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান হয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয়সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যৌথভাবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারী সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়। সহযোগিতায় সুইডেনের স্টকহোম মিউজিক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন। শুরুতেই শিল্পী মনিরুজ্জামানের পরিচালনায় বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে ‘ফ্লাইং বার্ডস আই রিভার’স’ শীর্ষক যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এতে তবলায় সৈয়দ মেহের হোসেন, পাখওয়াজ-শূসেন, একতারা-একরাম হোসেন, পারকাশান-স্বপন কুমার নাগ, বেহালা নুরুজ্জামান, সরোদ ইউসুফ খান, সেতার-মোশাররফ খান, কণ্ঠসঙ্গীত-স্বরলিপি, গিটার-মনোয়ার হোসেন টুটুল এবং কি-বোর্ডে ছিলেন-জাহিদ হোসেন। এরপর সঙ্গীতের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন সুইডেনের স্টকহোম মিউজিক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের শিক্ষক ইয়ানপ্লাউড ও মাইকেল এসক্লাইটার।
×