ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফতুল্লায় প্রথম দিনেই বিপাকে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১১ জুন ২০১৫

ফতুল্লায় প্রথম দিনেই বিপাকে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ তখন ভারতের দলীয় রান ১০৫। শিখর ধাওয়ানের রান ৭৩। এমন সময় স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে শর্ট মিডউইকেটে শুভাগত হোমের হাত থেকে যে ধাওয়ানের ক্যাচ ফসকালো, শেষপর্যন্ত ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতক তুলে নিলেন এ ওপেনার। টেস্টে খেললেন ‘ওয়ানডে স্টাইলে’। করলেন ১৫৮ বলে ২১ চারে ১৫০ রান। তার এ রানের সঙ্গে মুরলি বিজয় যে টেস্ট মেজাজে খেলে ১৭৮ বলে ৮৯ রান করলেন, তাতেই ভারত প্রথমদিনে ২৩৯ রান করে ফেলেছে। তাও আবার কোন উইকেট না হারিয়ে! বাংলাদেশও প্রথমদিনে যেন বিপাকের মধ্যে পড়ে গেল। খেলাও আবার প্রথমদিনে পুরো ৯০ ওভার হয়নি। বৃষ্টিতে ৩৪ ওভার খেলানোই গেল না। ফ্লাডলাইট জ্বালিয়েও খেলা হলো। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ৬ ওভার আগে যখন ২৩.৩ ওভারে ধাওয়ান সাজঘরে ফেরা থেকে বাঁচলেন আর এক বল হতেই বৃষ্টি যে নামল, খেলা শুরু হলো দুপুর সাড়ে তিনটায়। ততক্ষণে মাঠে বল না গড়িয়ে একটি সেশনই শেষ হয়ে গেল। এরপর যখন খেলা শুরু হলো, খেলা হলো ৩৩ ওভার। মোট ৫৬ ওভার খেলা হলো। তাতে ভারত এত রান করে ফেলল। ৯০ ওভার পুরো খেলা হলে প্রথমদিনে হয়ত চার শ’ রানের কাছাকাছি করে ফেলত ভারত। তা হলো না। তবে ধাওয়ান-বিজয় মিলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ডই গড়ে ফেললেন। আজ যে ধাওয়ান-বিজয় মিলে আরও বিধ্বংসী রূপে আত্মপ্রকাশ করবেন, তা বোঝাই যাচ্ছে। তা না হলেও পরের ব্যাটসম্যানরা ভারতকে অনেক দূর নিয়ে যেতে চাইবেন। তা যদি হয়, তাহলে ফতুল্লা টেস্টে বাংলাদেশ হারের সম্মুখীনেই পড়ে যেতে পারে। সেই সম্ভাবনা প্রথমদিনেই উঁকি দিতে শুরু করেছে। ভারত যে বুধবার বিনা উইকেটে দিন শেষ করল, এমন খারাপ দিন বাংলাদেশ এর আগেও তিনবার দেখেছে। ২০০৩ ও ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২০০৭ সালে ভারতই এমন দুঃখ ভরা দিন দেখিয়েছে বাংলাদেশকে। তিনবারই ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে বাংলাদেশের। এবার কী হবে? সবার মনে সেই দুঃখস্মৃতিগুলোই উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে যেন তা নিয়ে এখনই ভাবতে রাজি নন। বুধবার প্রথমদিন শেষে বলে দিয়েছেন, ‘এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। এক ইনিংস অন্তত শেষ না হলে কিছুই বলা যাবে না।’ দল যে এ টেস্টেও ড্র’র জন্য খেলছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। তাই তো ৭ ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে যে খুলনা টেস্টে খারাপ সময় থেকেও ড্র করেছে বাংলাদেশ, সেই রকম কিছুই হয়ত ভাবনায় আছে। তবে এবার বোধ হয় একটু বেশিই ঝুঁকি নিয়ে নেয়া হয়েছে। কিভাবে? ৭ ব্যাটসম্যান ঠিক আছে। তিন স্পিনার খেলানোর সঙ্গে এক সিমার খেলানো হচ্ছে! এটা কোন যুক্তিসঙ্গত একাদশ হলো? হাতুরাসিংহে কিন্তু একাদশ নিয়ে একটু বিচলিত নন। বলে দিয়েছেন, ‘রুবেল ফিট ছিল না। এ কন্ডিশনে রুবেল ঠিকও নয়। এ কন্ডিশনে সেরা বোলিং আক্রমণই। ভুল কিছুই দেখছি না। যে একাদশ করা হয়েছে, তা ঠিকই আছে।’ বাংলাদেশ টেস্ট খেলে ১৫ বছর ধরে। এর মধ্যে গতবছর একবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আর ভারতের বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্টে এক পেসার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। স্পিনারের সংখ্যাও তিন। কিন্তু কিছুই করতে পারলেন না তাইজুল, শুভগত, জুবায়ের। এর মধ্যে আবার প্রথমদিনে ৭ ওভারে ৪১ রান দেয়া জুবায়ের আবার কোচের পছন্দের ক্রিকেটার। তা এখন সবাই জানেন। জুবায়ের যে বোলিং করেছেন, তাতে কোচ খুশি না হয়ে পারেন। হলেনও। কিন্তু ম্যাচ কী বাঁচানো যাবে? তাইজুলের বলে যে ধাওয়ান বেঁচে গেলেন, তখন এ উইকেটটি পড়লে অন্যরকম কিছুও হতে পারত। তবে এটাও আবার ঠিক, ভারতের বিপক্ষে যদি দুই পেসার নিয়ে খেলা হতো, তাহলে কী হতো? ভারতকে কী দ্রুতই অলআউট করা যেত? ফতুল্লা টেস্টের আগে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৭ টেস্ট খেলেছে। একটি টেস্ট বৃষ্টির জন্য ড্র হয়। বাকি ৬টিতেই বাংলাদেশ হেরেছে। একবার মাত্র ২০১০ সালে প্রথম ইনিংসে ভারতকে ২৫০ (২৪৩ রান) রানের নিচে অলআউট করতে পেরেছে বাংলাদেশ। বাকি সব ইনিংসেই সাড়ে তিন শ’ রানের বেশি করেছে ভারত। দলটি শক্তিশালী। দ্রুতই অলআউট করা যাবে, এমন ভাবনা নিশ্চয়ই সহজে কারও মাথাতেই আসবে না। তাই যদি হয়, তাহলে টেস্ট বাঁচানোর জন্য ব্যাটসম্যান বেশি নিয়ে খেলাই ভাল। তাই করেছে বাংলাদেশ। সমালোচনা হচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস দেখেও সমালোচনায় পড়তে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ড্র’ও করে দেখিয়েছে। সেটি হয়েছে ব্যাটসম্যানদের সুবাদেই। এবারও যদি ৯ বছর পর আবার ফতুল্লায় খেলতে নেমে সে রকম কিছু ঘটে, তাহলে কী যে একাদশ গঠন করা হয়েছে, তাকে ভুল বলা যাবে? তাই তো কোচ বলতে চেয়েছেন, ‘এক ইনিংস না দেখে কিছুই বলা যাবে না।’ গতবছর জুনে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেন কোচ হাতুরাসিংহে। ভারতের বিপক্ষেই খেলা থাকে। একবছর সময়ে দলের অনেক উন্নতি দেখেছেন। এবার একবছর পূর্তির সময়ই ভারতের বিপক্ষে টেস্টেও সেই উন্নতির ধারাবাহিকতা থাকলেই হয়। তবে আপাতত প্রথমদিন শেষে বাংলাদেশ যে বিপাকে পড়ে আছে, তা ঠিক।
×