ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে রওশন

বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত না হলে প্রবৃদ্ধির টার্গেট পূরণ হবে না

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১০ জুন ২০১৫

বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত না হলে প্রবৃদ্ধির টার্গেট পূরণ হবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু দিক হতাশাজনক মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, সবদিক থেকে এই বাজেট জনকল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু ভাল দিক আছে, কিছু খারাপ দিক আছে। কিছু ক্ষেত্রে মানুষ হতাশ। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এমন বাজেট জনগণ দেখতে চায় যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে আর এর ফলেই দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে। সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে বাজেট অনেকাংশে বাস্তবায়িত হবে বলে মনে করেন তিনি। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে না পারলে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। জাতীয় পার্টির সিনিয়র এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন, স্বপ্ন দেখাতে ভালবাসেন। তাই সীমিত আয়ের মধ্যেও এত বড় আকারের বাজেট দিতে পেরেছেন। বাজেট জনগণের জন্য, সেই বাজেট যদি জনকল্যাণে কাজ না করে তাহলে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে আমরা এর সমালোচনা করব। এক প্রশ্নের জবাবে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, কর্মসংস্থান না হওয়ার কারণেই মানুষ ঝুঁকি নিয়ে দেশান্তরী হচ্ছে। এ বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মানবপাচার রোধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব দেয়ার চার দিন পর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন রওশন। বিনিয়োগ ‘না বাড়ার’ পেছনে বিনিয়োগ বোর্ডের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়াকে কারণ বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর জন্য দরকার বিনিয়োগ, বিদেশী বিনিয়োগ। বিদেশী বিনিয়োগ আছে কি? বিনিয়োগ না থাকলে কিভাবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে? দেশের যে পরিস্থিতি তাতে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ৭ শতাংশ কিভাবে হবে? রওশন বলছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে ‘স্পষ্ট করে’ কিছু বলা হয়নি। দেশের চার কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকলেও বাজেটে এ বিষয়ে কিছু নেই, কর্মসংস্থানেরও নির্দেশনা নেই। কর্মসংস্থান না হলে মানুষ তো সমুদ্র পার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাবেই। কর্মসংস্থান নেই বলেই ওমরাহ ভিসা নিয়ে দেশ ছেড়ে আর ফেরে না। অবৈধভাবে থাকছে। অর্থমন্ত্রী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এই হিসাবে বাজেটে ঘাটতি থাকছে ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি অর্থমন্ত্রী আদায় করতে চান কর ও রাজস্ব থেকে। রওশন বলেন, বাজেটে যে ঘাটতি রয়েছে সেটা কিভাবে পূরণ হবে? এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ না হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কাজে যে খরচ হয়েছে তার কোন হিসাবও বাজেটে নেই। অপর এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনিয়োগ বোর্ডে ফাইল গেলে পড়ে থাকে, নড়ে না। এজন্য বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়ে চলে যায়। বিদ্যুত-গ্যাসের উন্নয়ন হয়নি। বিনিয়োগ কিভাবে আসবে? মোবাইল ফোনের সেবায় ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধীদলীয় নেতা, যাঁর দলের তিন নেতা সরকারের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, মোবাইলে কর ধরা হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ মোবাইলে যোগাযোগ করে। এখন থেকে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ২০ টাকা ‘কর’ দিতে হচ্ছে। করটা না ধরলে কী হতো? সরকারী কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল প্রসঙ্গে রওশন বলেন, বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। ভুক্তভোগী হবে জনগণ। এ বিষয়েও বাজেটে নির্দেশনা নেই। সরকার অনেক স্বপ্ন দেখায়, সব কি বাস্তবায়ন হয়- এমন প্রশ্ন রাখেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন। সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় বাজেট নিয়ে মতামতগুলো তুলে ধরবেন কিনা- জানতে চাইলে রওশন বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে যখন বলছি তখন ওখানেও (সংসদে) নিশ্চয়ই বলব। আমাদের আগের বিরোধী দলের সঙ্গে তুলনা করবেন না। আমরা গঠনমূলক রাজনীতি করতে চাই। সংসদ বর্জন করব না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑ বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, হুইপ নূরুল ইসলাম ওমর এমপি প্রমুখ।
×