ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গোলটেবিল বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ॥ ‘খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ৯৬ শতাংশ নারী রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন’;###;যৌন হয়রানি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক গোলটেবিলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত

সহিংসতা প্রতিরোধে নারীকেই সোচ্চার হতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১০ জুন ২০১৫

সহিংসতা প্রতিরোধে নারীকেই সোচ্চার হতে হবে

স্টাফ রির্পোটার ॥ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারীদেরকেই সোচ্চার হতে হবে। নির্যাতন সহ্য করে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখলে কখনও প্রতিবাদ করা যাবে না। নির্যাতনের বিষয়গুলোকে সবার সামনে আনতে হবে। নারীদেরকে আওয়াজ তুলতে হবে। তার সঙ্গে যে অসৌজন্যমূলক ও অশোভন আচরণ করা হয় সে বিষয়ে নিজেকেই প্রতিবাদ করতে হবে। মঙ্গলবার সকালে ডেইলি স্টার মিলনায়তনে প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘যৌন হয়রানি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমি কাজ করেছি। সব দেশেই নারীরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শিক্ষাঙ্গন, কর্মক্ষেত্র, রাস্তাঘাট এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। এ সব থেকে মুক্তি পেতে হলে নারীদেরকেই কথা বলতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। প্রতিবাদ না করলে দিনদিন এই মাত্রা আরও বাড়তে থাকবে। বার্নিকাট বলেন, ২০১৫ সালে মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ৯৬ শতাংশ নারী রাস্তায় যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের অধিকাংশের বয়স ৪০ বছরের নিচে। অপর একটি জরিপে দেখা গেছে, ১০ বছর বয়সের ৮৬ শতাংশ কন্যাশিশুর আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেয় যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর। এ সময় নারী-পুরুষ সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এলিন ও কনোর বলেন, বিশ্বের সর্বত্রই নারীরা যৌন নিপীড়নের শিকার। নিজের সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাইরের পুরুষ দ্বারাই নয়, নারীরা সহকর্মী পুরুষ দ্বারাও নিপীড়নের শিকার হন। নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে হলে পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারীদেরকে ভাল নজরে দেখতে হবে। তাদের কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। মানসিকতা পরিবর্তন হলেই নারীরা নিরাপদে সমাজে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। একজন নারী যেমন নিজ গৃহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তেমনি দেশের জন্যও সে কাজ করে। তাই তাদের প্রতি নির্যাতন না করে সম্মান করার মানসিকতা সবার মধ্যে আনতে হবে। বৈঠকে মূল প্রবন্ধে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজুর আনাম বলেন, গণমাধ্যম সবকিছুকেই সাধারণীকরণ করে। নারীরা শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে সব জায়গায় হয়রানির শিকার হন, এমনকি গণমাধ্যমেও বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন। নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন আমাদের অর্জনকে ম্লান করে দেয়। আমাদের সভ্যতাকে আঘাত করে। শাইখ সিরাজের করা একটি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, কৃষিক্ষেত্রে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল বিক্রি পর্যন্ত ২২টি ধাপ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি ধাপে নারীরা সরাসরি জড়িত। অথচ এখানে নারীদের কথা উল্লেখ করাও হয় না। ৫০ শতাংশ মানুষকে বঞ্চিত করে কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। একজন পুরুষ বাইরে কাজ করতে সে মাসে একটা সম্মানী পায় কিন্তু একজন নারী যে সারাদিন সংসারে শ্রম দেয় সবার দেখাশুনা করে এজন্য সে সারাদিন কিছু পায় না এমনকি ভালভাবে কেউ এ কাজের প্রশংসাও করে না। মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, অধিকাংশ মিডিয়াতেই জেন্ডার সচেতনতামূলক নীতিমালা নেই। এটি একটি সমস্যা। শুধু নারী-পুরুষকে সচেতন করাই নয়, যৌন নিপীড়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই এ ভয়ঙ্কর সমস্যা রুখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন, বেসরকারী সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, উইম্যান জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের আহ্বায়ক আঙ্গুর নাহার মন্টি প্রমুখ।
×