ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবহাওয়ায় সুখবর নেই ॥ সাগরে মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১০ জুন ২০১৫

আবহাওয়ায় সুখবর নেই ॥ সাগরে মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়েছে। এবার বৃষ্টি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি এই বায়ুু। গত তিন দিন আগে টেকনাফ উপকূল দিয়ে প্রবেশ করার পর দেশের কেন্দ্রস্থলে এ বায়ুর বিস্তারলাভ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু দেশে বৃষ্টির দেখা নেই। বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। বুধবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে তীব্র গরম অনুভূত হয়। দুর্ভোগে পড়ে দেশবাসী। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গরমজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আবারও বেড়েছে। দেশে বর্ষা আগমনের প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলেছে। বৃষ্টির দেখা নেই। অস্বস্তিতে পড়েছে দেশবাসী। মানুষের হতাশার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস। জুনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হবে বলে জানিয়ে রেখেছে অধিদফতর। দেশের মাঠ-প্রান্তরের খাঁ খাঁ অবস্থা যেন আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসের বাস্তব রূপ ফুটিয়ে তুলছে। অব্যাহত তাপদাহ ও মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবারও দেশের সর্বত্র অনুভূত হয় তীব্র গরম। বৃষ্টির দেখা নেই দেশের কোথাও। মাঝে মাঝে বয়ে যাওয়া ঠা-া বাতাসেই প্রশান্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। কাঠফাঁটা রোদ ও তীব্র গরমে নাজেহাল দেশবাসী এখন বৃষ্টির অপেক্ষায়। তাপপ্রবাহ, আর্দ্রতার দাপট ও বৃষ্টিশূন্যতাই গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশিসহ নানা মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এবার বর্ষার আগমনেই স্বস্তি পাচ্ছেন না দেশবাসী। একই সমস্যায় পড়েছেন আবহাওয়াবিদরাও। এবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর (বর্ষা) আগমন ও গতি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা । দশদিন আগে বাংলাদেশ ও ভারতীয় আবহাওয়াবিদরা বলেছিলেন, এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্ষার আগমন ঘটবে। কিন্তু তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গে বিরাজ করছে তীব্র গরম, বৃষ্টি নেই । একই অবস্থা বাংলাদেশেরও। নাকাল করা গরম থেকে রেহাই পেতে টানা বর্ষাই একমাত্র ভরসা। টেকনাফে প্রবেশ করার পরও স্বস্তি পাচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। এবার আশঙ্কা জন্মেছে মৌসুমী বায়ুর বিস্তার হওয়ার গতি নিয়ে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আগমন না ঘটলে বাংলাদেশের মৌসুমী বায়ুও গতি পাবে না। কোথাও থমকে যেতে পারে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হবে। এ অবস্থার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের আলীপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তাদের কথার বেশ মিল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বর্ষা কবে আসবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে তার যে দেরি হবে, সেটা নিশ্চিত। আবহাওয়াবিদদের একাংশ বলছেন, কিছুদিন ধরে প্রশান্ত মহাসাগরের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি রয়েছে। সমুদ্রবিজ্ঞান একে বলে ‘এল নিনো’। এল নিনো পরিস্থিতি বর্ষার ওপরে খারাপ প্রভাব ফেলে। দুর্বল করে দেয় মৌসুমী বায়ুকে। এবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বর্ষার আগমন-ছন্দটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এদিকে, রাজধানীর আকাশেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত নেই। দিনের অধিকাংশ সময় পড়ছে তীব্র রোদ। গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ঘন ঘন লোডশেডিং বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্ভোগের মাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রখররোদ উপেক্ষা করেই চলতে হয় পথচারীদের। এত অস্বাভাবিক গরমে পরিবহনগুলোর ভেতরের তপ্ত পরিবেশে অস্থির হয়ে ওঠে যাত্রীরা। তাপদাহে জর্জরিত মানুষের কাছে বেড়ে যায় ঠা-া পানীয়ের চাহিদা। ঢাকার গত কয়েকদিনের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ থেকে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা বেশি থাকে, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসে, তাহলে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হবে। বর্তমানে ঢাকায় এমন অবস্থাই বিরাজ করছে। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পেয়ে ৬ থেকে ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীসহ শহুরে এলাকার জন্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস অনেকটাই দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি করে। বর্তমানে রাজধানীবাসীকেও এমন বিরূপ আবহাওয়া ও ইট-পাথরের প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মঙ্গলবার দেশের প্রায় সব ক’টি স্টেশনেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৩৯.৪ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সৈয়দপুরে ২৪.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩৬ ও ২৮.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, গ্রীষ্মের প্রখররৌদ্র আর তীব্র তাপদাহে ঠাকুরগাঁওবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে। গরমের কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। গত কয়েকদিন ধরেই সকালে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতেই থাকে। বেলা যতই বাড়তে থাকে সূর্যের তাপ পাল্লা দিয়ে ততই বাড়তে থাকে। মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে নদীর তীরবর্তী শিশুরা নদী কিংবা পুকুর পানিতে সাঁতার কেটে গরম নিবারণের চেষ্টা করছে। গ্রামের কৃষকরা গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডাঃ নজরুল ইসলাম জানান, গরমে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বাড়ছে। তবে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। এই গরমে তিনি প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের বাইরে বের না হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ার এবং বেশি করে নিরাপদ ঠা-া পানি পান এবং প্রয়োজনে খাবার স্যালাইন খেতে পরামর্শ দেন। স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকেই তাপদাহ চলছে রাজশাহী অঞ্চলে। মাঝে দুইদিন বৃষ্টিপাত হলেও অব্যাহত তাপদাহে তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো রাজশাহী আঞ্চল। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ স্থির থাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে চরম অস্থিরতা। যেন হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে মানুষ থেকে প্রাণীকুলেও। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখনই ২৫ ডিগ্রীর নিচে নামেনি। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগের দিন সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রী এবং সর্বনিম্ন ছিল ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তার আগের দিন রবিবারও ছিল সর্বোচ্চ ৩৮ দশমকি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এর আগে ২২ মে রাজশাহীতে এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। অব্যাহত এ তাপমাত্রার পাশাপাশি ভ্যাঁপসা গরমে উত্তরাঞ্চলে তাপদাহ ছড়িয়ে পড়েছে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বেলা ৯টার পরপরই রাস্তাঘাট রোদে খাঁ খাঁ করছে। দুপুরের দিকে অবস্থা আরও বেগতিক আকার ধারণ করছে। প্রচ- রোদের তাপে মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ারই সাহস পাচ্ছেন না। রাস্তাঘাট অনেকটায় ফাঁক হয়ে যাচ্ছে।
×