ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১০ জুন ২০১৫

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো

রহিম শেখ ॥ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। গ্রাহকদের জন্য সার্ভিস চার্জবিহীন এই বিশেষ সেবা চালুর জন্য ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্যাংক লাইসেন্স নিয়েছে। ডাচ্-বাংলা ও ব্যাংক এশিয়ার এজেন্টরা ইতোমধ্যে সেবা প্রদান শুরু করেছে। সেবাটি প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তি করেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। চলতি মাসেই ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবাদান শুরু করার কথা রয়েছে ব্যাংকটির। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সম্প্রতি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমতি পেয়েছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক কিছু ব্যাংকিং সেবা দেবে ব্যাংকের এজেন্টরা। তবে সবার আগে অনুমতি নিলেও সেবাটি চালুর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক। জানা গেছে, এজেন্টের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা প্রদানই মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং। কোন আউটলেটের মালিক ব্যাংকের পক্ষে সেবাটি দিয়ে থাকেন। সমাজের দরিদ্র ও ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন এলাকার জনগণকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনাই এর উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, সেবাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট নিয়োগ করে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের সুযোগ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকগুলোও ধীরে ধীরে নতুন ধরনের এ সেবায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে যারা কাজ শুরু করেছে, তারা ভালো সাড়াও পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর। এরপর ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ তিন দফা প্রজ্ঞাপন জারি করে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। সর্বশেষ ৬ জানুয়ারি এক সার্কুলার জারি করে গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দেয়া হয়। যদিও শুরুতে শুধু পল্লী এলাকায় সেবাটি প্রদানের সুযোগ ছিল। নীতিমালা ও নির্দেশনা জারির পর ব্যাংক এশিয়া ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৯ মে তাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাংক এশিয়া ১৭টি জেলার ৩২টি উপজেলায় ৪৯টি এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছে। আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংক নিয়োগ দিয়েছে ৬টি এজেন্ট। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০টি এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার সুযোগ পায়। তবে তার আগে ২০১৩ সাল থেকেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখানের বিভিন্ন স্থানে আটটি, লৌহজংয়ে একটি ও শ্রীনগরে দুটি এজেন্ট নিয়োগ করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে দুই হাজারের বেশি গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়। অনুমোদনের পর ব্যাংক এশিয়া ৩০টি এজেন্ট চালু করলে আরও ২০টি এজেন্ট নিয়োগের অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এখনও চালু করতে পারেনি সেবাটি। এ নিয়ে এটুআই প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকটি, যার মাধ্যমে চলতি মাসেই ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা প্রদান শুরু করবে বলে জানা গেছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকও ইতোমধ্যে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে সেবা প্রদান শুরু করেছে। এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোঃ শিরিন জনকণ্ঠকে বলেন, এখনও দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে। তাদেরকে এ সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে যেহেতু গ্রাহকের কোন সার্ভিস চার্জ নেই, সেহেতু গ্রাহক পর্যায়ে বিষয়টি ইতিবাচক হবে বলে আমরা মনে করছি। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় স্বল্প পরিমাণ টাকা নিজ হিসাবে জমা দেয়া ও তোলা যাবে। বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা যাবে। ছোট আকারের ঋণ বিতরণ ও ঋণের কিস্তি আদায়, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা যাবে। সম্প্রতি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংককে সেবা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাংকটিকে দুটি এজেন্ট চালুর অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে সফটওয়্যার তৈরিসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউর রহমান। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানেই আমরা এজেন্ট নিয়োগ দেব। জুনের মধ্যে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পাওয়ার পর এ লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক সেবাটির অনুমতি পেলেও চালুর বিষয়ে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি এখন। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, সেবাটি চালুর অনুমতি পেলেও কবে নাগাদ চালু করা হবে, এখন তা নির্ধারণ হয়নি। সফটওয়্যারসহ আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। এর পরই বলা যাবে, কবে নাগাদ চালু হবে সেবাটি। নতুন ধরনের এ সেবায় কারা এজেন্ট হতে পারবে, তা উল্লেখ করে দেয়া আছে নীতিমালায়। সে অনুযায়ী মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বেসরকারী সংস্থা ও ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান, কো-অপারেটিভ সোসাইট, পোস্ট অফিস, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এজেন্ট হতে পারবে। এছাড়া সেলফোন নেটওয়ার্ক কোম্পানির এজেন্ট, পল্লী ও স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানেরও এজেন্ট হওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন এমন শিক্ষিত ব্যক্তি, বীমা কোম্পানির শাখা, ওষুধের দোকানের মালিক, চেইন শপ এবং পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি স্টেশনকেও এজেন্ট হিসেবে নিয়োগদানের বিধান রয়েছে। এজেন্ট হতে পারবে শহর ও গ্রামের স্থানীয় সরকারের অফিসও। এসব এজেন্ট ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করতে পারবে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করতে পারবে তারা। ইউটিলিটি বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর অর্থ প্রদান করতে পারবে এ সব এজেন্ট। নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করবে এসব এজেন্ট। তবে কোনভাবেই হিসাব খোলা বা চেক প্রদান করতে পারবে না। বৈদেশিক মুদ্রায়ও কিছু করার সুযোগ নেই এজেন্টদের। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব রাখতে হবে। ওই হিসাবের সর্বোচ্চ স্থিতি হবে ১০ লাখ টাকা। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা নগদ জমা অথবা উত্তোলন করা যাবে। দৈনিক দুই বারের বেশি নগদ উত্তোলন ও জমা করা যাবে না। তবে অন্তর্মুখী রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উত্তোলনের এ সীমা প্রযোজ্য হবে না।
×