ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যৌথ ইশতেহার

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১০ জুন ২০১৫

যৌথ ইশতেহার

পারস্পরিক বন্ধুত্ব আর বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। যা দু’দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতাকে আরও জোরদার করবে। দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক আরও জোরালো ও অর্থনৈতিক ভিত্তি সমৃদ্ধ করবে। আঞ্চলিক যোগাযোগ, রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বা কানেকটিভিটির আওতায় উভয় দেশ আর্থিক ক্ষেত্রগুলোকে জোরালো করবে। এমনিতেই দু’দেশের জনগণের শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্র একই সূত্রে গাঁথা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দু’দিনের ঢাকা সফরের পর ‘নতুন প্রজন্ম, নতুন গন্তব্য, নয়া দিশা’ শীর্ষক ৬৫ দফা যৌথ ইশতেহারে উভয় দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যত রূপকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সকল ক্ষেত্রই দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণায় বিধৃত হয়েছে। যেখানে উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, সার্বভৌমত্ব, সমতা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস ও বোঝাপাড়ার মাধ্যমে নতুন এক দিগন্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ইশতেহারে উভয় দেশ জঙ্গীবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপোসহীন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে কোন দেশ কারও সীমানায় কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রশ্রয় না দেয়ার অঙ্গীকারও করেছে। কারণ জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর কোন সীমানা নেই, তারা মানবতার শত্রু। এই শত্রুকে রুখতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ ইস্যুতে এক দেশ অপরকে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী পর্যায়ে তথ্য আদান-প্রদান করবে। ইশতেহারে দু’দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন সব নদীর পানি বণ্টনে অঙ্গীকার প্রদান করা হয়েছে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তি করা হবে। একই সঙ্গে ভারত অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হয় এমন কোন আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ভারত গ্রহণ করবে না। শুধু তাই নয়, বর্তমান ধারায় টিপাইমুখ জলবিদ্যুত প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হবে না। গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সহযোগিতা করবে। সীমান্ত হত্যার সংখ্যা অবশ্যই শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা উল্লেখ করে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে। আন্তঃযোগাযোগ শুধু নয়, এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এই ইশতেহারে। উপকূলীয় নৌচলাচল বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিহন প্রটোকল স্বাক্ষর এবং এর সঙ্গে নতুন বাস সার্ভিস উদ্বোধন ও এ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি উভয় দেশ অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে। ইশতেহারে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত ও জ্বালানি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক অর্থনীতি, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়গুলোও ঠাঁই পেয়েছে। জ্বালানি, তেল, গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রেও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে দু’ দেশ। শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে সহযোগিতার অঙ্গীকার রয়েছে। যৌথ ঘোষণা দু’দেশের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। চুক্তিগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে এই ইশতেহারের ভবিষ্যত। কেবল কথার কথা নয়, কাজের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হবে দু’দেশের আন্তরিকতা, সদিচ্ছা এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বের গভীরতা। এই যৌথ ইশতেহারের প্রতিটি দফা বাস্তবায়নে দু’দেশের সরকার ও জনগণকে এগিয়ে আসতেই হবে। কারণ জনগণ চায় দু’দেশের সমস্যার স্থায়ী সমাধান।
×