ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আবৃত্তি দিয়ে অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করা যায় ॥ মিলন কান্তি দে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ জুন ২০১৫

আবৃত্তি দিয়ে অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করা যায় ॥ মিলন কান্তি দে

মিলন কান্তি দে। বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, যাত্রা পালাকার, নির্দেশক ও অভিনয়শিল্পী। যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। বলা হয়ে থাকে তাঁর প্রচেষ্টায় দেশের ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প পুনরায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। আজ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে একক আবৃত্তি সন্ধ্যা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি করবেন মিলন কান্তি দে। এ প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আবৃত্তি সন্ধ্যা আবৃত্তি করবেন অনুভূতি কেমন? মিলন কান্তি দে : মূলত আবৃত্তি দিয়েই আমার ক্যারিয়ার শুরু। সেটা ১৯৬৫ সালে। এর যাত্রায় অভিনয় করতে গিয়ে বুঝতে পারি অভিনয়ের পূর্ব শর্ত আবৃত্তি। আমার এই দীর্ঘ অভিনয় জীবনে আবৃত্তি নিয়ে আমার দর্শন হচ্ছে আবৃত্তি মানুষকে সুন্দর করে মহত করে, আবৃত্তির মাধ্যমে মানুষকে সহজে আপন করা যায়। অশুভ শক্তিকে আবৃত্তি দিয়ে মোকাবেলা করা যায়। আবৃত্তি উৎকৃষ্ট শিল্প মাধ্যম। সুতরাং একক আবৃত্তি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে পারব ভেবে ভাল লাগছে। আশা করছি উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের ভাল লাগবে। আবৃত্তি উপলক্ষে কোন আনুষ্ঠানিকতা থাকছে কি? মিলন কান্তি দে : অবশ্যই। আবৃত্তি উপলক্ষে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মঞ্চ সারথি আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা করবেন আইটিআইয়ের সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। বিশেষ অতিথি থাকবেন সাবেক সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস। আলোচনা করবেন শিল্পকলা একাডেমির মহা-পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আবৃত্তির পর এ বিষয়ে আলোচনা করবেন ড. ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, হাসান আরিফ, মাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে কতগুলো কবিতা আবৃত্তি করবেন? মিলন কান্তি দে : আমার আবৃত্তি সন্ধ্যার নাম রেখেছি রবীন্দ্রনাথের কবিতা অবলম্বনে সেটা হলো ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তরতর হে’। আমি জনপ্রিয় কবির বিভিন্ন কবিতার ১৫৭৫ লাইন মুখস্থ আবৃত্তি করব। এর মধ্যে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ’, রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’, ‘দেবতার গ্রাস’, ‘সামান্য ক্ষতি’, কাজী নজরুলের ‘বিদ্রোহী’, ‘মানুষ’, ‘খেয়া পাড়ের তরণি’, জীবনানন্দ দাসের ‘রূপসী বাংলা’, ‘বনলতা সেন’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ ‘উদ্যোগ’, শামসুর রাহমানের ‘অভিশাপ দিচ্ছি’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরিচয়’, ‘নুরুলদিনের সারা জীবন’, কাব্যনাট্যের প্রস্তাবনা ‘নীলক্ষা আকাশ নীল’, নির্মলেন্দু গুণের ‘আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি’ প্রভৃতি। আবৃত্তি চর্চার ধারা এবং আঙ্গিক আপনার আবৃত্তিতে কতটা প্রতিফলিত হবে বলে মনে করেন? মিলন কান্তি দে : যাত্রায় অভিনয়ের বাইরেও আমি নিয়মিতভাবে আবৃত্তি চর্চা করে থাকি। তাছাড়া এক সময়ের জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী প্রয়াত শক্তিমান অভিনেতা গোলাম মোস্তফার আবৃত্তি আমি শুনেছি। চর্চা করেছি। এছাড়া বর্তমান সময়ের প্রতিষ্ঠিত আবৃত্তি শিল্পীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। জানা শোনা আছে। তাদের আবৃত্তি নিয়মিত শুনি। চর্চা করি, আবৃৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করি। আমি মনে করি আমার আবৃত্তির মধ্যে সব বৈশিষ্টই বিরাজমান থাকবে। তবে দুএকটা কবিতা আবৃত্তি অভিনয়ও হয়ে যেতে পারে। যেহেতু এটা আমার প্রথম একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান সেহেতু এই অনুষ্ঠানটি আমার জন্য অগ্নী পরীক্ষা। বর্তমান সময়ে যাত্রাশিল্পের অবস্থা কেমন? মিলন কান্তি দে : দুর্গাপূজার আগে নতুন মৌসুমে ঈদের যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রাশিল্পের নীতিমালার আলোকে ৭০-৭২টি দল নিবন্ধন করেছে। আরও অনেক আছে নিবন্ধন করেনি। যাত্রাশিল্পের সঙ্কট লেগেই আছে। পেশাদারিত্ব সঙ্কট রয়েছে। তবে আশারা কথা বর্তমান সরকার যাত্রাপালা নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। প্রশাসনিক ঘাপলা থাকায় অনেক স্থানেই যাত্রাপালা চর্চার ব্যহত হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিগত সময়ে যাত্রাশিল্পীদের দুঃসময় গেছে। যাত্রা শিল্পের সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা জাতীয় যাত্রামঞ্চের দাবি জানিয়েছে আসছি। যাত্রাশিল্পে অশ্লীলতা কতটা দূর হয়েছে বলে মনে করেন? মিলন কান্তি দে : দেশের কোথাও কোথাও যাত্রাপালায় অশ্লীলতার অভিযোগ আসে। তবে সবাই তো অশ্লীলতা করে না। যারা করে তাদের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্স গঠন করে শাস্তি দেয়ার দাবি জানাই। এছাড়া অতীতে যাত্রাশিল্পের প্রতি সরকারের নেতিবাচক দৃষ্টির কারণে এ শিল্পের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছিল। এ সরকারের আমলে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। পেশাগত অনিশ্চয়তাও কিছুটা কেটেছে। এর পরেও কিছু অসাধু যাত্রাদল মালিক ও নায়েক পার্টিরা যাত্রার নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অশ্লীল নৃত্যগীত চালিয়েছে। এগুলো বন্ধের জন্য বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমরা কয়েক দফা মানববন্ধনও এবং জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। আস্তে আস্তে এ সঙ্কট কেটে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। -সাজু আহমেদ
×