ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশকে সমীহ করছেন রবিশাস্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৯ জুন ২০১৫

বাংলাদেশকে সমীহ করছেন রবিশাস্ত্রী

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ একদিন আগেই আলোড়ন তুলে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিটি পদক্ষেপে বাংলাদেশকে নত মস্তকে সম্মান করেছেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর শক্তিধর দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। এবার ক্রিকেট দল নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন রবিশাস্ত্রী। টাইগারদের প্রতি সমীহ ঝরেছে ভারতের অন্তর্বর্তীকালীন কোচের কণ্ঠেও। বুধবার ফতুল্লা টেস্ট দিয়ে শুরু বন্ধুপ্রতিম দু’দেশের মধ্যকার বহুল আলোচিত দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। এরপর মিরপুরে রয়েছে তিনটি ওয়ানডে। ‘আমরা বিপক্ষ প্রতিটি দলকেই সম্মান করি। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বেশ উন্নতি করেছে। দলটিতে একাধিক বিশ্বমানের ক্রিকেটার রয়েছে। আমাদের তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। তবে জয় ছাড়া আর কিছুই ভাবছি না। চলতি মৌসুমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ রয়েছে। বাংলাদেশ সফরে সাফল্য দিয়েই সেটি শুরু করতে চাই।’ বলেন শাস্ত্রী। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। তবে সাবেক ভারতীয় অলরাউন্ডারের পরের বাক্য সুবিধার নয়! তাতে বরং বাংলাদেশের প্রতি সূক্ষ্ম একটা নেতিবাচক ধারাণাই ফুটে ওঠে। শাস্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ সফরে তাদের জন্য প্রধান কোচের দরকার নেই। কিছুটা যুক্তির অবতারণা করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এ রকম একটা হাই-প্রোফাইল দল, যেখানে ক্রিকেটাররা সবাই সুপারস্টার-রকস্টার, তাদের সামলানোটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এমন একজন অভিভাবক প্রয়োজন যিনি প্রথমে খেলোয়াড়দের সামলাতে পারবেন। প্রথমে এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই দলে দলটার বড় কোন কোচের প্রয়োজন নেই; বরং এমন একজনকে প্রয়োজন, যিনি কঠিন সময়ে সব কিছু ঠিকঠাক সামলাতে পারবেন!’ বিশ্বকাপের আগেই ডানকান ফ্লেচারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই থেকে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ক্রিকেট দলটির প্রধান কোপের পদনি খালি পড়ে আছে। এ নিয়ে নাটকীয়তা কম হয়নি। শোনা যাচ্ছিল সৌরভ গাঙ্গুলীকে দায়িত্ব দেয়া হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অপর দুই গ্রেট শচীন টেন্ডুলকর ও ভিভি এস লক্ষ্মণের সঙ্গে তাকে নিয়ে গঠন করা হয় পরামর্শক কমিটি। আর বাংলাদেশ সফরের জন্য অস্থায়ীভাবে কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় ৫৩ বছর বয়সী শাস্ত্রীকে, যিনি এতদিন ‘ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। বাংলাদেশে অবশ্য একই সঙ্গে দুটি দায়িত্বেই থাকছেন তিনি। এখন কেবল বাংলাদেশ সফর নিয়েই ভাবছেন শাস্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা মাত্র কয়েকদিনের ট্যুর। তাই আমি আর কিছু নিয়ে আগাম ভাবছি না। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভাল করাটাই প্রথম কাজ। গত আট মাস ধরে যেটা করে আসছি, ভাল খেলার সেই ধারাটা ধরে রাখার দিকেই দৃষ্টি দিচ্ছি।’ অবশ্য দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার বিষয়টা উড়িয়েও দেননি। তিনি আরও যোগ করেন, ‘তারা (বোর্ড-বিসিসিআই) আমার পরিকল্পনা নিয়ে কি ভাবছে, তা বোঝার জন্য সফর শেষে বসব। আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। তবে একটা বিষয় আবারও জোর দিয়ে বলব, আমাদের এই দলের জন্য কোচের প্রয়োজন নেই।’ সফরে ভারতের ব্যাটিং ও বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দুই সাবেক সঞ্জয় বাঙ্গার ও ভরত অরুণ। ফিল্ডিংয়ে আর শ্রীধর। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক বিশ্বরূপ দে। এই তিন পরিশ্রমী কোচ নিয়ে দলকে ভালমতোই পরিচালনা করতে পারবেন বলে আশাবাদী শাস্ত্রী। অন্যদিকে নতুন অধিনায়ক বিরাট কোহলি বলেছেন, টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। ফতুল্লায় জয় দিয়েই সেটি শুরু করতে চান তারা। ‘এমন নয় যে আমাদের সারাজীবনই শিখতে হবে। অনেক শিখেছি, সময় হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর। অনেক খেলেছি, টেস্ট জয়ের এটাই সময়। দীর্ঘ পরিসরেও দক্ষতা মেলে ধরার সময় হয়েছে। টেস্টে ফল পেতে চাই, সেটা বাংলাদেশ সফর দিয়েই।’ উল্লেখ্য, ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় টানা দুই সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয় মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। ব্যর্থতার ধারা অব্যাহত চলতি মৌসুমেও। গত বছর জুলাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল ক্রিকেটের মোড়লরা। লর্ডসের সেই ম্যাচের পর খেলা সাত ম্যাচে জয়হীন ভারত। এবারের বিশ্বকাপে ঠিক আগে সিরিজ হারে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ওই সিরিজেই টেস্ট থেকে অবসর নেন ধোনি। এবার সাদা পোশাকের লম্বা ব্যর্থতা ঘোচাতে মরিয়া কোহলি। টেস্ট দলে প্রত্যাবর্তন হওয়া হরভজন সিং আবার নতুন অধিনায়কের প্রশংসা করেছেন। অভিজ্ঞ স্পিনার বলেন, ‘এটা ২০১৫ সাল। ক্রিকেট এখন আরও গতীময় খেলা। কোহলির আক্রমণাত্মক মেজাজ আমার পছন্দ। ও ক্লোজ ফিল্ডিং সাজাতে পছন্দ করে, সেটা প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা বাংলাদেশ যে দলই হোক। দলের সবারই ওর প্রতি অন্যরকম একটা সমীহ আছে। পারফর্মেন্স দিয়ে সেটি ও আদায় করে নিয়েছে। টেস্টে ভারতকে ছন্দে ফেরাতে কোহলিই উপযুক্ত ব্যক্তি।’
×