ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গণসঙ্গীতের অনন্য উৎসব রাঙ্গামাটিতে

চলো সেতু গড়ি মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে...

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৯ জুন ২০১৫

চলো সেতু গড়ি মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে...

মোরসালিন মিজান ও মোহাম্মদ আলী আশ্চর্য সুন্দর রাঙ্গমাটি। পাহাড়ী এই জনপদের প্রকৃতি সুন্দর। মানুষগুলোও। তবে শুধু সুন্দর নয়, এখানে সুন্দরের সঙ্গে গলাগলি করে থাকে সংগ্রাম। বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় পার্বত্য এলাকার মানুষকে। নিজেদের ন্যায্য অধিকারের জন্য লড়তে হয়। সে লড়াই ফুটে ওঠে গানেও। তবে খুব বেশি সামনে আসে না। সোমবার রাঙ্গামাটি নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গানগুলো গাইলেন স্থানীয় শিল্পীরা। বাংলা গান হলো। হলো আদিবাসী বিভিন্ন জাতি সত্ত্বার ভাষার গান। সব গান মিলে অনন্য সুন্দর গণসঙ্গীত উৎসব। রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো এই উৎসব আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ। বিকেলে দুই দিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। তবে আয়োজনটি ঘিরে ছিল ভরপুর আবেগ। উৎসব উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব ফকির সিরাজ। উৎসবের আহ্বায়ক সুনীল কান্তি দের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব কালায়ন চাকমা। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দেবাশীষ রায় বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় পাহাড়ী আদীবাসীদের কৃষ্টি সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন সময় রাঙ্গামাটিতে গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন অনেক বড় ঘটনা। তিনি বলেন, এ উৎসবের মাধ্যমে আমাদের অধিকার বঞ্চিতদের কথা ওঠে আসবে। একইসঙ্গে ঢাকা ও এ অঞ্চলের গণসঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে দৃঢ় হবে মৈত্রীর বন্ধন। উৎসবটিকে শহরে নয় শুধু, গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আয়োজনটি রাঙ্গামাটিতে প্রথম হওয়ায় গোলাম কুদ্দুছের বক্তব্যে ছিল গণসঙ্গীতের ব্যাখ্যা। তিনি বলেন, গণমানুষের অধিকারের কথা বলে যে গান তাই গণসঙ্গীত। ভারতীয় গণনাট্য সংস্থার গণসঙ্গীতের ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন তিনি। সে ব্যাখ্যা অনুযায়ী, গণসঙ্গীত শ্রমিকের অধিকারের কথা বলে। গোলাম কুদ্দুছ বলেনÑ আমি মনে করি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গণসঙ্গীতের ব্যাখ্যা বদলাবে। তবে মর্মার্থ থাকবে এক। মানুষের অধিকারের কথা বলবে গণসঙ্গীত। নাতিদীর্ঘ আলোচনা শেষে শুরু হয় মূল উৎসব। এবার শিল্পীদের কণ্ঠই বলে দেয়, গণসঙ্গীত কী। কেমন হয়। পরিবেশনা শুরু হয় সুর নিকেতন শিল্পগোষ্ঠীর গণসঙ্গীত দিয়ে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের সময় খুব গাওয়া একটি গান গেয়ে শোনায়। বেশ কয়েকটি বাংলা গানের পর মঞ্চে ওঠেন চাকমা শিল্পীরা। তাঁদের গানের কথাগুলো এ রকমÑ রেত্তো জনম্মু ন’ থেব/ বেন্যেমায় বেলান উধিবো...। গানের মানেও বাংলায় বলে দিলেন শিল্পীরা। তাঁদের গান বলছিলÑ যত অন্যায় হোক না কেন, নীরবে সইব না। প্রতিবাদ করবো। প্রতিবাদ করতে হবে। খাগড়াছড়ি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কেন্দ্রের শিল্পীরাও চমৎকার নিজস্বতা নিয়ে মঞ্চে ছিল। গানে গানে তারাও মানুষের অধিকারের কথা বলেছে। উৎসবে ঢাকা থেকে যোগ দেয়া বহ্নিশিখার শিল্পীরা গানে গানে সেতু গড়ার ওপর জোর দেয়। শিল্পীরা গানÑ সেতু গড়ি চলো সেতু গড়ি/ মানুষে মানুষে জাতিতে জাতিতে...। দলীয় পরিবেশনার পাশাপাশি ছিল একক পরিবেশনাও। এদিন মঞ্চে অদ্ভুত সুন্দর গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন প্রবীণ শিল্পী কল্পনা লালা। তিনি শ্রোতাদের মুক্তিযুদ্ধের সেই রণাঙ্গনে যেন ফিরিয়ে নিয়ে যান। গেয়ে যানÑ ভয় কী মরণে, মুক্তির মন্দির সোপান তলেসহ বেশ কয়েকটি গান। সব মিলিয়ে চমৎকার একটি গণসঙ্গীতের দিন। অসাধারণ উৎসব। দুই দিনব্যাপী উৎসব
×