ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৮ কোটি টাকার প্রকল্প, কাল একনেকে উঠছে

পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী রক্ষার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৮ জুন ২০১৫

পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী রক্ষার উদ্যোগ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী ও শিলাইদহ ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য পদ্মা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামীকাল মঙ্গলবার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এসএম শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী এবং শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদসহ বিশ্বকবির স্মৃতি বিজরিত আশপাশের এলাকার কৃষি জমি, সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে, যা পরোক্ষভাবে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মা বাংলাদেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী। এ নদীর গতিপ্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য খুবই সক্রিয়। সারা বছর নদীর স্রোতের গতি এবং পলি প্রবাহ অতিমাত্রায় পরিবর্তিত হয়। ফলে ভাঙ্গা-গড়া, নদীর গতিপথ, পরিবর্তন এবং চর পড়া এ নদীতে স্বাভাবিক ঘটনা। নদীর পারের মাটি সাধারণত আলগা চিকন চিকন বালুযুক্ত, যা সহজেই বিযুক্ত হয়ে যায়। বলা হয়েছে, এক সময় নদীর মূল প্রবাহ পাবনা জেলার ধার ঘেঁষে ছিল, গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় তা বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৫ বছরে অব্যাহত নদী ভাঙ্গনে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদ এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে, যা যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। শিলাইদহ কুঠিবাড়ী থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা। প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে গড়ে ৫০ মিটার বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীর সরে যাওয়ায় প্রতিবছর শত শত বাড়িঘর, গাছপালা, স্কুল, কলেজ ও মসজিদসহ অন্যান্য স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মার ভাঙ্গন থেকে কুঠিবাড়ী রক্ষায় নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৪৯তম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে শিলাইদহ কুঠিবাড়ী এলাকায় শান্তি নিকেতনের আদলে একটি রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। সংস্কৃতিমন্ত্রী শিলাইদহ কুঠিবাড়ী রক্ষায় ২০১০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে একটি ডিও লেটার দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তখনকার মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ২০১০ সালের ১ অক্টোবর ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে কুঠিবাড়ী রক্ষার জন্য অতিদ্রুত প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রকৌশলীদের নির্দেশ প্রদান করেন। ওই নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিকে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৭২০ মিটার পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থবছর ভিত্তিক বরাদ্দের চাহিদা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৯ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭৪ কোটি ৫৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৫ কোটি ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
×