ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর ফাঁকির সংস্কৃতি

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৮ জুন ২০১৫

কর ফাঁকির সংস্কৃতি

কর না দেয়ার সংস্কৃতি এখনও দেশে রয়ে গেছে। কারও কারও ভাবখানা এমনÑ আমি সারাবছর খেটেখুটে এত উপার্জন করলাম, সেখান থেকে ভাগ দেব কেন? না, ভাগ কেউ চাচ্ছে না, এটা রাষ্ট্রের ন্যায্য প্রাপ্য। আমাদের এখানে যার যত বেশি কর দেয়ার কথা, সে কর ফাঁকির রাস্তা খোঁজে তত বেশি। অর্থশাস্ত্রে অপ্রদর্শিত উপার্জন বলে একটা টার্ম চালু আছে। সোজা কথায়Ñ কালো টাকা। নীতিবানরা বলবেন অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ। সেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ মেলে বাজেটে। যাহোক, প্রতিবছরই জুন মাসে জাতীয় বাজেট ঘোষণার পর চারদিকে নানা কথার ফুলঝুরি ছোটে। দিকে দিকে বাজেট বিশেষজ্ঞরা আবির্ভূত হন। যিনি বা যারা বোঝেন তার বা তাদের ব্যয় বাড়বে কিংবা এভাবেও বলা যায় মুনাফা কমবে, তিনি বা তারা গোস্বা করেন। সামগ্রিকভাবে নিজের অবস্থান বিবেচনা করেন না। এ দলে এবার পয়লা নম্বরে আছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। ঘোষিত বাজেটে এ খাতের রফতানিতে উৎসে কর হার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পোশাকশিল্প মালিকরা। পোশাক ও বস্ত্র খাতের চার সংগঠন বাজেট ঘোষণার পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে উৎসে কর হার কমানোর দাবি জানিয়েছে। তাদের ভাষায় ‘বাজেট বস্ত্র খাতবান্ধব হয়নি।’ পোশাকশিল্প দারুণ বিকাশ লাভ করেছে গত কয়েক দশকে। শুধু শ্রমিক বাদে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সব শ্রেণীর লোকেরই জীবনমান উন্নত হয়েছে। পোশাক খাতের জন্য রয়েছে সরকারের নানা ধরনের সুবিধা। কাঁচামাল আনা থেকে শুরু করে রফতানি পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়েই এই খাতকে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বার্থে পোশাক খাত যা চায়, ঠিক তা-ই পায়। উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি পোশাক কারখানার মালিকরাই সবচেয়ে বেশি কর সুবিধা পেয়ে থাকেন। এত পেয়েও তারা অসন্তুষ্ট। তাদের স্মরণে থাকা সমীচীন দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নত এবং জীবন ধারণের উপযোগী মজুরি দিয়ে মালিকদের এই দায়বদ্ধতা দেখানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বাজেট প্রস্তাবনায় এই খাতে যে নগণ্য অঙ্কের কর যুক্ত হয়েছে, তার বিরোধিতা একেবারেই অনুচিত। যে দেশ ও মানুষের কারণে বিপুল বিলাসিতার সুযোগ তারা পেয়েছেন, সে দেশ ও মানুষের জন্যে মুনাফার অতি সামান্য অংশ ছাড় দেয়ার মানসিকতা কেন তাদের থাকবে না! আসা যাক, মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহারের ওপর ৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক ধার্যের প্রসঙ্গে। এটা অস্বীকার করে লাভ নেই যে আমাদের দেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলার একটা সংস্কৃতি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। মোবাইল ফোন এখন কোটি কোটি মানুষের হাতের মুঠোয়। খুব বেশি আগের কথা তো নয় যখন এদেশে মোবাইল ফোনের চল ছিল না! তখন মানুষ ল্যান্ড ফোনেই কথা বলত। মোবাইল ফোন আসায় মানুষের জীবন ও জীবিকায় অনেক স্বস্তি এসেছে বটে। কিন্তু একই সঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে যেন যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যম। তরুণ প্রজন্মের সামনে প্রলোভন দেয়া হয়েছে নামমাত্র খরচে রাতভর আড্ডা দেয়ার। এটি শিক্ষার্থীর মেধা ও স্বাস্থ্যের ওপর কত বড় হুমকি তা কেউ ভেবে দেখেনি। সম্পূরক শুল্কের কারণে এখন মোবাইল ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হলে সেটা ইতিবাচকই হবে। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণ চাইলে আলোচিত এ দুটি আরোপিত শুল্ক ও করের প্রস্তাব সমর্থন না করার কিছু নেই।
×