ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতীয় বিনিয়োগ আনতে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৭ জুন ২০১৫

ভারতীয় বিনিয়োগ আনতে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে

এম শাহজাহান ॥ বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বিনিয়োগ আকর্ষণে আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট পাসের পর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। যথাযথ অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা গেলে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে ৪০ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে দেশের ১ কোটি মানুষের। এ লক্ষ্যে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক্ষেত্রে ভারত, চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্র মতে, জমির অভাবে অনেক বড় ধরনের বিনিয়োগ উদ্যোগ যা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভারত থেকে পরিলক্ষিত হয় তা বাস্তব রূপ পায় না। এই সঙ্কট উত্তরণে ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া চীন ও জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য দুইটি অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষিত রয়েছে। এবার ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে ভারত সরকার ও সেই দেশের বিনিয়োগকারীদেরও যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল নীতি ২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন-২০১০ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল বিধিমালা-২০১৪ সংশোধনের কাজ চলছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় ঘোষণা করেছেন, দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন, রফতানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করতে সম্ভাবনাময় এলাকাসমূহে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারী-বেসরকারী মিলিয়ে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে অনুমোদিত সিরাজগঞ্জ, মংলা, মিরসরাই, আনোয়ারা ও শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পরবর্তীকালে আরও ২৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভারতীয় বিনিয়োগ আকর্ষণে আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সরকার ভূমি, বিদ্যুত, গ্যাস ও যোগাযোগ অবকাঠামো যোগানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। জানা গেছে, ভারতের পাশাপাশি কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও থাইল্যান্ডসহ আশিয়ানভুক্ত দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্যও আলাদাভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর যত্রতত্র শিল্প কারখানা স্থাপন করার সুযোগ দেবে না সরকার; তখন বিনিয়োগকারীদের এসব অঞ্চলেই বিনিয়োগ করতে হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আগাম ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় দেশী বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ভারত, চীন ও জাপানের বিনিয়োগকারীদের কথা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে সরকার। কারণ, ইতোপূর্বে জাপান ও চীন সরকার এবং বিদেশী সহায়তাকারী সংস্থাগুলো সরকারীভাবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে আগ্রহের কথা জানিয়েছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর চীন ও জাপান সফরের সময় দুই দেশের সরকারের উচ্চপর্যায় থেকেও একই ধরনের আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে। আর এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে দেশটির বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভারতের বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে নতুন করে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য চুক্তির নবায়নে নতুন যেসব বিষয় আনা হয়েছে সেখানেও দু’দেশের বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয়া হয়েছে। দেশে ভারতীয় বিনিয়োগ ॥ প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ার পরও ভারতীয় বিনিয়োগ দেশে সেই অর্থে বাড়েনি। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানে ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, একক ও যৌথ মালিকানায় ভারতীয় প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২৬টি কৃষিভিত্তিক শিল্পে, খাদ্য শিল্পে ৬টি, টেক্সটাইল শিল্পে ৩৫টি, প্রিন্টিং, পাবলিশিং ও প্যাকেজিংয়ে ৭টি, ট্যানারি ও রাবারে ৩টি, রাসায়নিক খাতে ৫৪টি, গ্যাস ও সিরামিকসে ৪টি, প্রকৌশল খাতে ৩৬টি এবং সেবা খাতে ৫৯টি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ এসেছে। যদিও ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপ, টাটা, বিড়লা ও মিত্তাল ব্যবসা সম্প্রসারণে অন্য দেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। অথচ পাশের প্রতিবেশী বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের চিত্র সন্তোষজনক নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভারতীয় মালিকানাধীন ৬২টি প্রতিষ্ঠান মাত্র ২১ কোটি ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানায় ১৬৮টি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৮ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ভারতের ২৩০টি প্রকল্পে মোট বিনিয়োগ মাত্র ৫৯ কোটি ডলার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার এখনই সময়। এজন্য বাংলাদেশে অনেক বেশি ভারতীয় বিনিয়োগের প্রয়োজন। এটি হলে বৈদেশিক মুদ্রা লেনেদের ভারসাম্য রক্ষায় সহজ হবে। তিনি বলেন, শূন্য শতাংশ শুল্ক সুবিধায় ভারতে পণ্য রফতানির সুযোগ পাওয়া গেছে। এ সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের।
×