ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি সমস্যা শীঘ্রই সমাধান হবে- মোদি;###;সন্ত্রাসবাদে জিরো টলারেন্স ;###;১৯ চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতাসহ ৫৪ নদীর পানি ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন যুগে ॥ শেখ হাসিনা ॥ ঐতিহাসিক মুহূর্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৭ জুন ২০১৫

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন যুগে ॥  শেখ হাসিনা ॥ ঐতিহাসিক মুহূর্ত

তৌহিদুর রহমান ॥ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে বাংলাদেশ-ভারতের ঐকমত্য, সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময়, দুই দেশ ৫৪টি নদীর পানি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। কর্মব্যস্ততায় দিন শেষে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, সংস্কৃতি বিকাশ ইত্যাদি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমরা সীমান্ত সমস্যার সমাধান করেছি। সম্পাদিত চুক্তি ও প্রটোকলের বাইরে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। আশা করি খুব শীঘ্রই এই সমস্যা সমাধান হবে। ভারতের জনগণ অতীতে বাংলাদেশের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে ঐতিহাসিক মুহূর্ত উল্লেখ করে বলেন, আমরা যৌথভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখা এবং এ বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়ে আমরা অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুইদিনের জন্য ঢাকা সফরে শনিবার সকাল পৌনে দশটায় ঢাকা অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দর থেকে নরেন্দ্র মোদি সরাসরি চলে যান সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। তারপর তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। নরেন্দ্র মোদি বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকের পর সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে দুই পক্ষের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। সেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দুটি নতুন রুটে বাস চলাচল উদ্বোধন করে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সঙ্গে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময় হয়। রাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ের গ্র্যান্ড বল রুমে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মানে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভোজসভার আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই ভোজসভায় অংশ নেন। সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময় ॥ দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে ছিটমহল বিনিময়ে স্থলসীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় করেছে বাংলাদেশ ও ভারত, যার মাধ্যমে দশকের পর দশক অবরুদ্ধ জীবন কাটানো অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের মুক্তির পথ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলল। শনিবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা কক্ষে এই দলিল বিনিময়ের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর নিজ নিজ দেশের পক্ষে এসব দলিল হস্তান্তর করেন। এ সময় ওই চুক্তি বাস্তবায়নের কার্যপদ্ধতি সম্বলিত পত্রও বিনিময় করা হয়। দলিল বিনিময়ের এই মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ এক টুইটে বলেছেন, এই মাহেন্দ্রক্ষণটিকে শুধু ঐতিহাসিক বললেও কম বলা হয়। গত মে মাসে পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল নামে পরিচিতি পাওয়া সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ার পর তাতে অনুসমর্থন জানায় ভারতের মন্ত্রিসভা, স্বাক্ষর করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এই সমস্যার সমাধানের পরই বাংলাদেশ সফরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন মোদি। উত্তরাধিকার সূত্রে ভারতের স্থলসীমান্ত নিয়ে এই সমস্যাটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবিভক্ত ভারতের অংশ থেকে পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। এর আওতায় ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের দিক থেকে সব প্রক্রিয়া সারা হলেও তা আটকে ছিল ভারতের দিকে। কারণ ভূমি ছাড়তে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন। এর মধ্যে ২০১১ সালে ভারতে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় স্থলসীমান্ত সমস্যার সমাধানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল সই হয়। এরপর কংগ্রেস সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিলেও তার মধ্যেই নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল হয়ে যায়। ক্ষমতায় আসে বিজেপি, প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। তবে কংগ্রেস সরকারের সেই উদ্যোগকে সফল করতে আরও সচেষ্ট ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি জানানো আঞ্চলিক দলগুলোকে মানান তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, এতে রয়েছে ৩৭ হাজার মানুষের বাস। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের বাসিন্দা ১৪ হাজার। ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে শুমারিতে এই তথ্য পাওয়া যায়। ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের আয়তন মোট ৭ হাজার ১১০ একর। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের আয়তন ১৭ হাজার ১৬০ একর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলে আসছেন, চুক্তি কার্যকর হলে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (৭১১০ একর জমি) ভারতের অংশ হয়ে যাবে। আর ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭১৬০ একর জমি) বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাবে। ছিটমহল বিনিময়ের ফলে ভারত যে প্রায় ১০ হাজার একর জমি বেশি হারাবে, সে জন্য কোন ক্ষতিপূরণ পাবে না বলে প্রটোকলে উল্লেখ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলায় ৫৯টি, পঞ্চগড় জেলায় ৩৬টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি, নীলফামারী জেলায় ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। প্রটোকলের আওতায় অপদখলীয় ভূমি নিয়ে বিরোধের অবসানও ঘটবে। এতে ভারত অপদখলীয় ২৭৭৭ একর জমির মালিকানা পাবে। আর ২২৬৭ একর জমির উপর বাংলাদেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। আর চুক্তি ও প্রটোকল অনুযায়ী ছিটমহলবাসী তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নাগরিকত্ব বেছে নিতে পারবেন। ১৯ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব চুক্তি মধ্যে রয়েছেÑ কলকাতা-ঢাকা-আগরতলার মধ্যে সরাসরি বাসসেবা চালু, ঢাকা-শিলং বাসসেবা চালু, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি ও নবায়ন, নৌ ট্রানজিট প্রটোকলের মেয়াদ বৃদ্ধি ও নবায়ন, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, মানবপাচার রোধে চুক্তি, বিদ্যুত সহযোগিতা চুক্তি, দুই শ’ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চুক্তি, ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অঞ্চল সমঝোতা চুক্তি, পণ্য রফতানিতে দু’দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে চুক্তি, ভারতে ব্যান্ড উইডথ বিক্রি, সন্ত্রাস দমন বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি ইত্যাদি। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের কোস্টগার্ডের মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা, মুদ্রা জালিয়াতি প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সার্কের জন্য ভারতের অনুদান নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দুই দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নয়াদিল্লীর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইন্ডিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা কক্ষে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর এবং বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ দু’দেশের কর্মকর্তারা এসব চুক্তিতে সই করেন। মোদি-মমতা বৈঠক ॥ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে যাওয়ার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিলেন নরেন্দ্র মোদি। শনিবার দুপুরে সোনারগাঁও হোটেলে এই বৈঠক শেষে দু’জন একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে রওনা হন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি শনিবার ঢাকায় নামলেও একদিন আগেই এসে পৌঁছান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মতভেদের মধ্যে মমতা ওঠেন আলাদাভাবে রেডিসন হোটেলে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে জটিলতার মধ্যে মোদির সঙ্গে মমতার কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে তিস্তা চুক্তি যে এই দফায় হচ্ছে না তা আগেই দুই তরফে জানানো হয়েছে। মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে মমতা এক টুইটে বলেছেন, স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে আমার পক্ষ থেকে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের দলিল আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের কথা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকও সই হবে বৈঠকে। ১৯৭৪ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকল কার্যকরে সব বাধা দূর হওয়ার পরই ঢাকা এলেন নরেন্দ্র মোদি। সকালে ঢাকায় নামার পর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের পর হোটেলে ফেরেন মোদি। সেখানেই যান মমতা। চার বছর আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গীর তালিকা থেকে শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন মমতা। সব প্রস্তুতি থাকার পরও তাঁর আপত্তির কারণে তখন আটকে যায় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের চুক্তি সই, যা এখনও হয়নি। সাবেক কংগ্রেস নেত্রী মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস এক সময়ে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধলেও এখন তাদের সম্পর্ক অনেকটাই সাপে-নেউলে। বিজেপি নেতা মোদির কঠোর সমালোচক তিনি। এসব মিলিয়ে মমতা ঢাকা সফরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আসছেন না বলে ভারতের গণমাধ্যমে কয়েক দিন আগেই খবর প্রকাশ হয়েছিল। ‘বাংলাদেশ সফরে মোদি তিস্তা চুক্তি নিয়ে কোন কথা বলবেন না বলে আশ্বাস দিয়ে মমতাকে ঢাকা সফরে রাজি করিয়েছেন’ বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়। ২০১১ সালে মনমোহনের সফর এড়িয়ে গেলেও এই বছরই বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তখন বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান তিনি। তিস্তা চুক্তির জট খোলার আশা ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হলেও এ বিষয়ে মমতার স্পষ্ট বক্তব্য এখনও আসেনি। তবে ভবিষ্যতে এই চুক্তি হবে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সকালে সাংবাদিকদের বলেন, তাঁরা এটা নিয়ে কাজ করছেন এবং সবকিছু রাতারাতি হয় না। তিনি বলেন, তিস্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এই আলোচনা চলছে কূটনৈতিক পর্যায়ে। আজকের কর্মসূচী ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ রবিবার সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি রামকৃষ্ণ মিশন পরিদর্শনে যাবেন। দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করবেন। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন তিনি। রাত ৮টার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ত্যাগ করবেন। স্মারক বিনিময় ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরস্পরের মধ্যে বিভিন্ন স্মারক বিনিময় করেছেন। প্রথমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের একটি রেকর্ড, স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে ভারতের লোকসভায় বিতর্কের একটি ডিভিডি, মংলা বন্দর ট্রাস্টের জন্য একটি ড্রেজারের প্রতিকৃতি, ২৪ অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশনসের একটি মডেল এবং আইএনএস বিক্রান্ত-এর স্মারক শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের একটি দলিলের ফটোগ্রাফ, ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের একটি মানচিত্র এবং রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্পের একটি মডেল নরেন্দ্র মোদির কাছে হস্তান্তর করেন।
×