ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লে.জে. মাহবুব-রইস ফোনালাপ ফাঁস

খালেদা ’১৯ সালেও ক্ষমতায় আসতে পারবেন না

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৬ জুন ২০১৫

খালেদা ’১৯ সালেও ক্ষমতায় আসতে পারবেন না

বিভাষ বাড়ৈ ॥ ফাঁস হয়ে গেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান ও বিএনপি নেতা রইস উদ্দিনের টেলিফোন আলাপ। যে আলাপে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে শীর্ষ নেতাদের ক্ষোভ আর অসন্তোষের চিত্র। সেখানে কথা হয় খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নানান দুর্বলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে। উঠে আসে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাত না করার ঘটনা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাত পেতে খালেদা জিয়ার উদ্বেগ, জামায়াত তোষণ রাজনীতি করতে গিয়ে বিএনপির সঙ্কটসহ নানা প্রসঙ্গ। বিএনপির দু’নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বসহ নানা কর্মকা-ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ওনার (খালেদার জিয়ার) সঙ্গে মোদি দেখা করবে না।’ ‘খালেদা জিয়াকে দিয়ে আর হবে না। খালেদা জিয়া ২০১৯ সালেও ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।’ ‘ভাল মানুষকে খালেদা জিয়া চিনতেই চান না। ওই খানে তেলবাজি, তেল পার্টি।’ বৃহস্পতিবার রাতেই বিএনপি নেতাদের এই গোপন কথোপকথন বাংলা লিকস নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল প্রকাশ করে, যা নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো রাজনৈতিক মহলে। বিএনপিতে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। টেলিফোন আলাপটিতে দেখা যায়, দলটির মাঝারি পর্যায়ের এক নেতা রইসকে নিজেই কল করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান। লে. জে. (অব.) মাহবুব বলেন, হ্যালো রইস? রইস সাড়া দিয়ে বলেন, আসসালামু আলাইকুম স্যার, কেমন আছেন স্যার? লে. জে. (অব) মাহবুব : বল তো কেমন আছি? রইস : গরমের মধ্যে কেমন থাকবেন স্যার। যে গরম পড়ছে...। লে. জে. (অব) মাহবুব : হ্যাঁ এইটা ভাল কথা বলছস। রইস : আর আমাদের রাজনীতি যে ঠা-া হয়ে গেছে আর কেমনে ভাল থাকবেন। লে. জে. (অব) মাহবুব : রাজনীতি ঠা-া, প্রকৃতি গরম। রইস : আমাদের এখন মোদি আসতেছে, হাসিনাকে মোদি, কালকে যে সুর শুনলাম হাসান মাহমুদ, সুরঞ্জিত বলছে, বিএনপির সাথে দেখা হবে না মোদির মনে হয়। মোদির সঙ্গে দেখা হবে কি স্যার? লে. জে. (অব) মাহবুব : আমি তোমাকে বলি আজকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর পড়বা। সাউথ ব্লক মানে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস, আর সেনাবাহিনীর অফিস, নৌবাহিনীর অফিস, বিমানবাহিনীর অফিস। ওটা হচ্ছে ক্যাবিনেট অফিস। ওখানে খবর হচ্ছে যে, বাংলাদেশ-ভারতবর্ষ তাদের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসে এই রকম অপমান কেউ পায় নাই। রইস : ওই যে প্রণব মুখার্জীর সাথে দেখা না করা ওইটা? লে. জে. (অব) মাহবুব : হ্যাঁ, প্রণব মুখার্জী কোন ব্যক্তি ছিলেন না। উনি ছিলেন ১২০ কোটি মানুষের প্রতিনিধি এবং তাদের পতাকা বহন করে তিনি এখানে আসেন এবং তাকে যেভাবে অপমানিত করা হয়েছে এবং ভারতের ইতিহাসে এ রকম অপমানিত কখনও কেউ হয় নাই। কারণ এটা ভারতের জনগণকে অপমান করা হয়েছে। তাদের গণতন্ত্রকে অপমান করা হয়েছে। আরও বলছি, উনি তো (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। তবুও আমরা তাকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি সম্মান দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। উনি সম্মানের মূল্য এভাবে দিলেন। রইস : না না, খালেদা জিয়া যখন ভারতে গেছে তখন তাকে লাল কার্ড দিয়ে সংবর্ধনা দিছে। চীনে দিছে। লে. জে. (অব) মাহবুব : কাগজ পড় না। কাগজ পড়... রইস : পড়ব স্যার। আমি যেখানে আছি...। লে. জে. (অব) মাহবুব : তোমার কথা কি মোদি দেখা করতেছে না রে...। রইস : নাহ, মোদি করবে না তো। এর আগে প্রণব মুখার্জী যখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিল তখন খালেদার বাড়িতে গিয়ে দেখা করে গেছে। লে. জে. (অব) মাহবুব : হ্যাঁ। রইস : তখন তো এটা করল না। খালেদা জিয়ার এই একরোখামিটা ভুল হইছে স্যার। উনি বলে হরতালের মধ্যে আমি যাব না। সে সময় হরতালটা শিথিল করলে কী হতো? দুই নাম্বার কথা, খালেদা জিয়াকে হাসিনা যখন টেলিফোন করছিল ওই দিন উনি হরতালটা উইথড্র করে ভবনে যেয়ে বলে আসত, হয় আপনি পদত্যাগ করুন না হয় এই এই ফর্মুলায় আপনি নির্বাচন করুন। খালেদা জিয়ার কথা হলো জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে আমরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে নামাব। আরে বোকার দল জনগণ, তোদের বুকের রক্ত দিয়ে লাভ কী? জনগণ বোঝে জায়গামতো গিয়ে আমাগো ভুলে যাস। লে. জে. (অব) মাহবুব : ঠিক, ঠিক, ঠিক। রইস : তোরা তো চোর বাটপারকে ভাল করে চিনিস, ভাল লোকদের তো তোরা চিনিস না। লে. জে. (অব.) মাহবুব : তোমাদের বিপদ আছে...। রইস : আমি আপনাকে যেটা বলতেছি খালেদা জিয়া ২০১৯ সালেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। লে. জে. (অব) মাহবুব : না, ’১৯ সালেও এরা ক্ষমতা দেবে না। রইস : ক্ষমতা দেবে না। ১৯ সালে যে কাজটা করবে, ভারতের ছত্রছায়ায় আমাদেরকে, আমরা যদিও ২০১৯ সালে অংশগ্রহণ করি আসনের বদলা মারে কেটে ওরা ক্ষমতায় চলে যাবে। এখানে আপনাকে বলি, বিএনপি ক্ষমতায় আসার কোন সম্ভাবনা নেই। লে. জে. (অব) মাহবুব : নাই, নাই। রইস : যদি আল্লাহ, যদি বলে সেনাবাহিনী দিয়ে আবার কোন বিদ্রোহ ঘোষণা করে...। লে. জে. (অব) মাহবুব : নাহ্। সেনাবাহিনীরা ওরা করবে না। রইস : যদি কোনদিন বিদ্রোহ করে...। লে. জে. (অব) মাহবুব : সেনাবাহিনীর কথা বলবি না। আমি সেনাবাহিনীর রেশন খাই, সেনাবাহিনীর পেনশন খাই, সেনাবাহিনীর দয়ায় বেঁচে আছি। সেনাবাহিনী সমন্ধে কোন প্রশ্নের উত্তর দিব না। রইস : তাইলে তো আমাদের আর কোন গতি নাই। লে. জে. (অব) মাহবুব : সেনাবাহিনী বিদ্রোহ করে তোমাদের হাতে ক্ষমতা দেয়া তাদের কাজ না। অতীতে অনেক ভুল করছে আর করবে না। রইস : তাইলে খালেদা জিয়াকে ওই কথাগুলো বলে আসতে হবে, আমি গেলে আমার জীবন নিয়ে এসব করব। খালেদা জিয়াকে দিয়ে আর হবে না। কারণ যে পর্যায়ে এখন চলে গেছে তা আর হবে না। অনেকেই তো বলে খালেদা জিয়া বলছে আমরা কারও না। খালেদা বলছে আমরা করে ফেলছি। খালেদা জিয়া বললেও এখন আর হবে না। ওইটা হয়ত স্বার্থবাজির মতো কথাবার্তা। নেতৃত্বের মধ্যে গণতন্ত্র না আনলে হবে না। নেতাদের মধ্যে এই যে আপনাদের খালেদা জিয়ার কোন মিটিং নাই, মোদির সঙ্গে দেখা না হলে স্যার আমরা পিছাইয়া যাব স্যার। মোদির সঙ্গে ভারত আমাদের যেভাবে দিছিল, খালেদা জিয়া ওই চীন সফর করে আসল তারপরে...। লে. জে. (অব) মাহবুব : চীন যে সফর করাইয়া দিয়ে গেলাম সে মূল্যই তো দিল না। আমাকে বাদ দিয়ে দিল রে। রইস : না, ওই জন্যই তো খালেদা জিয়ার এই অবস্থা। লে. জে. (অব) মাহবুব : আমাকে তো রাখল না রে...। বিএনপি নেতা রইস : খালেদা জিয়ার এ্যানালাইসিসটা ভুল। আপনে চীন সফর, ভারত সফর করে আসলেন। উনি এতকিছু পাওয়ার পরেও উনি মনে করল যে আমি আরও পাইতে চাই। তো পা, এখন তোকে কিছুই দেবে না। লে. জে. (অব) মাহবুব : আর কী পাইতে চায় আমি তো বুঝলাম না। সেই খানে ওরা বলছে তুমি আমাদের বুকে ছুরি মারছ। এই অবস্থা থেকে তাকে আমি চীনে নিয়ে গেলাম। তাকে বাড়িছাড়া করল, আমি এককভাবে চীনে নিয়ে গেলাম আর কেউ সাহস পায় নাই তখন। তারপর কী হলো, ফিরে আসার পর আমি নাই। রইস : বিএনপি মনে করে আমাদের ধরে এনে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। লে. জে. (অব) মাহবুব : আমি কি ঠিক আছি? রইস : না, না আপনি ঠিক-ই আছেন। লে. জে. (অব) মাহবুব : আমার মনে তোমরা যে আঘাতটা দিছো এটাও তো কাবার ঘরে লাগছে রে ভাই। রইস : আঘাত তো অনেকেই খাইছে স্যার। লে. জে. (অব.) মাহবুব : তুমি আবার প্রধানমন্ত্রী হইতে চাও। প্রধানমন্ত্রী হয়ে আবার আঘাত দেবে এটা তো আল্লাহ সহ্য করবে না। আমার মনে এত আঘাত আমি সহ্য করব না। রইস : ভাল মানুষকে খালেদা জিয়া চিনতেই চায় না। ওই খানে তেলবাজি, তেল পার্টি। লে. জে. (অব) মাহবুব : হুম। রইস : শিমুল বিশ্বাস, গয়েশ্বর, মির্জা আব্বাস এদেরকে চিনলেই হবে। চিনুক! লে. জে. (অব) মাহবুব : তোমরা আমাকে কী অপমান টা না করলে, ভুলে যাব? ভোলা যায় না। রইস : কাজী সিরাজ কী বলছে শুনছেন... লে. জে. (অব) মাহবুব : তুমি ওই কলামটা বাংলাদেশের সবার ঘরে ঘরে দিয়ে আসো যাও। রইস : খন্দকার দেলোয়ারের মনেও অনেক দুঃখ ছিল খালেদা জিয়ার প্রতি। আমাকে বলেছে, যাক শেষ টাইমে আমাকে মহাসচিব করে গেছে, আমি তার সাথে বেইমানী করব না। লে. জে. (অব) মাহবুব : ওই, আমিও কিন্তু করিনি। রইস : জিয়াউর রহমানের মাজারে যাই নাই বলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে নামাল। লে. জে. (অব) মাহবুব : সংবিধানে কোথাও বলা আছে নাকি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে হবে? তারও তো একটি ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে। এভাবে করতে হলে সংবিধানে সংযোজন করে নাও। রইস : একটা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রোটোকল দিয়ে পাওয়ার পরে খালেদা জিয়া মনে করে আমি নেত্রী। তুমি এখন পদে নাই। কোনকিছু নাই, শোনেন স্যার...। লে. জে. (অব) মাহবুব : জামায়াত হরতাল ডাকছে আমি চেপে যাব, আরে জামায়াত হরতাল ডাকছে, ওটা কিসের হরতাল ছিল? তুমি ২০ দলের নেতা, তুমি বলতা এই সময় থেকে এই সময় তোমরা হরতাল করো না। তাহলে তো হয়ে যায়। রইস : হরতাল ওই শিথিল করলে কি-ই বা হতো? উনি যে বলে আমি হরতালে যেতে পারব না, এটা কোন কথা হলো? লে. জে. (অব) মাহবুব : সেজন্যই জামায়াত ছাড়তে পারে না। জামায়াতে থাইকা উনি বুঝলেন, জামায়াত ছাড়তে চায় না, আমি কী করব। তার মানে জামায়াতের সাথে এমন সম্পর্ক যে সে সময় যদি বিরাট কা- হয়ে যায়। তোমরা ওইটা রক্ষা করতে পারবা না। জামায়াত সম্পর্কে তোমরা জান না। রইস : তো জামায়াতেই ডুবাইল খালেদা জিয়াকে এবার। লে. জে. (অব) মাহবুব : নিজে নিজে ডুবে গেলে জামায়াত কী করবে? রইস : এখন মহাসচিবের জামিনটা স্যার হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। স্যার, কবে যে হবে স্যার। লে. জে. (অব) মাহবুব : হবে, হবে। রইস : এতদিন হয়ে গেল, এখন কেন জানি মনটা খারাপ লাগছে স্যার। লে. জে. (অব) মাহবুব : তুমি কি মহাসচিবের সাথে দেখা কর? রইস : হ্যাঁ, করি যখন কোর্টে আসে তখন। লে. জে. (অব) মাহবুব : আমার কথা শোনো, ও যদি আগের মতন করে চলে জীবনেও জামিন হবে না। আমি বললাম লিখে নাও, লিখে নাও...। রইস : না, আগের মতো চললে জামিন হবে না। লে. জে. (অব) মাহবুব : না না না, ও যদি আগের মতোন করে চলে, আমি বলতেছি, আমি তো এসব জানি বলেই বলতেছি, দায়-দায়িত্ব আমার, জীবনেও জামিন হবে না। রইস : হ্যাঁ!
×