ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাগত নরেন্দ্র মোদি

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৬ জুন ২০১৫

স্বাগত নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু’দিনের সফরে আজ শনিবার ঢাকা আসছেন। বাংলাদেশে এটি তার প্রথম সফর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তাঁর ঢাকায় আসা। দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে এই সফর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। এ সফরে দু’দেশের বন্ধুত্ব আরও মজবুত হবে। গত বছরের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদি তখনই বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। গত মে মাসের শুরুতে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায় সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় মোদির ঢাকা সফর কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। নরেন্দ্র মোদি রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ সফরে পারস্পরিক সংযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ খাতে নতুন সম্ভাবনা ছাড়াও অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সম্মানজনক সমাধান করতে চাচ্ছে উভয়পক্ষ। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অবনতি ঘটে। সেই থেকে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী রাজনীতির প্রচারণা শুরু হয়। সামরিক জান্তা শাসক ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ভারতবিরোধী প্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল চালায়। এ ক্ষেত্রে ক্ষাণিকটা সফলও হয় তারা। মূলত ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা শুরু হয়। এ সময় গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের বিরাজিত সমস্যার সমাধানে অগ্রগতি অর্জিত হয়। সেই থেকে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক গভীরতর হতে থাকে। মোদির এই সফরের সময় ভারতের সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। ভারত চায় বাংলাদেশ তথা এই অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে। এ সফরে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর সম্মাননা নরেন্দ্র মোদির হাতে তুলে দেবে বাংলাদেশ। দুই নিকটপ্রতিবেশীর অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করতে নতুন একটি ঋণচুক্তি হতে যাচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় যোগাযোগ অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন খাতের প্রকল্প গ্রহণের ওপর জোর দেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ভারতকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পর্যটকদের জন্য অন-এ্যারাইভাল ভিসা দেবে ভারত। দুই দেশই জঙ্গীবাদের হুমকির মধ্যে রয়েছে। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা জোরদার করতে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। দু’দেশের জেলে বন্দী অপরাধীদের আদান-প্রদান নিয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে। সফরকালে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরের জন্য উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ-প্রটোকল নবায়ন, সামুদ্রিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবেলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, দুই দেশের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হবে। দ্বি-পক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও নিবিড় করতে এবার প্রথমবারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হবে। বাংলাদেশ ও ভারত দুই প্রতিবেশী দেশের রয়েছে ইতিহাস ও সংস্কৃতির অভিন্ন ঐতিহ্য। এই সম্পর্ককে আরও জোরদারের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। মূলত প্রতিবেশীর সঙ্গে কার্যকর অংশীদারিত্ব সম্পর্ক ছাড়া উন্নয়ন সম্পূর্ণ ও টেকসই হয় না। সবার নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে মোদির এই সফরে। এই সফর হোক সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়া গড়ার নতুন দিগন্তের উন্মোচন। স্বাগত নরেন্দ্র মোদি।
×