ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদির আলোয় উদ্ভাসিত হতে চান না বলেই আলাদাভাবে ঢাকায় মমতা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৬ জুন ২০১৫

মোদির আলোয় উদ্ভাসিত হতে চান না বলেই আলাদাভাবে ঢাকায় মমতা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছত্রিশ ঘণ্টার বাংলাদেশ সফর বহুমাত্রিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদিও তাঁর এই সফরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ২০১১-এর বাংলাদেশ সফরের মতো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বা সাফল্যের মুখ দেখবে তা এখনও বলা কঠিন। কারণ, সফরের সময় স্থলসীমান্ত চুক্তিতে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী সই করলেও মূল দ্বিপাক্ষিক সমস্যা- তিস্তা জলবণ্টন সমস্যা সমাধানের কোন সূত্র এখনও পর্যন্ত মেলেনি। কিন্তু তাও বলতে হয়, মোদির ঢাকা সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উচ্চকোটিতে নিয়ে যাওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার দু’দেশের নেতা-নেত্রীরা করতে পারেন কিনা তার ওপরেই নির্ভর করছে সফরের সাফল্য বা ব্যর্থতা। কিন্তু তিস্তা সমস্যা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে, সেই জট খোলা কোন সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই সমস্যার জট খুলতে না পেরে ঢাকা সফরে গিয়ে নিজের মুখ পুড়িয়েছিলেন। যার ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনমোহন সিং হাসিনাকে কথা দিয়েছিলেন যে, তিস্তা চুক্তি তাঁর সফরের সময়ে স্বাক্ষরিত হবেই। দিল্লী ও ঢাকায় তিস্তা চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে এক গগনচুম্বী প্রত্যাশার বাতাবরণও তৈরি হয়। কিন্তু চুক্তি সই না হওয়ায় এক চরম হতাশা জন্ম নেয়, যা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটায়। তৈরি হয় চরম তিক্ততা। এ চুক্তিকে ঘিরে বাংলাদেশীদের মনে ভারত সম্পর্ক যে চরম ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল তা রাতারাতি নেতিবাচক হয়ে ওঠে। চুক্তিকে ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশে যে আশার ফানুস ওড়ানো হয়েছিল তা নিমেষে চুপসে যায়। আমি সেবার মনমোহন সিংয়ের সফরসঙ্গী হয়ে ঢাকা গিয়েছিলাম। ঢাকা বিমানবন্দরে দেখলাম শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রী-উপদেষ্টারা ম্লানমুখে মনমোহন সিংকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। তাঁরা কেউই বিশ্বাস করতে পারচ্ছিলেন না যে মমতা দেশের প্রধানমন্ত্রীর অবাধ্য হয়ে ঢাকা আসেননি। শেখ হাসিনাকে তাঁর উপদেষ্টা সচিবদের বলতে শুনেছিলাম, ‘খোঁজ নিন সত্যি কি মমতা আসেননি? শেষ মুহূর্তে হয়ত বিমানে উঠে থাকতে পারেন।’ শেখ হাসিনা যখন মনমোহন সিংয়ের মুখ থেকে চূড়ান্তভাবে জানলেন যে, মমতা আসেননি তখন এক চরম হতাশার ছবি তাঁর মুখম-লে ফুটে উঠল। তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সমস্যরা তো আমাকে ডেকে তাঁদের বিস্ময়ের কথা জানাতে গিয়ে বললেন, ‘বিশ্বাসই করতে পারছি না যে ভারতের এক অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দেশের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার স্পর্ধা দেখাতে পারেন। মনে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের বাইরে।’ এবারেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় ২০১১-এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে অনেকটা অন্যভাবে। মমতা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমানে সফরসঙ্গী না হয়ে মোদিকে এড়াতে একটি বেসরকারী সংস্থার বিমানে চড়ে ঢাকায় পৌঁছবেন, মোদির ঢাকা আগমনের একদিন আগে এবং ঢাকা ছাড়বেন ৬ জুন মোদি ঢাকা ছাড়বার একদিন আগে। অর্থাৎ মোদি মমতাকে ঢাকায় পাচ্ছেন মাত্র ১ দিনÑ ৬ জুন। তার মানে হলো তিনি মমতার উপস্থিতিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে তিস্তা জটের সমাধান সূত্র বের করা এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাতে মমতা জল ঢেলে দিলেন। মমতার এই অভাবনীয় পদক্ষেপে দিল্লীর বিদেশমন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। মমতা কোনভাবেই তিস্তা নিয়ে মোদি ও হাসিনার কাছে ধরা দিতে চান না। প্রশ্ন উঠেছে, মমতা মোদিকে এড়াতে কেন তাঁর আলাদা সফরসূচী তৈরি করলেন? এর সোজা উত্তর না জানলেও বেশ কয়েকটি কারণ সহজেই আন্দাজ করা যায়। মমতার ইগো এতটাই প্রবল যে, তিনি কোন প্রধানমন্ত্রীর জুনিয়র হয়ে বিশেষ করে ‘এক হরিদাস পাল’-এর মতো প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতে চান না। ২০১১-এ মনমোহনের সঙ্গে ঢাকায় না যাওয়ার এটাও একটা অন্যতম কারণ ছিল। মমতা আরও মনে করেন, বাংলাদেশে তাঁর জনপ্রিয়তা এতই ব্যাপক যে, মোদির সঙ্গে তিনি তা ভাগাভাগি করতে চান না। তিনি মোদির জনপ্রিয়তার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে দু’দেশের বাহবা কুড়োতে চান না। তিনি আরও মনে করেন একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হলেও প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বে তিনিও মোদির থেকে কোন অংশে কম নন। ঢাকা সফরের সময় তিনি খবরের শিরোনামে থাকতে চান। কোনভাবেই আলোকবৃত্তের বাইরে থাকতে চান না। প্রচারের আলো যাতে নিজের ওপর সবসময়ই থাকে সেই লক্ষ্যে তাঁর হয়ে ঢাক পেটাবার জন্য একটি বিরাট সাংবাদিক দলকে রাজ্য সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে আগেই ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। মোদি ও মমতার পৃথক যাত্রার ফলে দিল্লী ও ঢাকা রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। শেখ হাসিনা বুঝে উঠতে পারছেন না যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানানোর আগেই প্রটোকল ভেঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন কিনা। বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকরা স্বীকার করলেন যে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতার পৃথক ভ্রমণসূচীতে তাঁরা রীতিমতো ফাঁপরে পড়েছেন। মোদির সফরের সময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যখন একগুচ্ছ যুগান্তকারী সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়, যা দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়াকে আরও গভীর ও সুনিবিড় করবে, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ভারতীয় রাজনীতিকের উচিত ছিল এক ভাষায় কথা বলা এবং এক লয়ে চলা। কিন্তু মমতা যে বেসুরো ও ভিন্নধর্মী সিদ্ধান্ত নিলেন তা মোদির সফরের গুরুত্বকে অনেকটাই খাটো করে দেখানোর এক হীন প্রচেষ্টা। এখন তো ঢাকায় প্রকাশ্যেই বলাবলি হচ্ছে তিস্তা চুক্তি ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধানগুলো মোদি-মমতার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার মতে, মোদি তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে মমতাকে কখনও অন্ধকারে রাখেননি। তাঁর মতামত ও সহযোগিতাকে যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদা দিয়ে সমস্যা নিরসনের পথে এগিয়েছেন। যা মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দ্বিধাহীনভাবে করতে পারেননি। মনমোহন সিং ধরেই নিয়েছিলেন ইউপিএ সরকারের শরিক হিসেবে তৃণমূল নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কথা ও প্রস্তাব অমান্য করবেন না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বাংলাদেশের মতো এক প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে অঙ্গরাজ্যের সিলমোহর থাকা যে একান্তই জরুরী এই কথাটাই মনমোহন সিং ভুলে গিয়েছিলেন। যার পুরো রাজনৈতিক ফায়দা তোলেন মমতা। মোদি কিন্তু মনমোহন সিংয়ের ভুলভ্রান্তিগুলোর পুনরাবৃত্তি করেননি। মমতাকে সবসময় বিশ্বাস ও আস্থায় রেখে তিনি তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে এগিয়েছেন। কিন্তু মমতা মনে করেন, তিস্তা পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ কেন্দ্রিক অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে মোদি নয়, তাঁর হাতেই আছে সমাধানে চাবিকাঠি। এই চাবিকাঠির জোরে সমস্যা সমাধান সম্ভব বলেই তাঁর ধারণা। কিন্তু গত চার বছর দেখা গেল তিনি চাবিকাঠি হাতে নিয়ে কেন্দ্র ও বাংলাদেশকে লেজে খেলাচ্ছেন। যার মূল কারণ তিনি চান মোদি তাঁকে সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত থেকে ‘ক্লিনচিট’ দিয়ে নিষ্কৃতি দিলেই তিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে সহায়তা করবেন। এটা অনেকটা বাঁকা আঙ্গুলে ঘি তোলার কৌশল। কিন্তু মোদি মমতার এই শর্তে রাজি নন। যার ফলে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি ঝুলে রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই তিস্তা চুক্তি সম্পাদন নিয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্ব এখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন মমতা-মোদি যদি কোনদিন সমঝোতায় আসেন তখনই চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব। মমতা ঢাকায় গিয়ে মোদি ও শেখ হাসিনাকে বুঝিয়ে দিতে চান যে, তাঁকে বাদ দিয়ে তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সম্ভব নয়। তাঁকে বাদ দিয়ে চুক্তি করতে গেলে তিনি তাতে বাগড়া দেবেন। যদিও তিনি জানেন, সুখা মরসুমে তিস্তায় পর্যাপ্ত জল না থাকার দিনগুলোতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ভিত্তিতে দু’দেশের মধ্যে আপসে জল ভাগাভাগি করে নেয়াই উচিত। তিস্তা নিয়ে মমতার নেতিবাচক ভূমিকায় বাংলাদেশে তাঁর জনপ্রিয়তা বিশাল ধাক্কা খেয়েছে। যার প্রতিফলন তাঁর ঢাকা সফরের সময়ই দেখা যাচ্ছে। তার বিপরীতে তিনি দেখছেন বাংলাদেশে মোদির এক ইতিবাচক ভাবমূর্তি। যারা এককালে মোদি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ায় প্রমাদ গুনছিলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক গোত্তা খেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়বে, সেই তারাই আজ মোদির জয়গান গাইতে ব্যস্ত। এখন বলা হচ্ছে, শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর পর মোদিই প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে এক যুগসন্ধিক্ষণে এনে দাঁড় করিয়েছেন। তিনি যেভাবে বিরোধীদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি পেশ করিয়েছেন এবং তিস্তার সমাধান সূত্র বের করার লক্ষ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে গেছেন তা বাংলাদেশের নেতৃত্বকে অভিভূত করেছে। এমনকি কট্টর ভারতবিরোধী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মোদির ঢাকা সফরের সময় তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করার জন্য ভারতীয় কূটনীতিকদের দোরে হত্যে দিয়ে পড়ে আছেন। কিন্তু মোদি তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন কিনা তা এখনও পরিষ্কার নয়। কারণ খালেদা জিয়া ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতকারের পূর্বনির্ধারিত সূচী ঢাকায় হরতালের অজুহাত দিয়ে বাতিল করেছিলেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রতি এই চূড়ান্ত অসম্মান প্রদর্শনের কথা মোদি নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দোষ হলো তিনি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে জাতীয় এবং আঞ্চলিক প্রেক্ষিতকে কোন গুরুত্বই দেন না। যদি গুরুত্ব দিতেন তাহলে এই রাজ্য এবং উপমহাশের এই অঞ্চলের অনেক লাভ হতো। তিস্তা চুক্তি না হলে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া যে সম্ভব নয় এই সহজ সরল সত্যটা তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। মোদি কিংবা শেখ হাসিনা কেউই তাকে বলছেন না যে, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করতে। তাঁরা চান পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণœ রেখে এমন এক সমাধান সূত্র বের করা যা সুখা মরশুমে জলের ঘাটতি ভাগাভাগি করে নিতে দু’দেশকে উদ্বুদ্ধ করবে। আর ওই মরসুমে তিস্তার জলের যোগান কিভাবে বাড়ানো যায় তারও ব্যবস্থা করবে। আর ওই মরসুমে তিস্তার জলের যোগান কিভাবে বাড়ানো যায় তার ব্যবস্থা করাও একটা দ্বিপাক্ষিক লক্ষ্য। কিন্তু মমতা যেভাবে মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন তা পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক হবে। কারণ মোদি তাঁর সফরের সময় হাসিনা সরকারের অনুমোদিত এমন সব দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রকল্প ঘোষণা করতে যাচ্ছেন যা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের উত্তর-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক বিকাশে এক বিশাল সহায়ক ভূমিকা নেবে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন খুলনা জেলার ভারতের সহযোগিতায় বিশাল সেচ প্রকল্প গড়ে উঠতে চলেছে যেখানে টাটা এবং অন্যান্য প্রথম সারির ভারতীয় শিল্পোদ্যোগীরা বড় বড় কারখানা গড়ে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য তৈরি করে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে রফতানি করবে। এই সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিকে শুধু চাঙ্গাই করবে না, তাকে এক নতুন খাতে প্রবাহিত করতে সাহায্য করবে। ভারত বাংলাদেশকে আর্থিক ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নে যে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করছে তা রেকর্ড। এই ঋণের সাহায্যে যেসব বিশেষ প্রকল্প খুলনা ও দেশের অন্যান্য স্থানে রূপায়িত হবে তার আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া জেলাগুলোও পাবে। বিশেষ করে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে রেল পরিষেবা যখন শীঘ্র চালু হতে যাচ্ছে মোদির সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে সব অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তের ঘোষণা হতে চলেছে, তার সুযোগ নিতে হবে। শুধু পদ্মার ইলিশ মাছ চাই বলে দাবি নিয়ে পড়ে থাকলে পশ্চিমবঙ্গ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাবে। পশ্চিমবঙ্গকে এসব প্রকল্প থেকে বাড়তি সুবিধা পেতে হলে মমতাকে কেন্দ্রের সঙ্গে একই ‘ওয়েভলেংথ’-এ থাকতে হবে। কারণ এই সব প্রকল্প রাজ্যের উন্নয়নে এক সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করবে। শেখ হাসিনা আশা করেন, মোদির সফরের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এক আঞ্চলিক শক্তি এবং বিশ্বের এক অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে দিতে সাহায্য করবে। তাঁর আরও আশা উপমহাদেশের আইএসআই-এর মদদে জঙ্গী ও মৌলবাদের যে উত্থান ঘটছে তা যৌথভাবে মোকাবেলার জন্য কৌশল গ্রহণে সাহায্য করবে এ সফর। কারণ ধর্মান্ধ ও সন্ত্রাসীরা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শুধু পঙ্গু করে রাখাই নয়, তাকে ধ্বংস করারও আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আর এই সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশ লাগোয়া ভারতের রাজ্যগুলোতে একই মতবাদের সংস্থা ও মানুষের কাছে আশ্রয় ও সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে, যা তাদের কর্মকা-ের পরিধিকে ব্যাপ্ত করেছে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক চরম অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে মৌলবাদীদের চারণভূমিকে পরিণত করা। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর নিশানায় ভারত ও বাংলাদেশ সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। মোদিও হাসিনার মতো এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মোকাবেলার ব্যাপারে খুবই সচেতন। মোদি জানেন হাসিনা ওই সন্ত্রাসীদের হত্যা তালিকার শীর্ষে আছেন এবং তাঁকেও নিকেশ করার জন্য পাকিস্তানের জামাতীরা এক মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। অনেকে আশা করছেন, এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে এক নতুন দিকনির্দেশ করতে পারে। যা দু’দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। লেখক : ভারতীয় সাংবাদিক, দৈনিক বাংলা স্টেটসম্যানের সম্পাদক
×