ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উখিয়ার মধুরছড়ায় শতাধিক স্থাপনা ॥ এখনও উচ্ছেদ হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৪ জুন ২০১৫

উখিয়ার মধুরছড়ায় শতাধিক স্থাপনা ॥ এখনও উচ্ছেদ হয়নি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে দুর্গম মধুরছড়া নামক পাহাড়ে সশস্ত্র পাহারা বসিয়ে ১৫ একর বনভূমি দখল করে জঙ্গীদের অর্থায়নে নির্মিত অর্ধ শতাধিক সেমিপাকা স্থাপনা এখনও উচ্ছেদ করা যায়নি। জঙ্গী স্থাপনা সন্দেহে গভীর জঙ্গলে নির্মিত ওই সেমিপাকা স্থাপনাগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে সরিয়ে নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় এমপি ঐ দিন উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে ৮ সপ্তাহ অতিক্রম হয়েছে এ ব্যাপারে প্রশাসন কোন এ্যাকশনে যেতে পারেনি। এ ব্যাপারে বনবিভাগের পক্ষ থেকে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই সরকারী বনভূমির ওপর নির্মিত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে বনজসম্পদ দখলমুক্ত করার জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কোন ফল মিলছে না। উল্লেখ্য, উখিয়ার দুর্গম মধুরছড়া নামক পাহাড়ী অঞ্চলে বনাঞ্চল উজাড় করে শতাধিক স্থাপনা নির্মাণের খবর পাওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ৯ এপ্রিল তা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে এ্যাকশনে যায়। এতে স্থাপনায় অবস্থানকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। স্থাপনার অধিবাসীরা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় ২০ জন বনকর্মী আহত হয়। এ অবস্থায় স্থানীয় এমপি ঘটনাস্থলে এসে এক সপ্তাহের মধ্যে এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রশাসনের উচ্ছেদকারী কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে দেন। এ ঘটনা নিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে ৪টি মামলা রয়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়া সহকারী বন রক্ষক রেজাউল করিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দু’বার উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে তা হয়নি। জেলা প্রশাসক আলী হোসেন সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, ঐসব অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। স্থানীয় পর্যায়ের অনেকের অভিযোগ রয়েছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদী সংস্থাসমূহ পরিচালিত এনজিওগুলো কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের দুর্গম পাহাড়গুলোতে টার্গেট করে জঙ্গী প্রশিক্ষণের জন্য এসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঐসব এলাকায় মাদ্রাসার ব্যানারে জঙ্গী প্রশিক্ষণের কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। জঙ্গীদের আড্ডা মধুরছড়া পাহাড় ॥ মধুরছড়া পাহাড়কে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে চিন্তা ভাবনায় এনে আরাকান বিদ্রোহী সংগঠন আরএসওসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীর অনেকে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযাগ উঠেছে। চিহ্নিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা যারা নাশকতা কাজে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে অর্থের বিনিময়ে ভাড়ায় গিয়ে বেআইনী কাজে অংশ নেয়, তারাই এখন মধুরছড়া পাহাড়কে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়ে ঘাপটি মেরে রয়েছে। সাধারণের যাতায়াতে বাধা ॥ উখিয়ার সেই বহুল আলোচিত মধুরছড়া-মাছকারিয়া সরকারী বনভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা রহস্যময় স্থাপনাগুলোর কাছে যাওয়া তো দূরের কথা, ঐ পাহাড়ের পাদদেশে সাধারণ কারও যাতায়াতের ওপর নিষেধ রয়েছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের। দিনের বেলায় কেউ সেখানে গেলে তার পরিচয়, কি কাজে এবং কার সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন ইত্যাদি জেনে মুঠোফোনে ডেকে কাক্সিক্ষত ব্যক্তিকে প্রধান ফটকে এনে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা গেছে। টাকার লোভে জঙ্গীদের মদদ ॥ জঙ্গীবাদের উত্থান সমূলে বিনাশ করে জঙ্গীবাদ মুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশে যখন জঙ্গীদের ধরপাকড় চলছে, ঠিক এ অবস্থায় মধুরছড়া ও মাছকারিয়ার দুর্গম পাহাড়ে একই ডিজাইনের অর্ধশতাধিক জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পেছনে রহস্য কি, তা খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। অনেকেরই সন্দেহ, বিদেশী (তুর্কি) একটি সংস্থার অর্থায়নে সশস্ত্র পাহারায় রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে। মধুরছড়া এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। সরকারী জায়গা দখল করে বিদেশী অর্থায়নে অসংখ্য দালান নির্মাণ, উচ্ছেদে যাওয়া সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া এবং এ পর্যন্তও ওইসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেফতার না হওয়ার নেপথ্যে প্রভাবশালীদের অবৈধ প্রভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা দরদী হয়ে জঙ্গী কর্মকা-ে মদদ যোগানো এবং সন্দেহ ভাজন কর্মকা-ে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন কারা? এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কক্সবাজারে বসবাসকারী জোবাইর নামে এক যুবক চাকরি করেন তুরস্কভিত্তিক একটি এনজিও সংস্থায়। বিএনপি নেতা আবুল কাশেম ও তার ভাই মফিজ উদ্দিন তাদের ভাগিনা জোবাইরের মাধ্যমে বিদেশী একটি অর্থ যোগানদাতা সংস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা এনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করছে বলে তথ্য মিলেছে। আর ঐ অর্থের একটি মোটা অঙ্কের ভাগ পাচ্ছেন এক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ।
×