ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

না’গঞ্জে ফুল চাষে বদলে গেছে জীবন

ফুলের সৌরভে আমোদিত চারদিক, বেকারদের জীবনে স্বস্তির ছোঁয়া

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৪ জুন ২০১৫

ফুলের সৌরভে আমোদিত চারদিক, বেকারদের জীবনে স্বস্তির ছোঁয়া

মীর আব্দুল আলীম ॥ ভালবাসার ফুলে লেগেছে বাণিজ্যের ছোঁয়া। দিন দিন বেড়ে চলেছে এর চাষ ও ব্যবহার। রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখন ফুল চাষ হচ্ছে। রূপগঞ্জের ভুলতা, ভোলাবো ও বন্দর উপজেলার সদর ইউনিয়নজুড়ে আবাদ করা হয়েছে নানাজাতের ফুল। গাঁদা, গোলাপ, রজনীগন্ধা ছাড়াও অন্যান্য ফুল চাষ হচ্ছে। ফুলের সৌরভে চারদিক আমোদিত। হাল্কা বাতাস এই গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে আশপাশের এলাকায়। রূপগঞ্জ ও বন্দর উপজেলার ফুলচাষীরা রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে। এক দশক আগেও এখানকার কৃষিকাজ সীমাবদ্ধ ছিল ধান, আলু, মরিচ, মূলা, ও বেগুনের মতো প্রচলিত ফসলের চাষাবাদের মধ্যে। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। আগের সেসব চাষী এখন জমির পর জমিজুড়ে আবাদ করছেন নানাজাতের ফুল। তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুলচাষে লাভ বেশি। ফুলচাষ করে জীবন বদলে গেছে রূপগঞ্জ ও বন্দর উপজেলার অনেক কৃষক ও বেকার যুবকের। সরেজমিনে দেখা যায়, বন্দরের সদর ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে চাষ করা হয়েছে লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, রজনীগন্ধা, ভুট্টাফুল, গাঁদা, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, গরমফেনিয়া ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানাজাতের ফুল। কথা হয় বন্দর উপজেলার জালকুড়ি এলাকার সফল ফুলচাষী মিলন মল্লিকের সঙ্গে। তিনি ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। তাদের ৭ ভাই-বোনসহ ১০ জনের সংসারে তখন ছিল অনটন। ভাই বোনদের মধ্যে মিলন সবার বড় হওয়ায় পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করে নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। চাকরি নেন সিদ্ধিরগঞ্জ এলকার সমতা নার্সারিতে। একটানা ৪ বছর সেখানে চাকরি করেন। এরপর রাজধানী ঢাকার এক ফুলের দোকানে তিন বৎসর চাকরি অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে নেমে পড়েন ফুলচাষে। কোন প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই বাড়ির পাশের ১৪ শতাংশ জমিতে ফুলের চাষ করেন তিনি। প্রথম বছরেই পাঁচ হাজার টাকা পুঁজিতে লাভ হয় প্রায় দশ হাজার টাকার মতো। মিলন আরও জানান, প্রথম বছরেই ভাল লাভ হওয়াতে পরের বছর তিনি আরও বেশি জমিতে ফুলের চাষ করেন। এই ফুল তখন বিক্রি হতো ঢাকা শহরে। অনেক সময় উপযুক্ত মূল্য হতে বঞ্চিত হতেন মিলন। তাই তার উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য রাজধানীর শনির আখড়ায় নিজেই মল্লিক পুষ্পবিতান নামে তিনি একটি দোকান খোলেন। বর্তমানে তিনি ১৬Ñ১৭ কানি জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে গাঁদা ফুলই বেশি চাষ হচ্ছে তার জমিতে। শুধু মিলন মল্লিক নন তার মতো এই এলাকার জয়নাল, বাতেন, মিয়াজ উদ্দিন, রফিক, দিলদারসহ আরও অনেক যুবক ফুলচাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবন পাল্টে নিয়েছেন। ফুলচাষী মিয়াজ উদ্দিন জানান, ফুলচাষ করে তিনি সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। ৪ লাখ টাকা খরচ করে দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। ফুলচাষ করে বাড়ি পাকা করেছেন ও প্রাইভেট কারের মালিক হয়েছেন। তার পরিকল্পনা আরও জায়গা নিয়ে ফুলচাষ করা। তার মতো আরও অনেকে ফুল চাষ করে ভাগ্যকে বদলে নিয়েছে। এলাকার বেকার যুবকরা এখন ফুলচাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তারা বাড়ির আঙ্গিনায় ফুলচাষ করে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। চাষীরা জানান, আগেনন্দর ও রূপগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ জমিতে শুষ্ক মৌসুমে রবিশস্যসহ নানা আবাদ হতো। ফুলচাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় চাষীরা এখন রবিশস্যের বদলে ফুলের দিকে ঝুঁকছে। রূপগঞ্জের ভুলতা দিপুর দিঘী এলাকার ফুল চাষীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভালবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট নাইট, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বরের জাতীয় দিবসগুলোতে ফুলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী, গায়ে হলুদ, গাড়ি সাজানো, পূজাপার্বণ ও সভা-সমাবেশে ফুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিশেষ দিবস এলে ফুলের দাম একটু বেশি পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জের আমির হোসেন, জায়েদ আলী, ও আব্বাসসহ কয়েকজন চাষী। চাষীরা জানিয়েছেন, সার বীজ, ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া উৎপাদন খরচ একটু বেশি পড়ছে।
×