ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কন্টেনার বোঝাই জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রামে

মোদির সফরের আগেই ট্রানজিট পেল ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৪ জুন ২০১৫

মোদির সফরের আগেই ট্রানজিট পেল ভারত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনা ও সব বাধার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রতিবেশী দেশ ভারত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা পেয়েছে। দীর্ঘদিনের আলোচনার সীমাবদ্ধতা বর্তমান সরকার বাস্তবে রূপ দিয়েছে। গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ভারতীয় কন্টেনারবোঝাই একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। ‘ইরাবতী স্টার’ নামে জাহাজটিতে পণ্যবোঝাই ৯২ কন্টেনার বন্দরের জেটিতে নামছে। পরবর্তীতে অন্য একটি জাহাজে করে এসব কন্টেনারবোঝাই পণ্য ভারতের চেন্নাই, কোচিন ও নবোসেবা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। প্রসঙ্গত, মিয়ানমার থেকে ভারতের এসকল বন্দরে সরাসরি সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল সুবিধা না থাকায় এ জাতীয় পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতে যাওয়ার নতুন অধ্যয়ের সূচনা হলো। উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ভারত চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সে দেশের বিভিন্ন বন্দরে আমদানি করা পণ্য নিয়ে যেতে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা চেয়ে আসছিল। কিন্তু তা রাজনৈতিকসহ নানা কারণে আলোর মুখ দেখেনি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৬ জুন সফরে আসার আগেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সে দেশের ট্রানজিট সুবিধাপ্রাপ্তির ঘটনা দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। মিয়ানমারের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতের আমদানির ঘটনা এটাই প্রথম। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ইরাবতী স্টার জাহাজটিতে মোট আড়াই শ’ কন্টেনার রয়েছে। এরমধ্যে ৯২টি ভারতের চেন্নাই, কোচিন ও নবোসেবা বন্দরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে এসব কন্টেনার সেসব বন্দরে পাঠানো হবে। বন্দর সূত্র আরও জানায়, ট্রানশিপমেন্টের আওতায় এসব পণ্যবোঝাই কন্টেনার বিনামূল্যে টানা ২৮ দিন চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে রাখার সুযোগ থাকবে। এ সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে নিয়ম অনুযায়ী এক্ষেত্রে ভাড়া প্রযোজ্য হবে। বন্দরের পরিবহন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্টের পণ্যগুলো জাহাজ থেকে নামিয়ে ইয়ার্ডে রাখার পর পরবর্তীতে ভিন্ন জাহাজে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পথে সাধারণ ভাড়া পাবে চট্টগ্রাম বন্দর। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। সূত্র জানায়, ইরাবতী জাহাজটি এসব কন্টেনার নিয়ে থাইল্যান্ডের লেইম চাবাং বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ভিয়েতনামের হো চি মিন বন্দরের পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুর-পোর্ট কেলাং-ইয়াঙ্গুন হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। নির্দিষ্ট কন্টেনার নামানোর পর এ জাহাজটির পরবর্তী গন্তব্য কলকাতার হলদিয়া বন্দর। শিপিং সেক্টরের বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়েছে, বিগত তেরো বছর আগে অর্থাৎ ২০০২ সালে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে একটি কার্গোর চালান নেপালে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে এ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল দুই কন্টেনার প্লাস্টিক পণ্য চীন থেকে আমদানি হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে নেপালে যায়। এসব পণ্য বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকে স্থলপথেই ভারতের কাকরভিটায় যায়। ট্রানশিপমেন্টের এ ঘটনা ছিল সর্বশেষ। মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো নতুন করে ট্রানশিপমেন্টের শুভ সূচনা। সূত্র জানায়, ভারত ও পার্শ¦বর্তী দেশগুলোকে ট্রানজিট সুবিধা দিলে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম। এ দুই মিলিয়ন টন পণ্য অর্থাৎ প্রায় দুই লাখ একক কন্টেনারের অর্ধেক চট্টগ্রাম বন্দর ও অবশিষ্ট মংলা বন্দর হ্যান্ডলিং করবে বলে ধারণা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ডিরেক্টর (প্রশাসন) মোঃ জাফর আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে এ বন্দরের। পরিপূর্ণভাবে এ প্রক্রিয়া চালু হলে এ বন্দরের আয় নিঃসন্দেহে বেড়ে যাবে। জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট ইউনি বেঙ্গল সূত্রে জানানো হয়, এ সিদ্ধান্ত এই সরকারের যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। ট্রানশিপমেন্ট কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলে চট্টগ্রাম বন্দর সিঙ্গাপুরের মতো আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হতে খুব বেশিদিন সময় নেবে না।
×