ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজিবাজার পাওয়ার শেয়ার কেলেঙ্কারি

পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৪ জুন ২০১৫

পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতের কোম্পানি শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (এসপিসিএল) শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চীফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসারকে (সিএফও) প্রায় পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এক্ষেত্রে ৯ প্রতিষ্ঠানসহ এর সঙ্গে জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তা এবং তাদের বিভিন্ন ক্লায়েন্টকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কারসাজির সঙ্গে জড়িত ৩ ব্যক্তি এবং ১ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসি ৫৪৬তম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সর্বোচ্চ পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে প্রাইম ইসলামি সিকিউটিজকে। মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রদান, মার্জিন রুলসের বিভিন্ন আইন ভঙ্গ, ডিলার হিসেবে শেয়ার ক্রয়, ডিলার হিসেবে শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক হিসাবের টাকা ব্যবহার এবং বাজারে এসপিসিএলের শেয়ারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির জন্য শেয়ার ক্রয় করে সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন ধারা ভঙ্গ করে। আর এ কারণে এ ব্রোকারেজ হাউসকে রেকর্ড পরিমাণ আড়াই কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। এর পাশাপাশি পিএফআই সিকিউরিটিজকে জরিমানা করা হয় দেড় কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি ডিলার হিসেব থেকে এসপিসিএলের শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্মিলিত গ্রাহক হিসেবের টাকা ব্যবহার করেছে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে শাহজিবাজারের শেয়ার ক্রয়ের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। এতে করে বাজারে এসপিসিএলের শেয়ারের ঘাটতি দেখা যায়। এমনকি পিএফআই সিকিউরিটিজ ক্লায়েন্ট হিসেবে অনুমোদিত ঋণ অনুপাতের অধিক হারে মার্জিন ঋণ প্রদান করে মার্জিন রুলসেরও বরখেলাপ করে। এই শাস্তি পাওয়া আরেক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। প্রাইম ইসলামি সিকিউরিটিজের এ সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজের সঙ্গে থেকে একই ধরনের কারসাজি করে শেয়ারের দর বাড়ানোর পেছনে কাজ করে। একদিকে প্রতিষ্ঠানটি যেমন বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে অন্যদিকে মার্জিন ঋণের অনুমোদিত সীমার বাইরে গিয়ে মার্জিন ঋণ প্রদান করে ক্লায়েন্ট এ্যাকাউন্টে। আর এসব অনিয়মের কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে। এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেস লিমিটেডের জরিমানা হয়েছে এক লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদিত হিসাবের বাইরে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ প্রদাণ করে। একইসঙ্গে শার্প সিকিউরিটিজকে জরিমানা করা হয়েছে দুই লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা বিনিয়োগকারীদের ক্যাশ হিসাব এবং মার্জিন হিসাবে এ্যাভারেজ নেট ক্যাপিটাল ব্যালেন্স ১০০ শতাংশের বেশি এসপিসিএলের শেয়ার ক্রয় করা হয় এর পাশাপাশি ক্লায়েন্ট হিসাবে অনুমোদিত ঋণ সীমার বাইরে গিয়ে গ্রাহককে মার্জিন ঋণ প্রদান করেছে। বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেডকে শেয়ার লেনদেনে অনুমোদিত ঋণ সীমার বাইরে গিয়ে গ্রাহককে মার্জিন ঋণ প্রদান করায় এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি গেটকো টেলিকমিউনিকেশন এবং লিবরা ট্রেডিং কর্পোরেশন নামক দুটি প্রতিষ্ঠান বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির জন্য উল্লেখযোগ্য এসপিসিএলের শেয়ার ক্রয় ও মজুদ করে। যার প্রমাণ বিএসইসি পেয়েছে। এ অপরাধের জন্য গেটকো টেলিকমিউনিকেশনকে পাঁচ লাখ টাকা এবং লিবরা ট্রেডিং কর্পোরেশনকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান দুটি প্রাইম ইসলামি সিকিউরিটিজ থাকা এ্যাকাউন্টের মাধ্যেমে এ কারসাজি করে। এদিকে ব্যক্তি পর্যায়ে জরিমানা করা হয় গোলাম মহিউদ্দিনকে এবং আমজাদ হোসেন ফকির নামক ব্যক্তিকে কমিশনের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। গোলাম মহিউদ্দিন ইউনিক্যাপ ইনভেস্টমেন্ট, শার্প সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এ সবকটি প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক। কমিশন প্রমাণ পায় যে, এসপিসিএলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার ক্রয় ও মজুদের মাধ্যেমে গোলাম মহিউদ্দিন বাজারে এসপিসিএলের শেয়ারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরিতে অবদান রাখে। এর ফলে সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডন্যান্স-১৯৬৯-এর ১৭(ই)(পাঁচ) ধারা ভঙ্গ হয়। এ কারণে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। শাহজীবাজার পাওয়ার পেট্রোমেক্স রিফাইনারি লিমিটেডের ৯৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে। এই পেট্রোমেক্স রিফাইনারি কমিশনে পুঁজি উত্তোলনের (ক্যাপিটাল রাইজিং) আবেদনে নগদে পুঁজি উত্তোলনের প্রস্তাব করলেও পরবর্তীতে নগদ ও এবং ঋণ সমন্বয়ের মাধ্যমে পুঁজি উত্তোলন করে। এ কারণে উল্লিখিত সিকিউরিটিজ আইনসমূহ ভঙ্গের জন্য কমিশন পেট্রোমেক্সের প্রত্যেক পরিচালককে (যদি স্বতন্ত্র পরিচালক থাকেন তিনি ব্যতীত) ১০ লাখ টাকা করে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
×