ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আত্মবিশ্বাসী জুবায়ের

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২ জুন ২০১৫

আত্মবিশ্বাসী জুবায়ের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গুগলি বল! শব্দটাই বেশ ভয়ঙ্কর। এই বলটা লেগস্পিনারদের জন্য অনেক বড় স্বপ্নের। কিন্তু বাংলাদেশ দলে স্বীকৃত কোন লেগস্পিনার নেই। অবশেষে গত বছর ডিসেম্বরে সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে ধূমকেতুর মতো উদয় হলেন জুবায়ের হোসেন লিখন। যুবদলের হয়ে দীর্ঘদিন খেলছিলেন এবং নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কেড়েছিলেন। গুগলিও করতে পারেন। কিন্তু সেটাই শেষ। এরপর আর জুবায়ের সুযোগ পাননি খেলার। দীর্ঘদিন পর একজন লেগস্পিনার খুঁজে পেলেও জুবায়েরের ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়ছে না হয় তো আসন্ন ভারত সিরিজেও। কিন্তু সেসব ভেবে নিজেকে প্রস্তুত করা বাদ রাখছেন না জামালপুরের এ তরুণ। ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা না ভেবে গড়ে তুলছেন নিজেকে। সে জন্য শিখে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই। গত বছর আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের প্রাথমিক দলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত অল্পের জন্য ঠাঁই হয়নি জাতীয় দলে অভিজ্ঞতার অভাবে। তার আগে টানা ৫ মাস জাতীয় দলের অনুশীলনে নেট বোলার হিসেবে বোলিং করেছিলেন। জিম্বাবুইয়ে ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে অবশেষে তার প্রথম শ্রেণী ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে গত সেপ্টেম্বরে। ৫ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের প্রায় বাধ্যই করেন জাতীয় দলে রাখার জন্য। ৩ টেস্ট খেলেছেন জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে। অভিষেক সে সিরিজে ২৯.২৭ গড়ে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। দুই ওয়ানডে খেলে চার উইকেটও নেন। কিন্তু এরপর বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই হয়নি তার। সেটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে বিশ্বকাপ চলা এবং শেষ হওয়ার পর। কিন্তু এরপরও গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হয়নি। যদিও পাকদের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজে দলে ছিলেন কিন্তু খেলতে পারেননি। তবে সেজন্য হতাশও হননি কিংবা হাল ছাড়েননি। পাক লেগস্পিনার ইয়াসির শাহের সঙ্গে কথা হয়েছে তার খুলনায়। নেটে যখন বোলিং করছিলেন তখন ইয়াসির আম্পায়ারিংও করেছেন। সে সময় ইয়াসির তার কাছে অনেককিছুই জানতে চেয়েছিলেন এবং নিজের কৌশলটা দেখিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন গুগলি তেমন করতে পারেন না তিনি। এরপর জুবায়ের বলেন, ‘আমিও তাকে বললাম আমি নিজেও তেমন গুগলি ভাল করতে পারি না। কথাটা শুনে ফেলেছিলেন রুয়ান (স্পিন কোচ বাংলাদেশের) এবং মজা করে চোখ টিপেছিলেন। আর সেটা দেখে ফেলেছিলেন ইয়াসির এবং চিৎকার করে উঠেছিলেন- মিথ্যুক, মিথ্যুক... বলে।’ বাংলাদেশে বাঁহাতি স্পিনারদের আধিক্য এবং অফস্পিনারদের গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু লেগস্পিনারদের খেলানো ঝুঁকি হিসেবে ধরা হয়। জুবায়ের ১৭ বারের প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর হয়ে খেলেছেন। কিন্তু সেখানেও নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাননি। এখন তিনি নতুন করে শুরু হওয়া বিসিবির হাই পারফর্মেন্স স্কোয়াডের সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। নিজেকে আরও ভালভাবে গড়ার চেষ্টা ছাড়েননি। জুবায়ের বলেন, ‘আমি মুশতাক আহমেদের (পাকিস্তানের স্পিন কোচ) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছে কোনভাবেই ভীত না হওয়ার। আমি অনেক সময় বেশি রান দিয়ে ফেলি সেটা শোনার পরে বলেছেন এভাবে চিন্তা না করার। তিনি আমাকে বলেছেন রান আটকানোর চিন্তা বাদ দিয়ে উইকেট তুলে নেয়ার চিন্তা করতে। সে জন্যই এক জায়গায় বল ফেলতে হবে। এছাড়া ব্যাটসম্যানকে দুর্বল করতে হলে প্যাডে লাগতেই আবেদন করার কথাও বলেছেন তিনি।’ মুশতাকের কথাগুলো লিখে রেখেছেন এবং সেভাবেই নেটে বোলিংয়ের সময় করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জুবায়ের। এছাড়া নতুন একটি ডেলিভারি নিয়েও কাজ করছেন। এ বিষয়ে জুবায়ের বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই বোলিং করতে পছন্দ করি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বোলিং করতাম। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আমার তেমন আগ্রহ নেই। আমি সাধারণত নতুন কোন ডেলিভারি সম্পর্কে জানলেই সেটা রপ্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাই। এই মুহূর্তে তেমন একটা নিয়ে কাজ করছি। এটা নিয়ে আমি বেশ উদ্দীপ্ত। আমি ফ্লিপারটা চেষ্টা করে যাচ্ছি। গুগলির ওপর এখন আমার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে। এই পর্যায়ে মানিয়ে ওঠাটা খুবই কঠিন। কিন্তু আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার মনে হয় আগের চেয়ে সামান্য উন্নতি হয়েছে আমার বোলিংয়ে। বিশেষ করে বৈচিত্র্য এবং সঠিক স্থানে ফেলার বিষয়ে। সব লেগস্পিনারেরই কিছুটা সময় লাগে। আমি দ্রুত কিছু ঘটার জন্য চেষ্টা করি না। আমার আরও পরিণত হতে হবে। সে জন্য আমি আগামী বছরের মধ্যেই অনেক ম্যাচ খেলতে চাই। একমাত্র বেশি ম্যাচ খেললেই পরিণত ক্রিকেটার হওয়া সম্ভব। আমার হয় তো কিছুটা সময় লাগছে কিন্তু বেশি ম্যাচ খেললে অবশ্যই আমার উন্নতি হবে এবং আমি আমাকে প্রমাণ করব।’
×