ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভবনের উপরের পাঁচতলা ধসে গেছে

শ্রীপুরে গার্মেন্টসের আগুন ২০ ঘণ্টা পর নিভেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ জুন ২০১৫

শ্রীপুরে গার্মেন্টসের আগুন ২০ ঘণ্টা পর নিভেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাজীপুর, ১ জুন ॥ গাজীপুরের শ্রীপুরে ডিগনিটি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড পোশাক কারখানা আগুনে পুড়ে এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগুনের উত্তাপে নরম হয়ে স্টিলের অবকাঠামোর উপর নির্মিত ওই কারখানা ভবনের উপরের ৫টি তলা মুখথুবড়ে মাটিতে ধসে পড়েছে। এ সময় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুন লাগার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর আগুন নেভানো সম্ভব হলেও পুরোপুরি নেভাতে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ড্যাম্পিংয়ের কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এদিকে ওই কারখানার অবশিষ্ট শ্রমিকদের বেতন সোমবার বিকেলে পরিশোধ করতে শুরু করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। আগুনের ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এদিকে কর্তৃপক্ষ ৭ জুন পর্যন্ত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, রবিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে খাবারের বিরতির সময় শ্রীপুর উপজেলার বেতজুরী এলাকায় ডিগনিটি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড কারখানায় আগুনের সূত্রপাত হয়। এ কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কারখানায় বিভিন্ন ধাপে সুতা থেকে ‘টি-শার্ট’ তৈরি করা হয়। স্টিলের অবকাঠামোর ওপর নির্মিত বিশাল আকৃতির ৭ তলা বিশিষ্ট ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় তলার গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং মুহূর্তেই পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ধোঁয়া দেখে কারখানার কর্মচারীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আগুনের লেলিহান শিখা পর্যায়ক্রমে কারখানার ওই ভবনের ৭ তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ কারখানার নিচতলায় ডায়িং সেকশন, দ্বিতীয় তলায় নিটিং, তৃতীয় তলায় ওয়্যারহাউস (গুদাম), চতুর্থ তলায় কাটিং এবং ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় গার্মেন্টস সেকশন ছিল। আগুনের খবর পেয়ে ঢাকা, জয়দেবপুর, শ্রীপুর, সাভার ইপিজেড এবং ময়মনসিংহের ভালুকাসহ ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ষোলোটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটালেও স্টিলের ফ্রেমের ভবন হওয়ার কারণে উপরের তলাগুলোতে পানি আটকে রাখতে পারেনি। সরবরাহ করা সবটুকু পানি গড়িয়ে নিচে পড়ে যাওয়ায় আগুনের তীব্রতা কমেনি। কারখানা ভবনে পর্যাপ্ত দরজা জানালা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে ভবনের ভিতরে ঠিকমতো পানি সরবরাহ করতে ব্যাহত হয়েছে। এছাড়াও স্টিলের অবকাঠামোর উপর নির্মিত ভবনটি আগুনে অত্যাধিক উত্তপ্ত হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বেশিক্ষণ ভবনে অবস্থান করতে পারেনি। এধরনের ভবনের আগুন নেভানোর পূর্বাভিজ্ঞতা না থাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে। ইতোমধ্যেই ওই কারখানা ভবনের উপরের পাঁচটি তলার মালামাল পুড়ে যায় এবং আগুনের উত্তাপে কারখানা ভবনের স্টিলের কাঠামো নরম হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে আগুনের উত্তাপে ভবনের স্টিলের ফ্রেম দুর্বল হয়ে রবিবার মধ্যরাত থেকেই ভবনের বিভিন্ন অংশ ঝরে পড়তে শুরু করে। এ সময় অবকাঠামো নরম হয়ে একটি সিঁড়িসহ ধসে পড়ে এবং ভবনের দক্ষিণের অংশ বসে পড়ে। সোমবার ভোরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একযোগে ভবনের ভেতরে ঢুকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কারখানার ভেতরে প্রবেশের পূর্বমুহূর্তে ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই কারখানা ভবনের স্টিলের কাঠামো আগুনের উত্তাপে নরম হয়ে গলে পুরো ভবনের দ্বিতীয় তলার উপরের পাঁচটি তলা (তৃতীয় তলা হতে সপ্তম তলা পর্যন্ত) ধসে মাটিতে পড়ে ধংসস্তূপে পরিণত হয়। এতে অল্পের জন্য ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা না পড়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ ঘটনার পর আগুনের ভয়াবহতা কমে আসে। পুরো প্রতিকূল পরিবেশে দীর্ঘ প্রায় ২০ ঘণ্টা চেষ্টার পর সোমবার সকাল ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের উত্তাপে স্টিলের অবকাঠামো নরম হয়ে মুখথুবড়ে মাটিতে ধসে পড়ায় চাপা পড়ে সুতা ও কাপড়সহ বিভিন্ন দাহ্য বস্তু। এগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে মাঝে মধ্যেই সেগুলো জ্বলে উঠছে। স্টিলের অবকাঠামোর নিচের এ আগুন নেভাতে ঠিকমতো পানি ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ড্যাম্পিংয়ের কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এদিকে সোমবার সকাল থেকে শ্রমিকরা তাদের বেতনের জন্য কারখানা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন। বিকেলে শ্রমিকদের পাওনা মে মাসের বেতন পরিশোধ করতে শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থাপক মোঃ কাজল জানান, রবিবার শ্রমিকদের বেতন দেয়ার তারিখ ছিল। ওই দিন কিছুসংখ্যক শ্রমিকের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হলেও অগ্নিকা-ের ঘটনার কারণে তা সম্পন্ন করা যায়নি। তবে সোমবার বিকেলে অবশিষ্ট শ্রমিকের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে শুরু করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও কর্তৃপক্ষ আগামী ৭ জুন পর্যন্ত কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে। ছুটি ঘোষণার নোটিশ গেটে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই নোটিশে আগামী ৮ জুন শ্রমিকদের কারখানায় আসতে বলা হয়। ওই সময় পর্যন্ত সকল শ্রমিকের বেতন পরিশোধের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। আগুনে কারখানার মেশিনপত্র, সুতা ও তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে। এদিকে অগ্নিকা-ের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমদ খান, শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদেকুর রহমান এবং শ্রীপুর মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তোফাজ্জল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান লিটন জানান, এ কারখানায় আগুন নেভানোর আধুনিক ও পর্যাপ্ত সব ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কারখানায় দক্ষ-প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব থাকায় কারখানার লোকজন রবিবার আগুন দ্রুত নেভাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তিনি জানান, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
×