ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে মা-মেয়ে খুন

ঘাতকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৮ মে ২০১৫

ঘাতকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে প্রেমের টানে প্রেমিকাকে উপঢৌকন দিতে গিয়ে রিক্সাওয়ালার ছেলে খুন করল তার খালাত ভাইয়ের স্ত্রী ও মেয়েকে। হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে গিয়ে ঘাতক বেলাল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে কাহিনী। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় জোড়া খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক। মা-মেয়ে খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা ॥ খুনের শিকার নাছিমার স্বামী শাহ আলম। সে মাংস ব্যবসায়ী। জোড়া খুনের হোতা বেলাল শাহ আলমের আপন খালাত ভাই। আত্মীয়তার কারণেই প্রায় এই বাসায় আসা-যাওয়া ছিল। হত্যাকা-ের দুদিন আগে শাহ আলম তার মাংসের দোকানের টিউবওয়েল মেরামতের জন্য বেলালকে বলে। বেলাল স্যানেটারি কাজের পাশাপাশি ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজও করে। তবে দোকানের টিউবওয়েল মেরামতের একপর্যায়ে সে গোপনে মাংসের দোকানের একটি ছুরি পাশের ডাস্টবিনে লুকিয়ে ফেলে। উল্লেখ্য, হত্যাকারী বেলাল হোসেন (১৯) এক সময় শাহ আলমের মাংসের দোকানে কাজ করত। ঘটনার দিন ৭ মে সকাল ৯টার দিকে তার বাসা থেকে বের হয়ে সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার শাহ আলমের বাসার সামনে যায়। এ সময় ওই ছুরিটি নিয়ে যায়। শাহ আলমের বাসা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মানুষের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে সে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শাহআলমের ২ ছেলে হৃদয় হোসেন (১২) এবং রিয়াদ হোসেন (১১) স্কুলে চলে যায়। এর আগেই সে দোকানে চলে যায়। তাও বেলাল নিশ্চিত করে নিজেই। শাহআলমের মেয়ে রিয়াও তখন স্কুলে। বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই সে দোকানের ছুরিটি শার্টের পেছনে ও প্যান্টে গুঁজে শাহ আলমের ৬তলা বিল্ডিংয়ের ৪র্থতলার বাসায় যায়। যেভাবে খুন করা হয়েছে ॥ তখন শাহ আলমের স্ত্রী নাছিমা বেগম রান্না করছিলেন। পাশের কক্ষে তার একমাত্র মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনী (১০) ঘুমাচ্ছিল। পেটের ব্যথার কারণে সে স্কুলে যায়নি। বেলালকে দেখে নাছিমা বেগম (৩৭) বাসায় আসার কারণ জিজ্ঞাসা করে। একপর্যায়ে বেলাল প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে নাছিমার দিকে এগিয়ে যায় এবং ছুরি দিয়ে তার পেটে ঘা মারে। এ সময় নাছিমা বেলালকে আটাকানোর চেষ্টা করে। বেলাল নিজেকে রক্ষা করতে নাছিমার চুলের মুঠি ধরে রান্নাঘরের সামনের মেঝেতে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করে। মায়ের চিৎকার শুনে মেয়ে রিয়া এগিয়ে আসে। ঘটনা দেখে ফেললে বেলাল রিয়াকে টেনে বাথরুমের দিকে নিয়ে যায়। সে চিৎকার শুরু করলে তাকেও বাথরুমে ফেলে জবাই করে। নিজের অপরাধ ঢাকতে বেলাল ছুরিটি লজিং মাস্টারের কক্ষের সামনে ফেলে যায়। আলমারি খুলে নগদ ৬০ হাজার টাকা এবং কিছু স্বর্ণ নিয়ে যায়। সেই সঙ্গে নিহতের দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে দ্রুত বাসা ত্যাগ করে। কিছুক্ষণ পরে শাহ আলম তাকে ফোনে আসতে বললে সে পুনরায় এসে লাশ নামানোর কাজে পুলিশকে সহায়তা করে। ঘাতক বেলাল যা জানিয়েছে ॥ এ দুটি মোবাইল সে তার প্রেমিকাকে দিয়ে আসে। কয়েকদিন পর আবার মোবাইল দুটি নিয়ে আসতে গেলে প্রেমিকা ফারজানা একটি মোবাইল ফেরত দিতে বাদসাধে। কারণ ফারজানার ভাই রুবেল একটি মোবাইল পছন্দ করেছে। অন্যটি তার পরিচিত আশরাফুলকে দিয়েছে। স্বর্ণগুলো বাকলিয়ার একটি দোকানে ৩৯ হাজার টাকায় বিক্রি করে। প্রেমিকার শখ মেটাতে গিয়ে ওই টাকায় গত ৯ মে একটি টেলিভিশন, একটি ডিভিডি প্লেয়ার, দুটি সাউন্ড বক্স রাউজান ইলেক্ট্রনিক্স নামের একটি দোকান থেকে ক্রয় করে। ঘটনার আগেও ফারজানা গার্মেন্টেসে চাকরি করত। কিন্তু বেলালের মতেই সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। কারণ বেলাল তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছে। গত ১ বৈশাখ সিআরবি এলাকায় ফারজানার সঙ্গে পরিচয় হয়। ফারজানাকে বিয়ে করতে ও তার শখ মেটাতে অনেক টাকা দরকার। টাকার জন্যই সে খুন করেছে। বেলাল ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে মাসে ৮-৯ হাজার টাকা আয় করত। তার বাবা একজন রিক্সাচালক। একমাত্র ছেলে বেলাল।
×