ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সহজ শর্তের কৃষিঋণ বিতরণ কমছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৭ মে ২০১৫

সহজ শর্তের কৃষিঋণ বিতরণ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিতরণ এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলাসহ গ্রামের সাধারণ কৃষকদের সর্বাধুনিক সুবিধার আওতায় আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কমে যাচ্ছে কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ৫.৭১ শতাংশ। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক ১২ হাজার ৩৬১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৪৯ কোটি টাকা বা ৫.৭১ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো জুলাই-এপ্রিল ’১৫ পর্যন্ত ১২ হাজার ৩৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ হাজার ১০৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষিঋণ ৭৪৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি খাতের ঋণে সুদহার তুলনামূলক কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো এ ঋণ বিতরণে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। তাছাড়া মূলত ঋণ নিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি এবং মামলার ভয়ে কৃষকরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়ছেন বলেও ধারণা করছেন তারা। এদিকে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে সম্প্রতি কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণে বর্তমানে নির্ধারিত হারের তুলনায় ২ শতাংশ সুদ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১ জানুয়ারি থেকে কৃষকরা সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ নিতে পারছেন। আগে যেখানে সুদ গুনতে হতো ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ১২ হাজার ৩৬০ কোটি ৯১ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। মূলত সরকারী ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমার ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পুরো অর্থবছরের ৯ হাজার ২৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০ মাসে ৭ হাজার ২১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৮ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছিল ৮ হাজার ১৯৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। আর বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর জন্য এবার ৬ হাজার ৩১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ১০ মাসে তাদের বিতরণ হয়েছে ৫ হাজার ১৪৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৫ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছিল ৪ হাজার ৯১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। কৃষিঋণ কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র মল্লিক বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই হরতাল-অবরোধের কারণে ঋণ চাহিদা কিছুটা কমেছে। কেননা কৃষক ঋণ নিয়ে পণ্য উৎপাদন করলেও বাজারজাত করতে পারছে না। কৃষকদের এ সমস্যার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জন্য কিছু সুবিধা দিচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলো যেন কৃষকদের সঠিকভাবে এসব সুবিধা দেয় সে বিষয়ে কঠোর তদারকি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে প্রতিমাসেই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করা হচ্ছে।
×