ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুখীসুন্দর জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীন ও বাংলাদেশ চেষ্টা করছে

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৬ মে ২০১৫

সুখীসুন্দর জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে চীন ও বাংলাদেশ চেষ্টা করছে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সফররত চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানদং বলেছেন, চীন ও বাংলাদেশ উভয়েই নিজ নিজ দেশ সমৃদ্ধ করার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জাতি ও দেশের পুনরুত্থান এবং জনগণের সুখী জীবনের সুন্দর স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। ‘চীনের স্বপ্ন’ ও ‘সোনার বাংলার স্বপ্ন’ মিলে মিশে পরস্পরকে আলোকিত করেছে। এই সুন্দর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দুদেশের জনগণ হাতে হাত মিলিয়ে একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। আমাদের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুসংহত করা উচিত। বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, চীন ও বাংলাদেশের জন্য মৈত্রী, আস্থা আর সহযোগিতা হলো আসল বিষয়। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের প্রসঙ্গে চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়’ এর উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে অবিচল থাকব এবং সঠিক স্বার্থসংক্রান্ত মূল্যবোধ অনুসরণ করে ঘনিষ্ঠ, আন্তরিক, অনুকূল ও সহনশীল কূটনৈতিক মনোভাব নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অভিন্ন স্বার্থ সম্প্রসারণ করব। সহযোগিতামূলক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক কল্যাণ বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে চীনের বরাবরের চিন্তা, চীন সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। চীন যে ‘রেশম পথ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ এবং একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশম পথ’ সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে তাতে ষাটটিরও বেশি সংশ্লিষ্ট দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থার ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ শুধু চীনের উপস্থাপনা নয়, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর একটি সম্মিলিত সিম্ফোনি। তাছাড়া এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের প্রস্তুতির কাজেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তা পুরোপুরি চালু হলে অনেক দেশই লাভবান হবে। তিনি বলেন, সহযোগিতার ভিত্তিতে দুদেশের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় আরও গভীরতর করা উচিত। কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার লক্ষ্যে দুদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করা উচিত। সহযোগিতা ব্যবস্থা নবায়ন এবং সহযোগিতার খাত বৃদ্ধি করার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, সংবাদ মাধ্যম, ক্রীড়া, পর্যটন এবং স্থানীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা গভীরতর করা উচিত। চীন অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বাংলাদেশীদের জন্য চীনে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাগ্রহণের জন্য বৃত্তি দেবে এবং তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য আরও বেশি সুযোগ তৈরি করবে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে ছয় শতাংশে রয়েছে। অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন সূচকের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের মানুষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীন ও বাংলাদেশের অর্থনীতি পরস্পরের পরিপূরক, তাই সহযোগিতা সম্প্রসারণের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দক্ষিণ এশীয় দেশের সঙ্গে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে চীন। এর লক্ষ্য হচ্ছে দু’পক্ষের উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় জোরদার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের পারস্পরিক কল্যাণনির্ভর সহযোগিতা গভীরতর করা। দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের চল্লিশতম বর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে দুদেশের সার্বিক অংশীদারি সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠতর হবে। বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণের জন্য খুব ভাল প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ আলোচনা, এক সাথে নির্মাণ, এক সাথে উপভোগের নীতি অনুসরণ করে সহযোগিতা ও পারস্পরিক কল্যাণমূলক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে মানব জাতির জন্য এক অভিন্ন স্বার্থভোগী গোষ্ঠী তৈরি করতে ইচ্ছুক চীন। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চল্লিশতম বছর পূরণ হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে দুদেশের পারস্পরিক সম্মান, সমঝোতা ও সমর্থনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সার্বিক বাস্তাবিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ করে আসছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে সুষ্ঠু যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দুদেশ অসাধারণ বন্ধুত্বের দুয়ার খুলে দিয়েছে। ২০১০ সালে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হওয়ায় তা অব্যাহতভাবে নতুন পর্যায়ে বিকশিত হচ্ছে। এখন চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। গত বছর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এক হাজার দুশ পঞ্চাশ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, চীন সরকার আরও একশ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেবে। চীন সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন গবেষণা কেন্দ্রকে ১০ লাখ আরএমবি মূল্যের শিক্ষা সংক্রান্ত সাজ সরঞ্জাম প্রদান করব। কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট সদর দফতর থেকে ১০০ বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীর ‘চীনা ভাষার সেতু’ নামক গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, এই সুন্দর মে মাসে বাংলার মধুমাস জ্যৈষ্ঠে এই দেশে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এটিই আমার প্রথম বাংলাদেশ সফর। কিন্তু এই দেশ আমার কাছে পুরোপুরি অচেনা নয়। এর মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন মহান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে এখানকার জ্ঞানচর্চার পরিবেশ ও তরুণীদের প্রাণোচ্ছ্বাস আমাকে দারুণ মুগ্ধ করেছে। দেশের সুবিখ্যাত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয় নব্বই বছরেরও বেশি সময় ধরে অসংখ্য গুণী ও প্রতিভাবান মানুষ তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকৃতি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র নাথ বসু এবং কবি ও লেখক বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ।
×