ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চীনে এই হার ১৭, সিঙ্গাপুরে ১৭ আর বাংলাদেশে ৪২ শতাংশের বেশি

ব্যাংক কর্পোরেট কর হার কমানো হচ্ছে বাজেটে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৬ মে ২০১৫

ব্যাংক কর্পোরেট কর হার কমানো হচ্ছে বাজেটে

রহিম শেখ ॥ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকের কর্পোরেট বা প্রাতিষ্ঠানিক কর হার কমাতে যাচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে আসছে অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার আড়াই শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর পরিশোধ করতে হয় ব্যাংককে। এটি কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক কর হার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের যুক্তি, ২০১৩ সালে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ব্যাংকিং খাত। এ কারণে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদানের হারও কমে গেছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, তারা যদি আয়ের প্রায় অর্ধেকই সরকারকে দিয়ে দেন, তাহলে তারা বিনিয়োগ করবেন কিভাবে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর হার কমানোর আশ্বাস দেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। ভেটিংয়ের জন্য অবিলম্বে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আগামী ৪ জুন অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে। জানা যায়, চীনে কর্পোরেট কর হার ১৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১৭ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে কর্পোরেট কর হার ৪২ শতাংশের বেশি। হিসাব করলে দেখা যায়, ওইসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের কর্পোরেট কর হার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশে কর্পোরেট কর হার বেশি উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, তুলনামূলকভাবে আমাদের দেশে কর্পোরেট কর হার বেশি। এর প্রধান কারণ এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান কর জালের আওতায় আসেনি। আবার যেসব প্রতিষ্ঠান করের আওতায় এসেছে, সেগুলো থেকেও ন্যায়নিষ্ঠভাবে কর আদায়ের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। এজন্য করের হার বেশি। তবে করদাতা ও গ্রহীতা উভয় পক্ষ আন্তরিক হলে কর্পোরেট কর হার কমানোর যথেষ্ট অবকাশ আছে। তবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। কর্পোরেট করহার কমানো হলে ব্যাংকিং খাত আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠনও একই আবেদন করেছে। এটা কমানো হলে প্রতিটি ব্যাংকের মুনাফা বাড়বে; যার প্রভাব পড়বে ব্যাংকের ব্যবসায়ও। গত মাসের শেষ দিকে ব্যাংকিং খাতে আরোপিত কর হার কমানোর প্রস্তাব দেয় বেসরকারী খাতের ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলে ব্যাংকিং খাতে কর অন্য যে কোন খাতের চেয়ে বেশি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ের ব্যবসায়িক মন্দায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ব্যাংকিং খাত। ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি ব্যাংকগুলো। ২০১৫ সালেও রাজনৈতিক অস্থিরতার আঘাত এসেছে। এ কারণে ব্যাংকিং খাতে কর্পোরেট কর কমানো উচিত। শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবি, ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা কম হওয়ায় ২০১৪ সালের লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা কমে গেছে। এতে ব্যাংকের শেয়ারগুলোর বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ কারণে তারা ব্যাংকের মুনাফার ওপর কর্পোরেট কর ৪২ দশমিক ৫ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন। কর কমানো হলে বিনিয়োগকারীদের বাড়তি লভ্যাংশ দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা। এতে দেশের শেয়ারবাজারে মুনাফার হার বাড়বে; যা মন্দা বাজারকে চাঙ্গা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এ প্রসঙ্গে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের কর্পোরেট কর কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। এটা কমানো হলে সুদহার কিছুটা কমবে। শেয়ারবাজারেও এর কিছুটা প্রভাব পড়বে। সরকারের পক্ষ থেকে চলতি বাজেটে কর কমানোর বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
×