ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভায় ছিটমহল বিনিময়ে সীমান্ত চুক্তি প্রটোকল অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ মে ২০১৫

মন্ত্রিসভায় ছিটমহল বিনিময়ে সীমান্ত চুক্তি প্রটোকল অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে প্রায় চার বছর আগে সম্পাদিত স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রটোকলে অনুসমর্থন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেয়াসহ সামরিক শাসনামলের দুটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার প্রস্তাবও মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমানা নির্ধারণ ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রটোকল (প্রটোকল টু দি এগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্যা গবর্নমেন্ট অব দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ এ্যান্ড দ্যা গবর্নমেন্ট অব দি পিপলস রিপাবলিক অব ইন্ডিয়া কনসার্নিং দ্যা ডিমারকেশন অব দ্যা ল্যান্ড বাউন্ডারি বিটুইন বাংলাদেশ এ্যান্ড ইন্ডিয়া এ্যান্ড রিলেটেড ম্যাটারস) অনুসমর্থনের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নে কতটুকু সময় প্রয়োজন হবে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মাধ্যমে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হলো। এখন শুধুমাত্র এটি বাস্তবায়নে দুই দেশের এজেন্সিগুলো কাজ করবে, যা কর্মকর্তা পর্যায়ে হবে। এর জন্য যতটুকু সময় লাগে। এখন শুধুমাত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরে বাংলাদেশর সঙ্গে এক্সচেঞ্জ অব ইন্সট্রুমেন্ট হবে। ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এর আওতায় বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা। বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেও জমি হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ভারতের সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রটোকলে অনুসমর্থন আটকে ছিল। ৬ ও ৭ মে ভারতীয় রাজ্যসভা ও লোকসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তির জন্য আনা সংবিধানের সংশোধনী বিল পাসের বাধা কাটে। রাষ্ট্রপতিকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব দেয়াসহ সামরিক শাসনামলের দুটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা ‘প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ (সর্বাধিনায়কতা) আইন, ২০১৫’ এবং ‘প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ (আইন সংশোধন) আইন, ২০১৫’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, সামরিক শাসনামলের অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য সর্বোচ্চ আদালতের রায় ছিল। এর ধারাবাহিকতায় মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ছিল অধ্যাদেশগুলো যেগুলো দরকার তা বাংলায় নিয়ে আসতে হবে এবং যদি দরকার হয় তাহলে সংশোধন বা পরিমার্জন করতে হবে। সে অনুযায়ী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ দুটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। অধ্যাদেশ দুটি আইনে পরিণত করার ক্ষেত্রে তেমন কোন পরিবর্তন করা হয়নি। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালের ‘ডিফেন্স সার্ভিসেস সুপ্রিম কমান্ড অর্ডিন্যান্স’ বাংলা করে নতুন আইন করা হচ্ছে। ফলে এখানে কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।এ বিষয়ে সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত হইবে। এবং আইনের দ্বারা তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হইবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রপতি এ আইনের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেন। আর প্রস্তাবিত আইনে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহের সর্বাধিনায়ক হইবেন এবং তিনি সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের অধীনে তাহার ওপর ন্যাস্ত প্রতিরক্ষা বিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা প্রতিরক্ষা বিভাগের বাহিনী প্রধানদের মাধ্যমে প্রয়োগ করিবেন। রাষ্ট্রপতির সাধারণ নির্দেশনা সাপেক্ষে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানগণ তাহাদের অধীন বাহিনীর ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেন। মোশাররাফ হোসাইন বলেন, ‘১৯৭৮ সালের ‘ডিফেন্স সর্ভিসেস ল’ (্এ্যামেনডমেন্ট) অর্ডিনেন্স-’ এর বদলে ‘প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ (আইন সংশোধন) আইন’ করা হচ্ছে। তবে ওটা ‘অরিজিনাল’ অধ্যাদেশ না। আর্মি এ্যাক্ট ১৯৫২, এয়ারফোর্স এ্যাক্ট-১৯৫৩, নেভি অর্ডিনেন্স-১৯৬১ এবং ‘আর্মি এ্যান্ড এয়ারফোর্স রিজার্ভ এ্যাক্টস-১৯৫০ ও নেভি এক্সেশন সার্ভিসেস-১৯৫০’ এ কিছু কিছু সংশোধনের করা হয়েছিল ১৯৭৮ সালের এক অধ্যাদেশে, যার নাম ছিল ‘ডিফেন্স সার্ভিস ল (এ্যামেন্ডমেন্ট) অর্ডিন্যান্স-১৯৭৮’।’ সামরিক শাসনামলে করা হয়েছিল বলে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন এ বিষয়ে নতুন আইন করা হচ্ছে বলে জানান সচিব।
×