ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দু’যুগ ধরে অধ্যাদেশে চবিতে ভিসি নিয়োগ হচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৫ মে ২০১৫

দু’যুগ ধরে অধ্যাদেশে  চবিতে ভিসি নিয়োগ হচ্ছে না

চট্টগ্রাম অফিস/রহমান শোয়েব, চবি ॥ দীর্ঘ দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া লঙ্ঘিত হয়ে আসছে। চবি প্রশাসন অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সরকার দলীয় স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় এনে ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় লিপ্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ প্রথম লঙ্ঘিত হয় ১৯৯১ সালে। ওই সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে সরকারদলীয় পছন্দের ভিসি নিয়োগ দেয়। এরপর থেকে চবি প্রশাসনে দলীয়করণ, কোন্দল, শিক্ষক মহলে দলাদলির জের হিসেবে সামগ্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। সর্বশেষ দীর্ঘ সময় পর সিনেট সদস্যদের ভোটে ভিসি নিয়োগে তিন জনের একটি প্যানেল নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল গেল শনিবার। কিন্তু রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট ও চাকসু নির্বাচন না দিয়ে ভিসি প্যানেল নির্বাচন দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আহূত সিনেটের বিশেষ সভা আদালত স্থগিত ঘোষণা করে। এর ফলে ১৯৭৩ সালের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী দীর্ঘ দু’যুগ সময় পর সিনেট সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত তিনজনের প্যানেল থেকে চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতির আদেশে ভিসি নিয়োগ দেয়ার সৃষ্ট সুযোগটি আদালতে গড়াল। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকসহ আগ্রহী সংশ্লিষ্ট সকল মহল রীতিমতো স্তম্ভিত। কেননা, প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়াটি পুনরায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে চবি ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেট সদস্যদের মাধ্যমে ৩ জনের প্যানেল নির্বাচনের জন্য গত ২৩ মে সভা আহ্বান করা হয়েছিল। তাঁর মতে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল সেটি বাধাগ্রস্ত করেছে, যা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রম ও গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য শুভ নয়। এ বিষয়ে সিনেট সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ভিসি নিয়োগ জরুরী। তবে এক্ষেত্রে সিনেটের বিভিন্ন ক্যাটাগরিপূর্ণ করাও প্রয়োজন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রফেসর ড. সালেহ উদ্দিন জানান, ‘বর্তমান ভিসি বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট শুরু থেকে লঙ্ঘন করে আসছেন। এখন তিনি শুধুমাত্র নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শিক্ষক প্রতিনিধিদের দিয়ে ভিসি প্যানেল নির্বাচন দিতে চাচ্ছেন। কারণ, এ শিক্ষক প্রতিনিধিরা সকলেই তাকে ভোট দেবেন। তিনি জানান, বর্তমান ভিসি দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাই এখন তিনি নিজ স্বার্থে যে কোন কিছু করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৫ জুন বর্তমান সরকারপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মোঃ আনোয়ারুল আজিম আরিফ প্রথম দফায় ভিসি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের মোট সদস্য ১০১ জন। এর মধ্যে ভিসি, প্রো-ভিসি, সরকার মনোনীত ৫ কর্মকর্তা, স্পীকার কর্তৃক মনোনীত ৫ সংসদ সদস্য, চ্যান্সেলর মনোনীত ৫ শিক্ষাবিদ, সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত ৫ গবেষক, একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ৫টি কলেজের অধ্যক্ষ, একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়েল অধীনস্থ কলেজসমূহ হতে ১০ শিক্ষক, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচিত ২৫ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি, শিক্ষক নির্বাচিত ৩৩ শিক্ষক প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীদের ৫ প্রতিনিধি রয়েছেন যারা শিক্ষার্থী কর্তৃক নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে গত ২ মে সিনেটের ৩৩ শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০১ সালে। আর সর্বশেষ রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে। সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে। এ অবস্থায় রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন ও চাকসু নির্বাচন না দিয়ে শুধু শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিয়ে ভিসি প্যানেল নির্বাচন আহ্বান করায় হাইকোর্টে রীট করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। এই তিন শিক্ষক হলেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী ও পালি বিভাগের প্রভাষক লিটন মিত্র। তাদের রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ চবির ভিসি প্যানেল নির্বাচন মঙ্গলবার (আগামীকাল) পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই দিন পরবর্তী শুনানির দিনও ধার্য করেন। রিটকারী তিন শিক্ষকের মতে, সিনেটের রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন ও চাকসু নির্বাচন না দিয়ে শুধু শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিয়ে ভিসি প্যানেল নির্বাচন আহ্বান করা যৌক্তিক নয়। ১৯৮৬ সালের পর এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন যাদের অনেকেই সিনেটের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। অন্যদিকে চাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিও নেই। এ বিষয়ে রিটকারী শিক্ষকগণ বলেন, শুধু শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন দিয়ে ভিসি প্যানেল নির্বাচন আহ্বান করা আমাদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। তাই আমরা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। এখন আদলত যে সিদ্ধান্ত দেয় তাই মেনে নেব।
×