ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও বাদ পড়েনি

সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে বিদ্যুতের ভূগর্ভস্থ লাইন কাটা পড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৫ মে ২০১৫

সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে বিদ্যুতের ভূগর্ভস্থ লাইন কাটা পড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করে উন্নয়ন কর্মকা- চালানোয় কাটা পড়ছে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুত সরবরাহ লাইন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনাও এর হাত থেকে বাদ পড়ছে না। মাটির নিচে কোথায় কোন লাইন রয়েছে তা না দেখে উন্নয়ন কর্মকা- চালানোয় বারবার কেবল কাটা পড়ার ঘটনা ঘটছে। নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ কাজ করার বিধান থাকলেও তোয়াক্কা করছে না সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। গত শনিবার দিবাগত রাতে ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনের সময় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) কাওরান বাজার থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিদ্যুত সরবরাহ লাইনটি কাটা পড়ে। ওই ১১ কেভির ভূগর্ভস্থ কেবল কাটা পড়ায় রাত ১০টা ৫০ মিনিট থেকে ১২টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুত লাইনটি চালু করা হয়। ডিপিডিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়টি স্পর্শকাতর স্থাপনা। রাতে আকস্মিকভাবে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। দ্রুত এখানে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুত সরবরাহ চালু করা হয়। তিনি বলেন, শুধুমাত্র দায়িত্ব অবহেলার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের কাজ করার সময় ভূগর্ভে কোন কোন ধরনের সরবরাহ লাইন রয়েছে সে বিষয়ে জরিপ করতে হয়। কিন্তু আমাদের এখানে কোন জরিপ করা হয় না। ভূগর্ভে যে কোন কাজ করার সময় সংশ্লিষ্ট সকল কোম্পানির উপস্থিতি থাকার বিধান থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিপিডিসিকে জানানোই হয় না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাতে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রবিবার দিনভর বিদ্যুত বিভাগে এ নিয়ে তৎপরতা দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষের উদাসীনতা কোন অবস্থাতে মানা হবে না সতর্ক করা হয়। ডিপিডিসি এ দিন সকালেই নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। ডিপিডিসির স্পেশাল টাস্কফোর্সের প্রধান মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই নোটিসে বলা হয় এরকম ক্ষতি করার জন্য বিদ্যুত আইনের ৪০ এবং ৪০(১) এর ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রয়েছে। একই দিন বিকেলের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে উপযুক্ত প্রতিনিধিকে রবিবার সাড়ে ৪টার মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বিকেলে এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, নোটিসের প্রেক্ষিতে নাভানার পরিচালক (অপারেশন) আসাদুজ্জামান এবং উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শফিউল ইসলাম খান ডিপিডিসিতে গিয়ে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তারা বলছে বিষয়টি নিছক দুর্ঘটনা। তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেনি। কোম্পানিটিকে এজন্য জরিমানা করা হবে বলেও জানান ডিপিডিসির স্পেশাল টাস্কফোর্সের প্রধান। তিনি বলেন, আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর হচ্ছি। আশা করছি জবাবদিহিতার আওতায় আসলে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। এর আগে গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের সামনে মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে পাইলিং করার সময় তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ডিপিডিসির ১৩২ কেভি (সার্কিট-১) লাইনটি কেটে ফেলে। এজন্য ২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ বিঘিœত হয়। এই লাইনটি ঠিক করতে ডিপিডিসির এক মাস লেগে যায়। এজন্য তমা কনস্ট্রাকশনকে ৮৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ডিপিডিসি সূত্র জানায় লাইনটি মেরামত করতে এক মাস সময় প্রয়োজন হয়। এতে করে বিকল্প পন্থায় বিদ্যুত সরবরাহ করা হলেও রমনা, পরিবাগ, শেরেবাংলানগর, কাকরাইল ও আজিমপুর এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাস জুড়েই লোডশেডিং করতে হয়। কারিগরি ত্রুটিতেও এগিয়ে রয়েছে রাজধানীর এই বিতরণ কোম্পানি। সম্প্রতি লালবাগে কারিগরি ত্রুটির কারণে টানা ১৩ দিন বিদ্যুত বিভ্রাট হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ সমস্যা নিয়ে কারও কাছে যেতেও পারেনি।
×