ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নজরুল সঙ্গীত শিল্পীদের অভিমত

তবু আমারে দেব না ভুলিতে

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৫ মে ২০১৫

তবু আমারে দেব না ভুলিতে

শাহীন সামাদ ॥ আমাদের প্রেক্ষাপট আর এখনকার শিল্পীদের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। এখন তাদের জন্য শুদ্ধভাবে নজরুল সঙ্গীত শেখার অনেক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আমি যখন ছায়ানটে গান শেখাই তখন বুঝতে পারি শিক্ষার্থীরা কত নিখুঁতভাবে গানটা কণ্ঠে তুলে নিতে পারছে। এবং আমরা চেষ্টা করছি যতদূর সম্ভব শুদ্ধভাবে তাদের গানটা শিখিয়ে দিতে। ছায়ানটসহ অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর ভাল ভাল শিল্পী তৈরি হচ্ছে। এরা অনেক ভাল গান করছে। নজরুল সঙ্গীত প্রশিক্ষণ এবং প্রচার শুধু এখন ঢাকা কেন্দ্রিক নেই, গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করি এটাই যথেষ্ট নয়। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে প্রতিবছর নজরুল সঙ্গীতের সিডি প্রকাশ হওয়া উচিত। এবং মিডিয়াগুলোরও এ বিষয়ে তৎপর হওয়া উচিত। ফাতেমা তুজ জোহরা ॥ নজরুলের গান নিয়ে যে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল তা এখন আর নাই। শুদ্ধভাবে নজরুল চর্চার সময় এসেছে। আমরা শুদ্ধভাবে এই গান করতে পারছি। শিল্পীরা নিবেদিত হয়ে এই গানের চর্চা করবে এটাই আমার প্রত্যাশা। এখনকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অনেক প্রতিভা আছে যার ফলে গানের শুদ্ধতা বজায় রেখে তারা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারছে। তবে গানের ক্ষেত্রে আরও চর্চা ও নিবেদিত হয়ে গান করতে হবে এদের। সুজিত মোস্তফা ॥ আমাদের দেশে আগের তুলনায় নজরুল চর্চা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। আমরা এখনও নজরুল আদর্শে দীক্ষিত হতে পারিনি। উচিত ছিল সব সচেতন মানুষই নজরুল চর্চায় এগিয়ে আসবে, বিভিন্ন অবস্থান থেকে এর পৃষ্ঠপোষকতা করবে কিন্তু এ বিষয়ে অনেকেই যেন উদাসীন। আমাদের দেশে নজরুল সঙ্গীতের শিল্পী হয়ত বেড়েছে কিন্তু কোয়ালিটি বাড়ে নাই। যা যা করলে আমরা আরও বেশি করে নজরুল দীক্ষায় দীক্ষিত হতে পারতাম এবং নজরুলকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারতাম সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। কিছু কিছু শিল্পী নজরুলের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে বিভিন্ন মাধ্যমে আমন্ত্রণ পায় নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন ও এ বিষয়ে কিছু বলার জন্য কিন্তু এ বিষয়টা চলমান নয়। সালাহ্উদ্দীন আহমেদ ॥ আমি কখনও আশাহত হই না। আমাদের দেশে কোন এক সময় জাতীয়ভাবে নজরুল জয়ন্তী এক দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, এবার সেটা ৭ দিন ধরে হচ্ছে, এটা খুবই আশার সঞ্চার করে। নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার অর্থে নজরুল সম্পর্কে জানাতে হলে শুধু জন্ম ও মৃত্যু দিবসে নয়, সারা বছরজুড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁকে তুলে ধরতে হবে। শুধু বাণিজ্যিক দিকে লক্ষ্য দিলে নজরুল চর্চার প্রসার হবে না। নজরুল ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক কবি ও লেখক। দেশের কিছু অশিক্ষিত লোক নজরুলকে সাম্প্রদায়িক বানানোর চেষ্টায় লিপ্ত। নজরুল জীবিতকালেও তাঁর ওপর এমন অপবাদ দেয়া হয়েছে কিন্তু নজরুলের গুরুত্বকে বাঙালী কখনই উপেক্ষা করতে পারে নাই। ফেরদৌস আরা ॥ নজরুল সঙ্গীতের একজন প্রশিক্ষক হিসেবে বলতে পারি, নতুনদের জন্য ক্ষুদে গানরাজ, সেরা কণ্ঠসহ বেশকিছু প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে, যার ফলে অনেকে এদিকে এগিয়ে এসেছে। এর ফালে ভাল ভাল কণ্ঠ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোকে কন্টিনিউ করে নেয়ার একটা বিষয় আছে। পারিবারিকভাবে সাপোর্ট ও চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। সব মিলিয়ে বলতে পারি নজরুল সঙ্গীতের প্রেক্ষাপট উর্ধমুখী। আমার উপলব্ধি থেকে বলছি, গান গাওয়ার চেয়ে নিজে কতখানি তৈরি হচ্ছি বা হয়েছি এটা কিন্তু বড় বিষয়। নিজে তৈরি না হলে শিল্পী হওয়ার ক্ষেত্রে শূন্যতা থেকে যাবে। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন চ্যানেল বা অনুষ্ঠানে দু-একটি গান গেয়ে এবং স্কিনের জন্য তৈরি হয়ে নিজেকে শিল্পী মনে করে। সেখানে দৃশ্যমানতা মুখ্য। ফলে একজন শিল্পী হতে হলে যে চর্চা বা স্টক থাকা প্রয়োজন তার ভেতর সেটা থাকছে না। খায়রুল আনাম শাকিল ॥ কোন এক সময় নজরুলের গানের শুদ্ধতা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। এখন নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে তার গানের স্বরলিপি বেরিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরও গানের স্বরলিপি বের করার প্রস্তুতি চলছে। সব মিলিয়ে আগের তুলনায় নজরুল সঙ্গীতের চর্চা অনেক বেড়েছে। আমি ছায়ানটে শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নতুন প্রজন্মের মধ্যে নজরুলের গান শেখার প্রবণতা অনেক। আমি আশাবাদী আগামীতে আমাদের দেশে নজরুল সঙ্গীতের এক বিশেষ ক্ষেত্র তৈরি হবে। শারমিন সাথী ইসলাম ময়না ॥ নতুন প্রজন্ম অনেকেই নজরুলের গানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তারা শিখছে। সে অর্থে বলা যায়, নজরুলের গানের দিক থেকে আমরা বেশ খানিকটা এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু গান পরিবেশন করার প্লাটফর্ম খুবই কম। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বছরে হাতে-গোনা কয়েক অনুষ্ঠান করে যেখানে শিল্পীরা নজরুলের গান পরিবেশন করার সুযোগ পায়। সার্বিক দিক দিয়ে বলা যায়, নজরুলের গানের চর্চা আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু সার্বিক নজরুলকে তেমন এগিয়ে নিতে পারছি না। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ॥ নিঃসন্দেহে আমাদের দেশে নজরুল সঙ্গীতের চর্চা আগের তুলনায় বেড়েছে কিন্তু এটা সীমাবদ্ধ রয়েছে নজরুলের জন্ম ও মৃত্যু দিবসকে কেন্দ্র করে। দেশে অনেক টিভি চ্যানেল রয়েছে কিন্তু সেখানে বছরে খুব কমই নজরুল সঙ্গীতের অনুষ্ঠান হয়। শুধু নজরুল জয়ন্তী ও মৃত্য দিবস আসলে আমরা যারা নজরুল সঙ্গীত চর্চা করি তাদের ডাকা হয়, অন্য সময় নয়। যার ফলে নতুন প্রজন্ম অনেক সময় আশাহত হয়। কষ্ট করে সঙ্গীত সাধনা করে যদি তার বহির্প্রকাশ না ঘটানো যায় তা হলে সে ধরনের বিষয়ে আগ্রহ কমে আসে। তবে এখন নতুনরা যেভাবে নজরুলের গানের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে, আগামীতে আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
×