ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষকদের ধরুন

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৫ মে ২০১৫

ধর্ষকদের ধরুন

এবার ঢাকার রাস্তায় বাসের অপেক্ষায় থাকা নারী কর্মজীবীকে তুলে নিয়ে চলন্ত মাইক্রোবাসের ভেতরেই ধর্ষণ করল কয়েকজন ধর্ষক। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ধীরগতিতে গাড়িটি চালিয়ে মুখ ও হাত-পা বাঁধা তরুণীটিকে উপর্যুপরি ধর্ষণ করা হয়। এমনকি ধর্ষণের সময়ও তার দেহে অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখা হয়। এই তরুণীর ওপর পাঁচ পাষন্ডের এই বর্বরতা থেকে বুঝতে কষ্ট হয় না যে, ধর্ষকরা কতটা নিষ্ঠুর-বর্বর। তাদের ঘৃণিত এই কাজ অপরাধবিজ্ঞানের কোন্ সংজ্ঞায় ফেলা যাবে? ঢাকার রাজপথে অনেক স্থানেই সিসিক্যামেরা চালু রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল রয়েছে। ঘটনা সংঘটনের সময় তেমন রাতও হয়নি। সে সময় প্রধান সড়কগুলোতে রীতিমতো যানজট লেগে থাকে। এতসব বিষয়কে অপরাধের জন্য ধর্ষকরা বাধা মনে করেনি। কিংবা এভাবেও বলা যায়, তারা এসবের তোয়াক্কাও করেনি। পার্শ্ববর্তী দেশে একাধিকবার চলন্ত বাসের ভেতর নারীর ওপর গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের হার ভারতের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে সারা বছর ধর্ষণের ঘটনা নারী নির্যাতনের শতকরা ১৮ ভাগ, যা ভারতে ৯.৫ ভাগ। এছাড়া শুধু ঢাকায় সারা বছরে ধর্ষণের ঘটনা মোট নারী নির্যাতনের শতকরা ২০.৪৬ ভাগ, যা নতুন দিল্লীতে ৯.১৭ ভাগ। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মতো সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অধিকাংশই এখনও তাঁদের ওপর নির্যাতন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার কথা প্রকাশ করতে চান না। আর ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা পুলিশের কাছে থানায় কিংবা আদালতে মামলা করেন। তাই সরকারের খাতায় প্রতিবছর যতগুলো ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে মনে করেন সমাজবিদরা। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অপহরণের পর ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। তবে রাজধানীতে চলন্ত মাইক্রোবাসের ভেতর গণধর্ষণের ঘটনা এই প্রথম। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজটিই বেশি জরুরী। সে লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই। মনে রাখতে হবে ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি শহরেই বহু কর্মজীবী নারীকে সন্ধ্যার পর কর্মস্থল থেকে একাকী ঘরে ফিরতে হয়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার প্রশাসন তা সুনিশ্চিত করবে- এমনটা মানুষের প্রত্যাশা। ধর্ষকদের ধরতে হবে প্রথমে, এরপর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষিত তরুণীকে সার্বিক সহায়তা দেয়াটাও মানবিক কর্তব্য। সর্বোপরি এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে নারীরা ঘরের বাইরে নিজেদের নিরাপদ ভাবেন। কাজটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।
×