ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত বিভাগে দক্ষ জনবল সঙ্কট তীব্র

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৩ মে ২০১৫

বিদ্যুত বিভাগে দক্ষ জনবল সঙ্কট তীব্র

ধরশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত বিভাগ দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিপিএমআই) গঠন করা হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের জন্য দক্ষ জনবল সঙ্কট দূর করতে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিদ্যুত বিভাগ। দেশে বিদ্যুত কেন্দ্র সম্প্রসারণের ফলে পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে অভিজ্ঞদের সরিয়ে নিয়ে নতুন কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন কেন্দ্রেও যে পুরোপুরি প্রয়োজনীয় জনবল দেয়া সম্ভব হয়েছে তা নয়। দেশের সরকারী বেসরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে দক্ষ জনবলের অভাব দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। জনবল সঙ্কটে ভবিষ্যতে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেসরকারী উদ্যোক্তারা বাড়তি বেতনে সরকারী কেন্দ্র থেকে জনবল সংগ্রহ করছেন। কোন কোন উদ্যোক্তা দেশের বাইরে থেকে জনবল এনে বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনা করছেন। পিডিবি সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জসহ দেশের সকল বিদ্যুত কেন্দ্রেই জনবলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করায় এখান থেকে দক্ষ জনবল সরিয়ে সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন নতুন কিছু জনবল নিয়োগ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারে অপ্রতুল। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে সরকার সকলের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে চায়। এ জন্য বিশাল এক কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন হচ্ছে। উৎপাদন-সঞ্চালন এবং বিতরণে হাতে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। বিদ্যুত বিভাগের মহাপরিকল্পনা-২০১০ তে বলা হচ্ছে ২০৩০ সালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৩৪ হাজার মেগাওয়াটে গিয়ে দাঁড়াবে। এজন্য ওই সময়ে দেশে অন্তত ৪০ হাজার মেগাওয়াটের স্থাপিত ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্র থাকা দরকার। কিন্তু এখন ১১ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রেই দক্ষ জনবলের সঙ্কট পোহাতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আগামী ১৫ বছরে আরও তিনগুণ বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র পরিচালনার জন্য যে জনবল প্রয়োজন তা নেই। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, শুধু উৎপাদনেই নয়, বিতরণ এবং সঞ্চালনেও দক্ষ জনবল প্রয়োজন। বিতরণ সংস্থার ক্ষেত্রে এমনও দেখা যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল অথবা সাব-স্টেশনের ত্রুটি সারাতে দেশের বাইরে থেকে প্রকৌশলী আনতে হচ্ছে। অথচ দেশে দক্ষ প্রকৌশলী থাকলে সময় এবং অর্থের অপচয় কম হতো। এতে বিদ্যুত বিতরণ সংস্থাগুলোর লাভের পাশাপাশি মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা কমত। ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশে এমন অনেক প্রকৌশলী রয়েছেন তারা হয়ত অবসরে রয়েছেন তবে কর্মক্ষম। তাদের মাধ্যমে নতুন প্রকৌশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তাহলে একজন অভিজ্ঞ মানুষের সংস্পর্শে এসে হাতে-কলমে এমন অনেক কিছুই শিখতে পারবেন ওই নবীন প্রকৌশলী, যা তিনি হয়ত জানতেন না। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বিদ্যুত কেন্দ্র পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। দক্ষ জনবল ছাড়া কোন খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিপিএমআই) গঠন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর বিদ্যুত বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিদ্যুত খাতের জন্য একটি আলাদা প্রতিষ্ঠান গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। তার প্রেক্ষিতে ট্রাস্ট এ্যাক্ট ১৯৮২ এর আওতায় বাংলাদেশ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিপিএমআই) গঠনের জন্য একটি খসড়া ডিড অব ট্রাস্ট প্রস্তুত করে বিদ্যুত বিভাগ, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন দফতর, সংস্থা এবং কোম্পানির কাছে প্রেরণ করা হয়। তাদের মতামতের ভিত্তিতে খসড়ায় পরিবর্তন এনে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ গত বৃস্পতিবার বিদ্যুত ভবনে আয়োজিত এক বৈঠকে ডিড অব ট্রাস্টের ওপর কর্মকর্তাদের মতামত শোনেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী বিরবিক্রম, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম ছাড়াও বিদ্যুত বিভাগের সকল দফতর, সংস্থা এবং কোম্পানির শীর্ষ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। খসড়া ডিড অব ট্রাস্টে বলা হচ্ছেÑ বিদ্যুত খাতের উৎপাদন-সঞ্চালন-বিতরণের মানবসম্পদ উন্নয়নের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে বিপিএমআই। প্রতিষ্ঠানের একটি পৃথক পরিচালনা পরিষদ থাকবে, যার নেতৃত্ব দেবেন একজন চেয়ারম্যন। এতে একজন সদস্য সচিব থাকবেন, যিনি বিপিএমআইয়ের মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করবেন। প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মনোনয়ন দেবে নির্বাহী পরিষদ। তহবিল গঠনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে বিভিন্ন অবদান রাখায় অর্জিত অর্থ নানা রকম ফি এবং অনুদানে এ তহবিল গঠন করা হবে। ট্রাস্ট আইন-১৯৮২ এর মাধ্যমে এর আওতা বৃদ্ধি করতে পারবে বিপিএমআই।
×