ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বদেশ রায়

নতুন ছায়াছবি- ‘সালাহউদ্দিন খুনী নয় হিরো’

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২১ মে ২০১৫

নতুন ছায়াছবি- ‘সালাহউদ্দিন খুনী নয় হিরো’

গত কয়েকদিন বাংলাদেশের কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার সংবাদ পরিবেশনের মাত্রা দেখে মনে হচ্ছে ভারতের রাজ্য মেঘালয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির বরপুত্রের আবির্ভাব ঘটেছে। সালাহউদ্দিন নামক বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব গোপন অবস্থানে থেকে পাঠানো একের পর এক বিবৃতিতে দুই মাসে দেশের কত নিরীহ মানুষকে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়েছে- তা একেবারেই ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। ওই চ্যানেল ও পত্রিকাগুলো এমনভাবে সংবাদ পরিবেশন করছে যেন বাংলাদেশের কোন এক মহামানবের আবির্ভাব ঘটেছে ভারতের রাজ্য মেঘালয়ে। একটি পত্রিকাতে সালাহউদ্দিন ও তার স্ত্রীর দুই মাস পরে সাক্ষাতের যে বর্ণনা লিখেছে তা উত্তম-সুচিত্রার হিট ছবির কাহিনীকারের মিলনের বর্ণনাকেও হার মানায়। এসব পত্রিকার রিপোর্টার ও সম্পাদকদের ধন্যবাদ দিতে হয়, তাদের এই উপস্থাপনার জন্যে। তবে মানুষ খুশি হতো, সংবাদপত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন হতো- যদি এর থেকেও মর্মস্পর্শী ভাষায় ওই সব পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপা হতো, যে স্ত্রীর স্বামীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে সে আর কোনদিন তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে পারবে না সেই কাহিনীটি। না, সেখানে তারা বেমালুম চেপে যাচ্ছে। মুনতাসীর মামুনের মতো নির্লোভ ও আপোসহীন হলে আমিও নিঃসন্দেহে এই সব সম্পাদক ও সাংবাদিককে মুনতাসীর মামুনের ভাষায় ধান্দাবাজ বা গোলাপীপ্রেমী বলতে পারতাম। কিন্তু আমার পক্ষে তা বলা সম্ভব নয়, কারণ আমিও এই পক্ষীকুলের একজন। তবে সাংবাদিক হিসেবে টিভি চ্যানেলগুলো সম্পর্কে আমার অভিযোগ কম। কারণ, এদের অনেকেই নাবালক। এদের পক্ষে সঠিক সাংবাদিকতা করতে এখনও সময় ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। যাহোক, এ কথাও বেশি বলতে পারি না- কারণ, কার নিন্দা কর তুমি, মাথা কর নত। যাহোক, অন্তত এক শ’র বেশি মানুষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার অন্যতম হুকুমদাতা সালাহউদ্দিন মেঘালয়ে উপস্থিত হয়ে একটি গল্প পরিবেশন করেছেন। পাশাপাশি চমৎকার অভিনয়ও করছেন। গল্পটি হলো, কিভাবে তাকে অপহরণ করে মেঘালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিনের এই গল্পের পরে দেশের মানুষকে ভাবতে হবে, কেন একই ধরনের গল্প সৃষ্টি হচ্ছে? এগুলো কি তাহলে কোন এক বিশেষ জায়গা থেকে সৃষ্টি করা হচ্ছে? আর তাই যদি হয়, তাহলে এর উদ্দেশ্য কী? নিশ্চয়ই দেশবাসীর মনে আছে একাত্তরের নরহত্যাকারী, নারী ধর্ষণকারী রাজাকার সৈয়দ মহিবুল হাসানের কন্যা সৈয়দা রেজোয়ানা হাসানের স্বামী অপহরণের নাটকে ঠিক এমনি একটি গল্প ফাঁদা হয়েছিল। সেখানেও তার চোখ বাঁধা ছিল; কিন্তু কয়টার সময় কোন্ জায়গায় গাড়ি বদল করা হয়, পথ পাহাড়ী ছিল না নদী পার হয়েছিল সবই তিনি বর্ণনা দিয়েছিলেন। সালাহউদ্দিনকেও নাকি চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় অথচ তিনি গাড়ি বদল থেকে পথের যাবতীয় বর্ণনা দিচ্ছেন। অবশ্য নারী ধর্ষণকারীর কন্যার স্বামী থেকে বিএনপি নেতা সকলের ওপর তেঁতুল হুজুরের দোয়া আছে। তাই হয়ত তারা চোখ বাঁধা থাকলেও গায়েবী দৃষ্টি দিয়ে সব কিছু দেখতে পাচ্ছেন। প্রশ্ন আসবেই, সালাহউদ্দিন কেন মেঘালয়ে? একজন পশ্চিমা কূটনীতিকও এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন সম্প্রতি। তাকে বলি, একজন সাংবাদিক হিসেবে যতদূর জানি শুধু সালাহউদ্দিন নয়, বিএনপির অনেক নেতা এ মুহূর্তে ভারতে আছে। এমনকি যতদূর জানা যায়, মির্জা আব্বাসও ভারত থেকে এসে জামিন নেবার চেষ্টা করেছিলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচার চালানোর জন্য। সিটি নির্বাচনের পরে আবার তিনি নাকি অবৈধপথে ভারতে চলে গেছেন। যে কারণে পিন্টুর মিলাদের প্রেস রিলিজ দেয় মির্জা আব্বাসের পিএস। সালাহউদ্দিনের শিলংয়ে যাবার বিষয়টি নিয়ে দুটি সূত্র থেকে এ পর্যন্ত দু’রকম সংবাদ পাওয়া গেছে। একটি সূত্র বলছে, সালাহউদ্দিন অসম গিয়েছিল মূলত নেপাল যাবার উদ্দেশে। কিন্তু এর ভেতর নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হবার পর আর সেদিকে তিনি যেতে পারেননি। অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, সালাহউদ্দিনের শিলংয়ে আসার বিষয়টি পুরোপুরি উলফার (অসমে অবশ্য ‘আলফা’ বলে বাংলাদেশে উলফা বলে পরিচিত ভারতের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটি) সঙ্গে জড়িত। অসমের গৌহাটিসহ বড় বড় শহরে এখন আর ওইভাবে উলফার আস্তানা নেই। তাই হয়ত শিলংয়ের আশপাশে শহরতলির কোন গ্রামে উলফার আস্তানায় সালাহউদ্দিন ছিলেন। পরে হয়ত মেঘালয়ের পুলিশের তৎপরতার কারণে ওই উলফা সদস্যরা আস্তানা ত্যাগ করতে বাধ্য হলে সালাহউদ্দিনও বাধ্য হয়েছেন এভাবে ধরা দিতে। মেঘালয়ে যে এ ধরনের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশী তৎপরতা চলছে তা কিন্তু ১৮ তারিখ শিলং টাইমসে প্রকাশিত সালাহউদ্দিন সংক্রান্ত সংবাদটিতেই উল্লেখ আছে। ওই রিপোর্টে মেঘালয় পুলিশ বলছে, সালাহউদ্দিন যাতে দ্রুত হাসপাতাল থেকে রিলিজ পেয়ে কোর্টে উপস্থাপন হয় তা তাদের জন্য ভাল। কারণ তাদের শিলং ও গারো হিলসের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটিতে যোগ দেয়া জরুরী। মেঘালয় পুলিশের এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা জরুরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে এখন ব্যস্ত। এবার প্রশ্ন সালাহউদ্দিন কেন উলফার আস্তানায় থাকবে? কেনই বা তিনি উলফার সঙ্গে যাবেন? উলফার সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিএনপির ২০০১-২০০৬-এর আমলে বাংলাদেশে উলফার ১৪৩টি ট্রেনিং সেন্টার ছিল। ভারত সরকার যার প্রত্যেকটির অবস্থান নির্ণয় করে বিএনপি সরকারকে জানিয়েছিল। এমনকি বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যদি সেবার ভারতে কংগ্রেস দুর্বল মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় না এসে আবার বিজেপি ক্ষমতায় আসত তাহলে এই উলফার ঘাঁটি নিয়ে ভিন্ন ঘটনা ঘটত। ভারত যেমন ভুটানে অপারেশন চালিয়ে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি ভেঙ্গে দিয়েছিল। বাংলাদেশেও হয়ত কিছু একটা ঘটত। তাছাড়া এদেশের অনেকেই জানেন, ২০০১-এর নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য উলফা বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগান দেয়। ওই নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান লতিফুর রহমান থেকে শুরু করে তার কয়েক উপদেষ্টা যে উলঙ্গভাবে বিএনপির পক্ষে কাজ করে তার মূল কারণ ছিল কিন্তু ওই অর্থ। ওই উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন এমন একজন সৎ শিল্পপতি ওই সময়ে একটি অনুষ্ঠানে কলিম শরাফী ভাইকে বলেছিলেন, সীমান্ত পথে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা ঢুকছে যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে। তাছাড়া ওই সময়ে একটি ইংরেজী ও বাংলা দৈনিকের মালিক ও একটি বহুল প্রচলিত সাপ্তাহিকের সম্পাদক এবং মালিকের মাধ্যমে যে উলফা সদস্যরা হাওয়া ভবনে প্রচুর টাকা পৌঁছে দিয়েছিল এ বিষয়টি বর্তমান সরকার এখনও তদন্ত করলে হয়ত বের করতে পারে। তাছাড়া বেগম জিয়া তাঁর সব ভাষণে ভারতের উত্তর-পূর্ব এই রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘স্বাধীনতাকামী’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি তাঁর বেশ কয়েকটি ভাষণে তাদের সমর্থনও করেছেন। এছাড়া বেগম জিয়ার এই ৯২ দিনের অগ্নি মাধ্যমে নরমেধযজ্ঞের অন্যতম এক হোতা মারুফ কামাল খানের লেখাও সরকার নিরীক্ষা করে দেখতে পারে। তিনিও সব সময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বাধীনতাকামী হিসেবে উল্লেখ করেন। এমনকি ছোট্ট একটি উদাহরণ, অসমের উলফা সমর্থিত এক পোর্টাল সাংবাদিক এমনও কমেন্ট করেছেন ফেসবুকের মেসেজ অপশনে যে, শেখ হাসিনাকে হত্যার পরেই সে বাংলাদেশে আসবে- এর আগে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসবে না। এর থেকে বোঝা যায়, উলফা কতটা শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী এবং কতখানি বিএনপির ন্যাচরাল এ্যালি। তাই বিএনপির এই সহিংস আন্দোলনে উলফা যে সাহায্য করবে না এটা চিন্তা না করার কোন কারণ নেই। এছাড়া উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ও তারেক রহমান একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাচালানে জড়িত তার প্রমাণ তো দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ার ঘটনা। সালাহউদ্দিন যে এই ধরনের ভারতের ক্ষতিকর কোন শক্তির আশ্রয়ে ছিল তার আরও একটি প্রমাণ, শুরু থেকে মেমরি লস হয়েছে এমন অভিনয় করছেন সালাহউদ্দিন। এছাড়া সালাহউদ্দিন যে ভারতের এই ধরনের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ছিল তা বিএনপি নেতারাও কম-বেশি জানে। যে কারণে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ জনি বলছেন তিনি মেমরি লস করেছেন। অন্যদিকে ওই হাসপাতালের ডাক্তার ডি. জে গোস্বামী বলছেন, তিনি স্বাভাবিক ও তাৎক্ষণিকভাবে কথা বলছেন। ডা. গোস্বামীর বক্তব্য প্রমাণ করে সালাহউদ্দিন মানসিক ভারসাম্যহীন নন। তাই সালাহউদ্দিনের মানসিক সমস্যা বা ব্রেনের সমস্যাটি দেখানো হচ্ছে মূলত কোন কিছু আড়াল করার জন্য। বিষয়টি এজন্য, ওনি তো মানসিক ভারসাম্যহীন তাই যা বলছেন এর থেকে বিস্তারিত কিছু বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। যা একটি যড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রে উলফার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের পত্রিকা দুটির ভূমিকাও কিন্তু অনেক কিছু স্পষ্ট করে দিচ্ছে। তাদের প্রথম দিন থেকে পরিবেশিত নিউজ লক্ষ্য করলেই অনেক কিছু বোঝা যায়। তাদের নিউজের সূক্ষ্ম উদ্দেশ্য, সালাহউদ্দিনকে সরকারের কেউ সেখানে রেখে এসেছে এবং তিনি এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তাকে জেরা করে কোন লাভ নেই। এই দুটি পত্রিকাসহ আরও কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও আরেকটি ভিন্ন ধরনের পত্রিকা এ কাজটি সচেতনভাবে করছে। তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার, তারা সূক্ষ্মভাবে প্রমাণ করতে চাচ্ছে বর্তমান সরকার আমলে ভারত-বাংলাদেশ কোন বর্ডার নেই। যা জামায়াত ও বিএনপি তাদের ভাষণে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলে। অন্যদিকে সালাহউদ্দিনকে তারা মানসিক ভারসাম্যহীন তৈরি করে মূল ঘটনা চাপা দিতে চাচ্ছে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে আরও কিছু পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল তো একই কাজ করছে! তাদের সম্পর্কে ওই একটি বিশেষ বিজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করা যায়, ...আমি এমনি এমনি খাই। এছাড়াও আরও একটি বিষয় এখানে কাজ করে, যার কিছুটা মুনতাসীর মামুনের সেই ‘গোলাপী প্রেম’। তবে আরেকটি বড় বিষয় হলো আমাদের যোগ্যতা। আসলে আমাদের সব থেকে বড় ক্ষতি হয়ে গেছে বাল্যশিক্ষা থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ বই দুটি বাদ দিয়ে। দ্বিতীয় ভাগ পড়া থাকলে আমাদের সমাজের ও রাষ্ট্রের এই সমস্যা কেন, এর উত্তরটি সকলের কাছে সহজ হয়ে যেত। শিশুকালে দ্বিতীয় ভাগে বানান করে করে উচ্চৈঃস্বরে পড়ে আসতে হতো, ‘যোগ্যতার বিকল্প নেই।’ আমাদের অনেক সমস্যার মূল এখানেই। যোগ্যতার ঘাটতি আমাদের অনেক সমস্যার সৃষ্টি করছে। সব পেশাতেই। যেমন সালাহউদ্দিন তথাকথিত নিখোঁজ হবার পরে তার স্ত্রীর মাধ্যমে বিএনপি হাইকোর্টে একটি রিট করায়। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল দৃষ্টিটি ভিন্ন দিকে নেবার। এই রিটের সঙ্গে সঙ্গে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের মহামান্য বিচারপতিদ্বয়, সরকারের প্রতি নোটিস জারি করে দিলেন সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করার। বিচারপতিদ্বয়ের কোন দোষ নেই, ভুলও নেই। কারণ ‘তাহারা জানেন সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয় এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায়।’ তাই তারা সূর্যের এই নির্দিষ্ট গতির ভেতর ফেলেই সিদ্ধান্ত নেন, যেহেতু সালাহউদ্দিনকে পাওয়া যাচ্ছে না অতএব বিচার বিভাগের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগকে শোকজ করা। অতএব, শোকজ। কিন্তু সূর্যের যে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন আছে তা জানতে হলে তো বিচারপতি খায়রুল হক বা শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক হতে হয়। মুন সিনেমা হলের মালিকানার মামলা থেকে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয় এই যে সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন এইখানেই দ্বিতীয়ভাগের কথা মনে পড়ে, ‘যোগ্যতার বিকল্প নেই’। যে লোকটির গায়েবি ঘোষণায় দেশে শতাধিক লোককে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো, কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হলো দেশের, তিনি নাকি গায়েব হয়েছেন- আর তার রিটেই বিচারপতি শুধু চিন্তা করলেন সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়। তিনি তো গায়েবই ছিলেন, কেন তাকে সরকার এতদিন ধরতে পারল না, আর এই নরহত্যাকারীর কেন শাস্তির আওতায় আনা হলো না এতদিন- সূর্যের এই উত্তরায়ণ-দক্ষিণায়ন কি বিচারপতির দায়ের মধ্যে পড়ে না? তবে মিথ্যে এ আশা, কারণ যারা এই আদেশ দিয়েছেন তারা কি খায়রুল হক, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক! শ্রদ্ধেয় বিচারপতি খায়রুল হক ও শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আমাকে মাফ করবেন আপনাদের তাদের পাশে নিয়ে গিয়ে তুলনা করার এ অপরাধের জন্য। এ তুলনাও অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তবে তারপরেও আমাদেরকে এখন থেকে এদেশের আইনজীবী ও বিচারপতিদের অনুসরণ করতে হবে। ছেলেমেয়েদের সবাইকে আইন পড়াতে হবে। অন্য কোন বিষয় আর ছেলেমেয়েকে পড়ানো উচিত হবে না। কারণ, আমাদের প্রধান বিচারপতি বার ও বেঞ্চ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় জানিয়ে দিয়েছেন, পৃথিবীর সকল বড় মানুষই আইনজীবী পেশা থেকে এসেছেন। তাঁর উল্লেখিত ব্যক্তিরা হলেন- মহাত্মা গান্ধী, জওয়াহেরলাল নেহরু ও কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাড়ি সিলেট, এ যাবত জানা ছিল সিলেটে এ পর্যন্ত তিনজন গ্রেট ম্যান জন্মেছেন, চৈতন্যদেব, হাছন রাজা ও সৈয়দ মুজতবা আলী। প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে এই জ্ঞান পাবার পর এই তিনজনের নাম কেটে দিতে হবে এখন। এছাড়া পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সত্যেন বোস, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় অন্যদিকে রাসেল, রুশো, টলস্টয়, ভলতেয়ার এমনকি মার্কস এঁরা কেউ আইনজীবী ছিলেন না। আইনস্টাইনেরও প্রোফাইল নতুন করে পড়লাম, না, আইন পড়ার কোন তথ্য পেলাম না। মনে করতে গেলে তো আবার সক্রেটিস, প্লেটো, হেগেল সব এসে যায়। আসলে এঁদের নিয়ে এখন আমরা কী করব এ জন্য উচ্চ আদালতের একটি গাইডলাইন পেলে ভাল হতো। যেমন উচ্চ আদালত সরকারকে সালাহউদ্দিন বিষয়ে শুধু তাকে খুঁজে বের করতে শো’কজ করে হিরো বানানোর পথ কিছুটা হলেও খুলে দিয়েছে। সত্যি বিচিত্র এ দেশ- খুনী হিরো হয় আর নিরীহ নিহতরা চলে যায় বিস্মৃতির অতলে। কবে শেষ হবে চেতনাহীন এই অন্ধকার রাজ্য! [email protected]
×