ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাইবার জগতের কিলারদের সন্ধানে গোয়েন্দারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২১ মে ২০১৫

সাইবার জগতের কিলারদের সন্ধানে গোয়েন্দারা

শংকর কুমার দে ॥ জামায়াত-শিবিরের ফেসবুকার, ব্লগার, সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রক শতাধিক গ্রুপের সন্ধানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এই গ্রুপগুলো তৎপরতা চালাচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। এই গ্রুপে আছে সুসাইডাল গ্রুপও। উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধতার অপপ্রচার চালানোর জঙ্গী তৎপরতা উস্কানিদাতা তারা। প্রগতিশীল, মুক্তমনা, অসাম্প্রদায়িক মতবাদের পক্ষকে কতল করে তারা। অবরোধ-হরতালের নাশকতার আন্দোলন, সরকারবিরোধী কর্মকা- ও জঙ্গী তৎপরতায় উস্কানির নির্দেশনা ফেসবুকসহ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে এসব গ্রুপ। এ খবর দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে শুধু জিয়াউদ্দিন ফাহাদ ও অভিজিত হত্যাকা-ে জড়িত ফারাবীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা যে তথ্য দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, অভিজিত, রাজিবকে হত্যা করাকে সমর্থন করেন তারা এবং তাদের সহযোগী সুইসাইডাল গ্রুপ হত্যা করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে তারা। যারা প্রগতিশীল মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক ব্লগার তারাও হত্যার তালিকায়। এ জন্য তাদের সুইসাইডাল গ্রুপ রয়েছে, যারা কতল করে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছায়। তাদের সাইবার জগতের শতাধিক গ্রুপের সংখ্যা দিন দিনই বাড়ছে। কারণ এখন গ্রামেগঞ্জে চলে গেছে ইন্টারনেট সংযোগ। সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় মাঠে নেমেছে গ্রামেগঞ্জের জামায়াত-শিবির কর্মীরাও। গোয়েন্দা সূত্র জানান, ফারাবী ও ফাহাদসহ জামায়াত-শিবিরের তালিকাভুক্ত শতাধিক সদস্য আইটিতে অত্যন্ত পারদর্শী। বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে তারা প্রগতিশীল লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী, বিচারক, পুলিশ ও সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে তারা। তাদের সঙ্গে রয়েছে জঙ্গীদের ঘনিষ্ঠতা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লেখক অভিজিত রায়কে হত্যার পর উগ্রপন্থী ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেফতার করা হয়। ফারাবীও একসময় ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিল। বাঁশের কেল্লা, বাঁশের কেল্লা ইউএসএ, ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, ‘আওয়ামী ট্রাইব্যুনাল, বাকশাল নিপাত যাক, আই অ্যাম বাংলাদেশী, ডিজিটালরূপে বাকশাল, বিএএন বাঁশখালী নিউজ-২৪, ইসলামী অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, তরুণ প্রজন্ম, ভিশন ২০২১-সহ অর্ধশতাধিক ফেসবুক পেজের এ্যাডমিন হিসেবে ফাহাদ কাজ করছিল। এসব ফেসবুক পেজ থেকে বিচার বিভাগ, পুলিশ, লেখক ও সাহিত্যিকদের ব্যঙ্গচিত্র শেয়ারের পাশাপাশি হত্যার হুমকি নিত্যদিনের। আর এই পোস্টগুলো ছাত্রশিবিরের প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহযোগীদের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আসল নামের পাশাপাশি সে বিপ্লব দহন ও ট্রুথ ফাইটার ছদ্মনামে ফেসবুক ও ই-মেইল আইডি খুলে অনলাইনে ধর্মীয় উগ্রবাদী প্রচারণা চালাত। জামায়াত-শিবিরের আইটিবিষয়ক সমন্বয়কও ফাহাদ। জিজ্ঞাসাবাদে ফারাবী ও ফাহাদ-দু’জনেই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছে, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ছাত্রদেরকে মটিভেটেড করে তাদের গ্রুপে নিয়ে আসে তারা। একবার মগজ ধোলাই করা গেলে, তারা নিজের জীবন দিতে দ্বিধা না করে, শহীদ হতেও প্রস্তুত। অনেকেই পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জিহাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সাইবার জগতের নিয়ন্ত্রক হন। এটা এক উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধতার নেশা। মানুষের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে সমাজে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে তারা। জামায়াত-শিবির পরিচালিত বাঁশের কেল্লার প্রধান হোতা এ কে জিয়াউদ্দিন ফাহাদ ও অভিজিত হত্যায় অভিযুক্ত ফারাবীকে জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য মিলেছে বলে দাবি করেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
×