ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিঙ্গাপুর নয়, শিলংয়ে চিকিৎসা হবে সালাহউদ্দিনের ॥ ছাড়পত্রের পর আদালতে হাজিরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২১ মে ২০১৫

সিঙ্গাপুর নয়, শিলংয়ে চিকিৎসা হবে সালাহউদ্দিনের ॥ ছাড়পত্রের পর আদালতে হাজিরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে সিঙ্গাপুরে নয়, ভারতের মেঘালয়ের শিলং সিভিল হাসপাতাল থেকে সে দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইন্দিরা গান্ধী হেলথ ও মেডিক্যাল সায়েন্স হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে সালাহউদ্দিনের কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছে। এর আগে তার চর্মরোগ ধরা পড়ে। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সালাহউদ্দিনকে শিলং হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সালাহউদ্দিনের চিকিৎসায় গঠিত হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেকই তাকে ওই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ স্বামীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বার বার সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসছেন। হাসপাতালের ছাড়পত্র পাওয়ার পর পরই অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের দায়ে দায়েরকৃত মামলার আসামি হিসেবে সালাহউদ্দিনকে মেঘালয় আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছে শিলং পুলিশ। সালাহউদ্দিনকে বিদেশ বা নিজ দেশে পাঠানোর বিষয়টি ভারতের আদালতের ওপর নির্ভর করছে বলেও শিলং পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। সালাহউদ্দিনের পক্ষে আইনী লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ভারতের মেঘালয়ের অপরাধবিষয়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস পি মাহান্ত। গত ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় সালাহউদ্দিন। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে শিলং সিভিল হাসপাতালে আসামিদের জন্য থাকা নির্ধারিত ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালটির হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জি কে গোস্বামীর সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে সালাহউদ্দিনের চিকিৎসা চলছে। বুধবার সকালে শিলং সিভিল হাসপাতালে সাক্ষাতের পর সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীকে আইনী প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করার আগে উন্নত চিকিৎসার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তার স্বামীর হার্ট, কিডনি ও স্পাইনাল কর্ড সমস্যা ছাড়াও ব্যাকপেইন রয়েছে। গত বিশ বছর ধরে তার স্বামী সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। তাই তিনি স্বামীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে আবারও আগ্রহ প্রকাশের কথা জানান। বিচারাধীন মামলার আসামিকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইনী জটিলতার বিষয়ে তিনি মেঘালয়ের অপরাধবিষয়ক আইনজীবী এস পি মাহান্তর কনিষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে মঙ্গলবার আলোচনা করেছেন। বুধবার এস পি মাহান্তর সঙ্গেও আলোচনা হয় সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের। এস পি মাহান্ত সালাহউদ্দিনের পক্ষে আইনী লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী। তবে এস পি মাহান্তর সঙ্গে আইনী প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা সর্ম্পকে কিছুই জানাননি তিনি। এদিকে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলছেন, সালাহউদ্দিনের বিদেশ পাঠানোর বিষয়টি অসম্ভব। কারণ তিনি অবৈধপথে ভারতে প্রবেশ করেছেন। এমন অপরাধে তার বিরুদ্ধে ভারতে একটি মামলাও হয়েছে। আইনের চোখে তিনি অপরাধী। ভারতে দায়েরকৃত মামলার আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সালাহউদ্দিনকে আইন মোতাবেক বাংলাদেশে পাঠানোর কথা। বাংলাদেশেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। সেসব মামলায়ও তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য সালাহউদ্দিনের বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি খুবই জটিল এবং প্রায় অসম্ভব। গত ৫ মার্চ থেকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ চলার মধ্যেই গত ১১ মার্চ সালাহউদ্দিনের স্ত্রী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, তাঁর স্বামীকে গত ১০ মার্চ রাতে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে গুম করে ফেলা হয়েছে বলে পরিবার ও দলের তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিল। এদিকে গত মঙ্গলবার সিটিস্ক্যান করার উদ্দেশে ওয়ার্ড থেকে শিলং সিভিল হাসপাতালের মূল ভবনে নেয়ার সময় সালাহউদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তাকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় শিলংয়ে নেয়া হয়েছে। শিলং পৌঁছানোর আগে কয়েক দফায় গাড়ি বদল করা হয়। হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায়ই তাকে অনেক জায়গায় ঘুরানো হয়েছে। এরপর তাকে শিলং নিয়ে যাওয়া হয়। আর ঢাকা থেকে অপহরণের পর তাকে একটি ছোট্ট কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে গ্রেফতার করতে বাংলাদেশ পুলিশ রেডএলার্ট জারি করায় তার দেশে ফেরায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নিজেই স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করে পুলিশের কাছে যান। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। নিজের পরিচয় দিয়ে এসব কথা বলার পর পুলিশ তাকে মানসিকরোগী ভেবে হাসপাতালে পাঠায়।
×