ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বহিরাগতদের সংশোধিত ভোটার লিস্ট ছাপতে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২১ মে ২০১৫

বহিরাগতদের সংশোধিত ভোটার লিস্ট ছাপতে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ

আরাফাত মুন্না ॥ বার কাউন্সিলের নির্বাচনে ভোটার তালিকা নিয়ে নানা বিতর্কের পর অবশেষে বহিরাগতদের দিয়ে সংশোধিত ভোটার তালিকাই মুদ্রণে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভোটার তালিকায় অসংখ্য দ্বৈত ভোটার থাকার বিষয়ে প্রশ্ন ওঠায় এক দফা নির্বাচন পিছিয়েছে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটির। বার কাউন্সিল সূত্র জানিয়েছে, বহিরাগতদের দিয়ে সংশোধিত এই ভোটার তালিকায় পূর্বের তালিকার তুলনায় ১৪৪১ ভোট কমেছে। এই তালিকায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৪৭ হাজার ২৪। পূর্বের তালিকায় যা ছিল ৪৮ হাজার ৪৬৫। সূত্র জানায়, পূর্বের তালিকা থেকে দ্বৈত ভোট চিহ্নিত হওয়ায় ১৬৪৯টি নাম কর্তন করা হয়। এছাড়া প্রথম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়া ২০৮টি নাম যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত এই তালিকায়। কাউন্সিল সূত্র জানিয়েছে, বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এজে মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে বহিরাগতদের দিয়ে তালিকা সংশোধনের পর ১৮ মে সন্ধ্যায় তা মুদ্রণের জন্য পাঠানো হয়েছে ছাপা খানায়। দু-একদিনের মধ্যেই এই ভোটার তালিকা ছাপা শেষ হয়ে বার কাউন্সিলে আসবে। পরে এই ভোটার তালিকায় পাঠানো হবে ভোট কেন্দ্রগুলোতে। এদিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন সাত দিন পিছিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হলেও, বহিরাগতদের দিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন করায় এখন এই তালিকা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়েই প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। উল্লেখ্য, বার কাউন্সিলে বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা ক্ষমতায় রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা এজে মোহাম্মদ আলী কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পদাধিকারবলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। গত ১৭ মে বার কাউন্সিলে জনকণ্ঠের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, এজে মোহাম্মদ আলীর কক্ষেই দুজন বহিরাগত বার কাউন্সিলের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করছিল। যদিও ওই সময় এজে মোহাম্মদ আলী তার কক্ষে ছিলেন না। তবে এদের মধ্যে একজন জনকণ্ঠের কাছে স্বীকার করেছেন এজে মোহাম্মদ আলী তার সহযোগিতার জন্য তাদের কাজ করতে বলেছেন। তবে ওইদিন বার কাউন্সিলের সচিব (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, বার কাউন্সিলের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে বাইরের কারো কাজ করার সুযোগ নেই। এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান এই কাজটি করবেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে বার কাউন্সিলের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সঙ্গে নিতে পারেন এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান। পরে গত ১৮ মে জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। গত ২৫ মার্চ বার কাউন্সিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ওই তফসিল অনুযায়ী ২০ মে ভোট গ্রহণের কথা ছিল। তবে গত ৯ এপ্রিল ভোটার তালিকা প্রকাশের পর এ তালিকায় ‘অস্পষ্টতা ও একই নাম একাধিকবার’ থাকার কথা জানিয়ে কাউন্সিলের বিদায়ী পাঁচ সদস্য এবং ১০১ জন আইনজীবী গত ২৯ এপ্রিল আলাদাভাবে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিবকে চিঠি দেন। এতে অভিযোগ আসে, আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও কাউন্সিল নিজস্ব নথিপত্রের সাহায্য না নিয়ে আইনজীবী সমিতিগুলোর পাঠানো সদস্য তালিকা ধরেই ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। কাউন্সিলের যে পাঁচ সদস্য তালিকা নিয়ে আপত্তি তুলে চিঠি দিয়েছেন তারা হলেন- সৈয়দ রেজাউর রহমান, এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, আব্দুল মতিন খসরু, এম এম মুজিবুর রহমান ও তানিয়া আমীর। তালিকা প্রকাশের কোন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা ছিলেন না জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এ ভোটার তালিকা ‘স্বচ্ছভাবে’ হয়নি। কোন নির্বাচিত সদস্য এ কাজের সঙ্গে ছিলেন বলেও তারা জানেন না। এ ভোটার তালিকায় আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির নম্বর ও তারিখ, ভলিউম নম্বর ও সনদের পৃষ্ঠা সংখ্যার কোন কলাম নেই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। দুই কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম এসেছে, এমন সাতজন আইনজীবীর উদাহরণ তুলে ধরে এতে চিঠিতে বলা হয়, এরকম হাজারও ভোটারের নাম একাধিকবার এসেছে বলেই তাদের সন্দেহ। ১০১ জন আইনজীবীর স্বাক্ষরে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিবকে পাঠানো চিঠিতেও ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। চিঠিতে বলা হয়, একাধিক জেলা বারের সদস্য হিসেবে অনেকের নাম একাধিক জেলা বারের তালিকায় স্থান পেয়েছে। আবার সুপ্রীমকোর্ট বার ও ঢাকা বারের ভোটার তালিকায় থাকা এক ব্যক্তির নামও দুইবার কাউন্সিলের ভোটার তালিকায় এসেছে। এ অবস্থায় ‘জালিয়াতি ঠেকাতে’ তালিকা সংশোধন করে পুনঃপ্রকাশের দাবি জানান ১০১ আইনজীবী। এরপর গত ১২ মে বার কাউন্সিলের জরুরী তলবী সভা ডাকা হয়। ওই সভায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সাত দিন পেছানো হয় ভোট গ্রহণের দিন (২০ মে’র পরিবর্তে ২৭ মে)। এছাড়া ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করতে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এজে মোহাম্মদ আলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
×