ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়ক প্রশস্তকরণের নামে অবাধে গাছ কর্তন ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঢোপকল

অপরিকল্পিতভাবে চলছে রাসিক ॥ সব কার্যক্রমে স্থরিবতা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২০ মে ২০১৫

অপরিকল্পিতভাবে চলছে রাসিক ॥ সব কার্যক্রমে স্থরিবতা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পরিকল্পনা না থাকায় রাজশাহী নগরীর সবকাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কোথায় কেথায় কাজ করতে গিয়ে তদারকির অভাবে সব গুলিয়ে ফেলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে নগরবাসী চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে নগরীতে সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কেটে ফেলছে এক ধারের নানা প্রজাতির গাছ। এমনকি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে রানী হেমন্ত কুমারীর স্মৃতিবিজড়িত রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঢোপকলগুলোও। রাজশাহীবাসী ঢোপকলগুলো রক্ষায় আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সমায়িক বরখাস্তের পর ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও ভারপ্রাপ্ত মেয়র বা প্রশাসক এখনও রাসিকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে দায়িত্ব পালনে রাসিক কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অনীহা দেখা দিয়েছে। প্যানেল মেয়র-১ জেল হাজতে, প্যানেল মেয়র-২ পলাতক এবং প্যানেল মেয়র-৩ এর দায়িত্বভার পাওয়া নিয়ে জটিলতা থাকায় স্থবির হয়ে পড়ছে রাসিক। এতে রাসিকের প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কর্মকা- ব্যাহত হচ্ছে। থমকে দাঁড়িয়েছে উন্নয়ন কর্মকা-। ফলে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে নগরের অচলাবস্থা। বিশেষ করে মেয়রসহ ২৬ কাউন্সিলরের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সমস্যাকে ঘনীভূত করে তুলেছে। অধিকাংশ ওয়ার্ড কাউন্সিলর উন্নয়ন কর্মকা-ের বাইরে রয়েছেন। ফলে সমস্যা মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে নগরবাসীকে। রাসিকের সকল কার্যক্রমই চলছে ঢিলাঢালাভাবে। শুধু উন্নয়ন নয়, সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি হচ্ছে না ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এতে বেড়ে যাচ্ছে মশা-মাছির উপদ্রব। নতুন মেয়র নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত উন্নয়নের কোন পরিকল্পনাই গ্রহণ করা হয়নি। নগরীর নতুন কোন পরিকল্পনা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিপাতেই এলাকায় পানি জমে। দুই বছর আগে নগরীর উন্নয়নে যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল তার অধিকাংশ কাজও এখন বন্ধ। এদিকে নগরীতে চলছে নিয়ম ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। দেখার কেউ নেই। কোন স্থানে সংস্কারের প্রয়োজন হলে তার সংস্কারের নামে আরও অকেজো করে দেয়া হচ্ছে। বেআইনী হলেও রাস্তার ওপর ইট-বালু ফেলে অবাধে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। সূত্র মতে, রাসিক নিয়ন্ত্রিত রাজশাহী চিড়িয়াখানাটি এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে খাদ্যের অভাবে খাঁচা ছেড়ে পালিয়েছে অজগর। এরআগে খাঁচা থেকে পালিয়েছিল একটি মেছো বাঘ। রাসিক নিয়ন্ত্রিত এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যে সেখানে সুষ্ঠুভাবে চলছে। কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ড চালাচ্ছেন ওয়ার্ড সচিবরা। তারা অফিসিয়াল কাজ চালালেও জনসম্পর্কিত সকল কাজই এখন বন্ধ। এতে কাজের নাই কোন গতি। কাজ হচ্ছে কোনভাবে দায়সারা গোছের। সম্প্রতি রাজশাহী নগরীতে কয়েকটি পয়েন্টে শুরু হয়েছে উন্নয়ন কাজ। বিশেষ করে রাস্তা প্রশস্তকরণের নামে চলছে গাছপালা হরিলটু। নগরীর উপশহরে চারলেনের রাস্তা তৈরির নামে সাবাড় করা হয়েছে গাছপালা। কাজের নামে মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এতে অনেক বাড়ির গ্যাস ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক লাইন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দিনের পর দিন। এছাড়া রাজশাহী নগরীর ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে কোর্ট পর্যন্ত চারলেনের রাস্তা সংস্কারের নামে কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। এমনকি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে রানী হেমন্ত কুমারীর স্মৃতিবিজড়িত রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঢোপকলগুলোও। অথচ পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করলে এগুলো রক্ষা করা যেত। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজশাহী যে কিভাবে চলছে আর কারা চালাচ্ছেন তা বোঝা মুশকিল। তিনি বলেন, সবকাজে ধীরগতির কারণে এখন নাগরিকরা ভোগ করছেন নানা যন্ত্রণা। এ ব্যাপারে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় রয়েছেন বলে জানান। ফোনে পাওয়া যায়নি রাসিকের প্রধান প্রকৌশলীকেও।
×