ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শার্শার ১৩ যুবকের খোঁজ আজও মেলেনি

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৯ মে ২০১৫

শার্শার ১৩ যুবকের খোঁজ আজও মেলেনি

স্টাফ রিপোর্টার, বেনাপোল ॥ দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও বিভিন্ন সময়ে নদীপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়া শার্শার ১৩ যুবকের খোঁজ মেলেনি আজও। শার্শা থেকে নদীপথে মালয়েশিয়া যাওয়া ওই ১৩ যুবকের পরিবার পরিজনদের গ্রামে আজ শুধুই কান্নার রোল। উপার্জনক্ষম পরিবারে ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অভাবের সংসারে নির্বাক নারীরা। শোকে কাতরে অনেকের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। উল্লেখ্য, শার্শার বারীপোতা, বলিদাদাহ, নারানপুর, পান্তাপাড়া ও শিকারপুরের ১৩ যুবক নদীপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে দুই থেকে তিন বছর যাবত তাদের কোন খোঁজ নেই। সংসারের অভাব অনটন দূর করতে মোটা অঙ্কের টাকা রোজগারের আশায় নদীপথে টেকনাফ হয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে তারা নিখোঁজ হয়। বর্তমানে তারা বেঁচে আছে না মারা গেছে তাদের পরিবারের কেউ জানে না। স্থানীয় দালাল চান্দালীর ছেলে আকবার ও সামসুর রহমানের ছেলে শুকুর আলীর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বিদেশ পাড়ি দেয়ার আশায় বুক বাঁধে বিত্তিবারী পোতা গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে জামাল হোসেন, আয়ুব আলীর ছেলে মোহর আলী, মুজিবার রহমানের ছেলে মুনসুর আলী ও নজরুল ইসলাম, নারানপুর গ্রামের সামসুর রহমানের ছেলে-তানা, বলিদাহ গ্রামের জাহান আলীর ছেলে মোকলেস আলী, শার্শা পান্তাপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ইকলাস হোসেন, গঙ্গানন্দপুর গ্রামের সামাদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, ইদ্রিস আলীর ছেলে মেহেদী হাসান, আতিয়ারের ছেলে রাসেল হোসেনসহ ১৩ যুবক। তারা মালেশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে আর ফিরে আসেনি। এখন তারা কোথায় কি অবস্থায় আছে তাও জানে না কেউ। সংসারে সুখের আশায় সহায় সম্বল, জমিজিরাত, ফলদ ও বনজ গাছ, গরু-ছাগল হাঁস-মুরগি বিক্রি করে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা তারা পর্যায়ক্রমে গুনে দেয় দালালের হাতে। এরপর তাদের টেকনাফের হারুন দালালের মাধ্যমে নদীপথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয় তারা। সেই থেকে আজ অবধি নিখোঁজ এই ১৩ যুবক। ট্রলার ও জাহাজ ডুবিতে অনেকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আত্মরক্ষায় জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে আসা-ইকলাস হোসেন। তাকে দা নিয়ে তাড়া করে দালালরা। এ সময় ইকলাসের সঙ্গে আরও ৭ জন পালিয়ে এলেও জাহাজে থাকা তিনশ’ ৫০ জনের করুণ কাহিনী বলতেই কেঁদে ফেলে ইকলাস। শার্শা সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, কয়েকবার এ নিয়ে গ্রামে বৈঠক করা হয়েছে। তবে দালালরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। নিখোঁজ মুুজিবর রহমানের স্ত্রী ফাহিমা খাতুন বলেন, বাসা বাড়িতে ও মাঠে কাজ করে চলছে বর্তমানে তাদের সংসার। স্বামীর খোঁজ তারা আজও পায়নি। একই কথা বলেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী শেফালি বেগমও। জামাল হোসেনের মা হামিদা খাতুন কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বামী ও সন্তানকে ফিরে না পাওয়ার বেদনায় হত বিহ্বল তারা। নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের জীবিত বা মৃত ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছে সরকারের কাছে। এদিকে এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম শরিফুল আলম বলেন, প্রকৃত তথ্য জানা নেই তাদের। তবে নিখোঁজ সদস্যদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×