ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানব পাচার ঠেকাতে স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৮ মে ২০১৫

মানব পাচার ঠেকাতে স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া

দু’দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মতৈক্য স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানব পাচার ঠেকাতে স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া। অবৈধভাবে মানব পাচার প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুই দেশ নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে আরও জনশক্তি নেয়ার জন্য দেশটির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। অপরদিকে মালয়েশিয়ায় একটি শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। রবিবার মালয়েশিয়ায় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের মধ্যে এক বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। বৈঠকের বিষয়ে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার সাবাহ প্রদেশের কোটা কিনাবালু শহরে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে মানবপাচার রোধে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। আর মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আনিফাহ আমান। এর আগে শনিবার দু’দেশের অতিরিক্ত সচিবদের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক হয়। অত্যন্ত উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দু’দেশের মধ্যকার বর্তমান আন্তরিক সম্পর্ক নিয়ে দুই নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে দু’দেশের স্বার্থে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়সহ নিয়মিত যোগাযোগ রাখার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন তারা। বৈঠকে সাগর পথে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় মানব পাচার ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানে আসার জন্য দুই দেশ একমত হয়। তারা একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়। মানবপাচার প্রতিরোধে দুই দেশ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে একটি বৃহত্তর উদ্যোগ নেবে বলেও জানানো হয়। সূত্র জানায়, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যেতে এখন কয়েক হাজার বাংলাদেশী নাগরিক সাগরে ভাসছে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। এসব নাগরিকদের মালয়েশিয়ার সীমান্তে ভিড়তে না দিয়ে বিভিন্ন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়া উচিত। তবে মালয়েশিয়া সরকার সেটা না শুনে অবৈধ অভিবাসীদের সে জাহাজ ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই এসব নাগরিকের সাগরেই মৃত্যু হতে পারে। আবার এসব নাগরিকরা অবৈধভাবে সাগর পথে পাড়ি দেয়ায় সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশও। সে কারণে উভয় দেশই মানবপাচর ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানে আসতে একমত হয়েছে। বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে একমত পোষণ করেন। সেইসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, পর্যটন, সংস্কৃতি, শিক্ষা, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দুই দেশের অবস্থান নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন তারা। বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মালয়েশিয়া দক্ষিণ-দক্ষিণ এ্যাসোসিয়েশন (এমএসএসএ) ও বাংলাদেশ মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে (বিএমসিসিআই) বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে বলেও সিদ্ধান্তে আসেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় আরও জনশক্তি নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এ সময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মানে মালয়েশিয়ায় একটি শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। জবাবে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয়ার কথা বলেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে আসিয়ান সংলাপের অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমানের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। এ বিষয়ে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে বলে নিশ্চয়তা দেন দেশটির আনিফাহ আমান। বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পাশাপাশি ২০১৭ সালে ঢাকায় যৌথ কমিশনের বৈঠকে অংশ নেবেন বলেও একমত হন। বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দেশটির একটি ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবে যোগ দেন মাহমুদ আলী।
×