ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ অস্বীকার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিলিপের কাজে চলছে হরিলুট

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ মে ২০১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিলিপের  কাজে চলছে হরিলুট

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ হাওড় অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়নে হরিলুট চলছে। ইফাদ এবং স্পেনের অর্থায়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওড়বেষ্টিত সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলার ২৬টি উপজেলার ১৬৫টি ইউনিয়নে এ কাজ চলছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব উপজেলার কাজে চলছে হরিলুট। কাজ নামমাত্র হচ্ছে। নেই কোন তদারকি। সড়কের ভাটিতে ধানক্ষেতে ৪টি করে রড গেড়ে এর সঙ্গে রিং, বাইন্ডার, আর মেন রোডের ফ্রেমে কাঠের সাঁটার বেঁধে নির্মাণ করা হচ্ছে আরসিসি প্যালাসাইডিং ওয়াল। রড বাইন্ডিংয়ের বিরাট ফাঁকফোকরের মধ্যেই হচ্ছে ঢালাই। ঢালাইয়ের উপকরণও নিম্নমানের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের পূর্ব ইউনিয়নের বগডহর গ্রামের কাজটি না দেখলে বিশ্বাস হবে না কী ধরনের অনিয়ম চলছে। স্থানীয়রা বলছে, প্রকল্পের অর্থ পুকুর নয়, সাগর চুরি। যোগান দিচ্ছে জেলা পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। প্রকল্পের শর্তও মানা হচ্ছে না। হাওড় অঞ্চলের অবকাঠামো ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের (হিলিপ) কাজ এটি। প্রকল্পের নিয়ামানুসারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীরই এ কাজ করার কথা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কাজ করছেন এলজিইডির নবীনগর উপজেলা প্রকৌশলী, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও হিলিপের উপজেলা কোঅর্ডিনেটর। সাব-কন্ট্রাকটর নিয়োগ করে এ কাজ করাচ্ছেন। তারা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বগডহর গ্রামের পাঁচ শ’ মিটার এই প্রতিরক্ষা দেয়ালটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা। গ্রামের ভেতরে ২৬ লাখ টাকায় ৪৩০ মিটার দীর্ঘ আরেকটি সড়ক হচ্ছে একই প্রকল্প থেকে। গ্রামের হাজী রহিছ মেম্বারের বাড়ি থেকে ফরিদ মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত পাঁচ শ’ মিটার দীর্ঘ রিটেনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে। হিলিপের নিয়ামানুসারে এ কাজ করার কথা এলসিএস সদস্য অর্থাৎ চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দলের। যেখানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে এর পার্শ্ববর্তী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর লোকজন হবেন এলসিএস মেম্বার। তারাই মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪০ ভাগ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে নির্মাণ উপকরণ কিনে কাজ শুরু করবেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রকল্প এলাকায় এলসিএস মেম্বারের কোন অস্তিত্ব মিলেনি। যদিও প্রকল্পের গোড়ায় লাগানো সাইনবোর্ডে এলসিএসের দুটি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম লেখা রয়েছে। প্রকল্পের শুরু থেকে ২৫০ মিটার পর্যন্ত করবে খাইরুল ও মোমেনা বেগমের নেতৃত্বাধীন সমিতি ও ২৫০ থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত জয়নাল আবেদীন ও পারভীন আক্তারের নেতৃত্বাধীন সমিতি। সরেজমিন কাজে পাওয়া গেল এক ঠিকাদার নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিককে। সোহেল আর কবির মিয়া রড আর সাঁটার বাঁধার কাজ করছিলেন। সোহেল জানান, তারা ৭ জন শ্রমিক এখানে কাজ করেন। অন্যরা হচ্ছে দয়াল, সুজন, মোশাররফ ও কবির মিয়া। কবির মিয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঠিকাদার বাবুল মিয়ার নিয়োজিত শ্রমিক। এই শ্রমিকদের সবার বাড়িও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। ইব্রাহিম বগডহর গ্রামের একজন নির্মাণ শ্রমিক। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এলাকার দরিদ্র এই নির্মাণ শ্রমিকের ভাগ্য হয়নি এখানে কাজ করার বা এলসিএস মেম্বার হওয়ার। শুধু ইব্রাহিম নয়, বগডহর গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কেউই সম্পৃক্ত নেই এই কাজে। তবে ৬৫ লাখ টাকার এই কাজের নামে লুটপাটের নীরব সাক্ষী এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার এ কাজ পরিদর্শনে প্রকল্প পরিচালকসহ ঢাকা থেকে একটি প্রতিনিধি দল এলাকা ঘুরে গেছেন। তাদের কাছে প্রকল্পের অনিয়মসহ সব বিষয় গোপন করা হয় বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বলেন, এ কাজ তার নয়। শুধু এ কাজটিই নয়, হিলিপের কোন কাজই তিনি করেন না। তবে হিলিপের কাজ রফাদফায় অন্য ঠিকাদাররা করছে বলে তিনি শুনেছেন। অন্য সূত্র জানায়, উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমন্বয়কারীকে নিয়ে এ কাজটি করছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টাকা ছাড় হয় উপজেলা প্রকৌশলী আর উপজেলা সমন্বয়কারীর যৌথ স্বাক্ষরে। তাই উপজেলা সমন্বয়কারীর যোগসাজশের বিষয়টিও আলোচনায় আছে। উপজেলা সমন্বয়কারী মোঃ ওমর ফারুক বলেন, কাজ অবশ্যই এলসিএস সদস্যরা করছে। কাজ ভালই চলছে। তিনি নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়ে বলেন, এটা ভিত্তিহীন কথা। এলাকার লোকজনের ধারণা বর্ষার প্রথমেই এই ওয়াল বিলীন হয়ে যাবে।
×