ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুগোপযোগী বেতন স্কেল

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ মে ২০১৫

যুগোপযোগী বেতন স্কেল

সরকারী কর্মজীবীদের জন্য সুখবরটির আভাস মিলেছিল গত ডিসেম্বরে, পাঁচ মাসের মাথায় এবার তা নিশ্চিত হলো। থাকল বটে কিছু আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য তাতে বিলম্ব হলেও ক্ষতি নেই। বহু প্রত্যাশিত সুখবরটি পাকা। আগামী ১ জুলাই থেকে প্রায় ১৪ লাখ সরকারী চাকরিজীবীর প্রত্যেকেরই বেতন প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে। সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ করেছে সচিব কমিটি। আগের মতোই বেতন কাঠামো কুড়িটি ধাপে থাকছে। কোনরকম কার্পণ্য না করে যুগোপযোগী বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণের জন্য সরকার অবশ্যই সাধুবাদ পাবেন। প্রায় শতভাগ বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্বাধীনতা অর্জনের পর এই প্রথম পাওয়া গেল। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বেতন-ভাতাদিসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানই সমীচীন। বহু দেশে স্থায়ী বেতন কমিশন আছে। কোথাও চালু রয়েছে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন বাড়ার পদ্ধতিও। শতভাগ বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চয়ই সরকারী চাকরিজীবীদের সন্তুষ্ট করবে। বিশেষ করে বীমা বিষয়ে যেসব গঠনমূলক সুপারিশ করা হয়েছে তাতে তাদের ভবিষ্যতের অর্থ নিরাপত্তা বিধান এবং বৃদ্ধ বয়সে স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবেলার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রশাসনকে গতিশীল করার জন্য যেমন মেধাবী, দক্ষ, সৎ, কর্মনিষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রয়োজন, তেমনি তাদের জীবনযাপনকে সহজ এবং আর্থিক চাপমুক্ত রাখার জন্য যথাসম্ভব যুগোপযোগী বেতন কাঠামোও জরুরী। নয়া বেতন স্কেল ঘোষণা প্রশাসনসহ সরকারী কার্যালয়ের সামগ্রিক দাফতরিক কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনবে বলে আশা করা যায়। সরকারী ও বেসরকারী দুই সেক্টরেই নানাবিধ কাজ সম্পন্ন করা হয় প্রয়োজন ও চাহিদা অনুসারে, সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে। তাই উভয় পর্যায়ের বেতন কাঠামোর ভেতর বড় ধরনের ব্যবধান কাম্য হতে পারে না। এ ধরনের বৈষম্য বজায় রেখে মানসিকভাবে অবনত একজন কর্মীর কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা পাওয়াও অনেকাংশেই সম্ভব হয় না। তাই সরকারী ও বেসরকারীÑ এই দুই ধরনের চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোর ব্যবধান হ্রাসকারী নতুন বেতন স্কেল প্রায় কাছাকাছি হলে আগামীতে সুফল বয়ে আনবে বলে ধারণা করা যায়। বেসরকারী খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা প্রদান করে মেধাবী ও উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের নিয়োগ দিচ্ছে। সে তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছে সরকারী সংস্থাসমূহ। সত্যিকারের মেধাবী তরুণদের সরকারী চাকরিতে আকর্ষণ করার জন্য নয়া বেতন স্কেল কিছুটা ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। এখন দেশে এমন বহু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রীধারী তরুণ তার ক্যারিয়ার শুরু করতে পারে লাখের ওপরের অঙ্কের বেতন পেয়ে। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে সরকারী চাকরির একটা আলাদা গ্ল্যামার রয়েছে। সমাজে এখনও বিশেষ সমীহ আদায় করে থাকেন সরকারী চাকরিজীবীরা। বেতন বাড়লেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেন। এটি তাদের মজ্জাগত অভ্যাস। অর্থমন্ত্রী যদিও মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন। তবুও ঘরপোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ দর্শনে ভীতির উদ্রেকের প্রবাদটি উড়িয়ে দেয়া যায় না। বেতন বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটলে সরকারী চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার মান সেই একই তিমিরে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়।
×